আন্তর্জাতিক ডেস্ক
যেকোনও সময় ইসরায়েলে হামলা চালাতে পারে ইরান। ইসরায়েলের ওপর এই হামলা সরাসরি ইরান থেকে হতে পারে। অথবা মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ইরানপন্থি যেসব সশস্ত্র বাহিনী রয়েছে তারাও হামলা চালাতে পারে।
আর এই আশঙ্কার মধ্যে উত্তেজনা বেড়েই চলেছে। মূলত সম্প্রতি সিরিয়ার রাজধানীতে ইরানের কনস্যুলেটে হামলা চালিয়ে শীর্ষস্থানীয় ইরানি কয়েকজন সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করেছে ইসরায়েল। এই হামলার প্রতিশোধ নেওয়া হবে বলে এরই মধ্যে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছে তেহরান।
বৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
এদিকে জাতিসংঘে নিযুক্ত ইরানের মিশন ইঙ্গিত দিয়েছে, দামেস্কে ইরানি কনস্যুলেটে মারাত্মক ইসরায়েলি বিমান হামলার ঘটনায় ইরানের যেকোনও সম্ভাব্য সামরিক প্রতিক্রিয়া এড়ানো যেত, যদি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ ইসরায়েলের সেই হামলার নিন্দা করত।
বৃহস্পতিবার ইরানের এই বিবৃতিটি এমন সময়ে এসেছে যখন ক্রমবর্ধমান সংখ্যক মিডিয়া রিপোর্টে ইসরায়েল বা ইসরায়েলি স্বার্থের ওপর ইরানের আক্রমণ আসন্ন বলে জানানো হয়েছে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় দেওয়া এক পোস্টে ইরানি মিশন বলেছে, ‘জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ যদি দামেস্কে আমাদের কূটনৈতিক চত্বরে ইহুদিবাদী দেশটির নিন্দনীয় আগ্রাসনের নিন্দা করত এবং পরবর্তীকালে এর অপরাধীদের বিচারের মুখোমুখি করত, তাহলে ইরানের এই দুর্বৃত্ত দেশকে শাস্তি দেওয়ার বাধ্যবাধকতা রহিত হয়ে যেত।’
গত ১ এপ্রিল সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে ইরানের কনস্যুলেট ভবনে হামলায় ইরানের সিনিয়র সামরিক নেতাসহ ১৩ জন নিহত হন। ইসরায়েল অবশ্য সেই হামলার দায় স্বীকার করেনি, তবে তারাই এই হামলার পেছনে রয়েছে বলে ব্যাপকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
ইসরায়েলি সেই হামলার ‘কঠোর’ জবাব দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ইরান। এরপর থেকে ইরানের প্রতিশোধমূলক হামলার আশঙ্কায় ওই অঞ্চলে মার্কিন ও ইসরায়েলি বাহিনীকে উচ্চ সতর্কাবস্থায় রাখা হয়েছে।
আল জাজিরা বলছে, গাজায় উত্তেজনা তীব্রতর হওয়া এবং উত্তেজনা কমানোর আহ্বানের মধ্যেই সিরিয়ায় ইরানি কনস্যুলেটে ইসরায়েলি হামলা এবং প্রত্যাশিত ইরানি প্রতিশোধমূলক হামলার শঙ্কায় মধ্যপ্রাচ্যে সর্বাত্মক আঞ্চলিক যুদ্ধের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির-আব্দুল্লাহিয়ান বৃহস্পতিবার কাতার, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইরাক এবং জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সাথে ফোনে কথা বলেছেন। জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবক আমির-আব্দুল্লাহিয়ানের সাথে তার আলোচনার সময় উত্তেজনা আরও ছড়িয়ে পড়ার বিরুদ্ধে সতর্ক করেছেন।
সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে জার্মান ফেডারেল পররাষ্ট্র দপ্তর বলেছে, ‘আরও আঞ্চলিক উত্তেজনা এড়াতে হবে সবার স্বার্থে। আমরা এই অঞ্চলের সমস্ত দেশকে দায়িত্বশীলভাবে কাজ করার এবং সর্বোচ্চ সংযম দেখানোর আহ্বান জানাই।’
এদিকে জার্মান এয়ারলাইন লুফথানসা বৃহস্পতিবার তেহরানের ফ্লাইটে স্থগিতাদেশ বাড়িয়েছে বলে বার্তাসংস্থা রয়টার্স কোম্পানির একজন মুখপাত্রকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে। এছাড়া রাশিয়া তার নাগরিকদের মধ্যপ্রাচ্য, বিশেষ করে ইসরায়েল, ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড এবং লেবাননে ভ্রমণের বিরুদ্ধে সতর্ক করেছে।
এর পাশাপাশি এই অঞ্চলজুড়ে বাহিনী মোতায়েন করে রাখা যুক্তরাষ্ট্রও ইরানকে ইসরায়েল আক্রমণের বিরুদ্ধে সতর্ক করে দিয়েছে। এমনকি ইরানের পাল্টা হামলার আশঙ্কার মধ্যেই ইসরায়েলের পাশে দাঁড়িয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ইরান হামলা করলে ইসরায়েলের প্রতি দৃঢ় সমর্থনের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন তিনি।
তিনি বলেছেন, ‘যেমনটা আমি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে বলেছি, ইরান এবং এর প্রক্সি বাহিনীগুলোর হুমকি থেকে ইসরায়েলের নিরাপত্তা রক্ষায় আমাদের প্রতিশ্রুতি লোহার আবরণের মতো দৃঢ়। আমি আবারও বলছি, লোহার আবরণের মতো দৃঢ়।’
একজন মার্কিন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে আল জাজিরা আরবিকে বলেছেন, বাইডেনের এই বক্তব্য নিছক কথার কথা নয় এবং ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ইরানের রকেট বা ড্রোন আটকাতে সহায়তা করবে যুক্তরাষ্ট্র।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন গত বুধবার ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিংকেন ইসরায়েলের নিরাপত্তার প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনের কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন এবং স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন যে, ইরান ও তার প্রক্সিদের যেকোনও হুমকির বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের পাশে থাকবে।’
আরইউ