সিয়াম, বেরোবি প্রতিনিধি:
বাংলাদেশ প্রকৃতির অপূর্ব লীলা নিকেতন। সবুজ শ্যামলে ভরা এই দেশ। সবুজের এই প্রকৃতিতে বিভিন্ন প্রজাতির অসংখ্য পাখি বসবাস করে এদেশের বনজঙ্গলে, ঝােপ-ঝাড়ে, মাঠে-ঘাটে,খাল-বিল, নদী-নালার তীরে এবং ঘরের আশেপাশে কত বিচিত্র রকমের পাখি দেখা যায়। নানান আকার-প্রকার, সুরে-সংগীতে এরা একটি থেকে আর একটি সম্পূর্ণ ভিন্ন।
এ দেশের মানুষ পাখির ডাকে ঘুমিয়ে পড়ে আবার পাখির ডাকে জাগে। আমাদের পরিচিত পাখিগুলোর মধ্যে রয়েছে দোয়েল, কোকিল, ময়না, টিয়া, কাক, পায়রা, বিল, মাছরাঙা, কাকাতুয়া, বাবুই, কাঠঠোকরা, চড়ুই, টুনটুনি, বুলবুলি, বউ কথা কও, শালিক, ঘুঘু, বক। বলা হয় পাখি প্রকৃতির পরম প্রকৃত বন্ধু কিন্তু পাখিদের নিরাপদ আবাস্থল কমে যাওয়ার ফলে দেশে পাখিদের সংখ্যা আশংকা জনক হারে কমতে শুরু করেছে যা প্রকৃতির জন্য হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ঠিক তার উল্টো চিত্র দেখা যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ে নানান প্রজাতির অসংখ্য গাছ থাকার ফলে পাখিদের জন্য নিরাপদ আবাস্থল পরিণত হয়েছে বেরোবির ক্যাম্পাস।
ভোর হলে মুয়াজ্জিনের আযানের পাশাপাশি পাখির কিছিমিছি শুনতে শুনতে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ঘুম ভাঙ্গে। নানান প্রজাতির পাখির মিছিমিছিতে মুখরিত হয়ে উঠে বেরোবির ৭৫ একরের ক্যাম্পাস। বিশ্ববিদ্যালয়ের হতাশা চত্বরের দিকে গেলে দেখা মেলে দোয়েল, শালিক, বুলবুলির কিছিমিছি দেখে মনে হয় যেন এটা পাখিদের রাজত্ব আর শিক্ষার্থীরা যেন অতিথি। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের কাছে আসলে শোনা যায় ঘুঘু পাখির অনবরত ডাক। রাসেল চত্বর থেকে কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি পুরো জায়গাটি কাঠঠোকরা পাখির অনবরত ঠকঠক শব্দ হঠাৎ করে মনে হবে যেনো একদল কাঠুরে গাছ কাটার কাজে ব্যস্ত। বঙ্গবন্ধু হল থেকে মুখতার ইলাহি হল, হলের চারপাশ যেনো টুনটুনি, বুলবুলি সহ নানান পাখির নিয়ন্ত্রণে, টুনটুনি বাসা বানাতে এক ঢাল থেকে অন্য ঢালে উড়ে বেড়াচ্ছে আর অন্যদিকে বুলবুলিসহ অন্যান্য পাখিরা খাবারের সন্ধানে এক ঢাল থেকে অন্য ঢালে উড়ে বেড়াচ্ছে। প্রশাসনিক ভবনের কাছে আসলেই দেখা মেলে বেনে বউ পাখি যাকে হলদে পাখি বলে ডাকা হয়। হলদের পাখির ঢালে ঢালে উড়ে বেড়ানো প্রশাসনিক ভবনের চারপাশে যেনো নতুন মাত্রার সৌন্দর্য যোগ করে তুলেছে। প্রশাসনিক ভবন থেকে রাসেল চত্বর স্কটল্যান্ড থেকে হতাশা চত্বর কিংবা বিজয় সড়ক সর্বত্র পাখির কিছিমিছি শোনা যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ে নানান প্রজাতির পাখির উপস্থিতি থাকলেও মাছরাঙা কিংবা বকের উপস্থিতি নেই বললেই চলে। বিশ্ববিদ্যালয়ে বিল কিংবা পুকুর না থাকায় এসব পাখির উপস্থিতি বেরোবির ক্যাম্পাসে দেখা যায় না। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পর্যাপ্ত ফল গাছ না থাকায় পাখিদের খাদ্য সংকট দেখা দেয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট্রাল লাইব্রেরিতে পড়তে আসা জাহিদ নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, মেসে পড়ার চাইতে ক্যাম্পাসের লাইব্রেরিতে পড়তে বেশি ভালো লাগে নিরিবিলি পরিবেশ, পাখির কিছিমিছি শব্দ সবমিলিয়ে খুব সুন্দর একটা পরিবেশ।
মুখতার ইলাহি হলের এক শিক্ষার্থী বলেন, পাখিদের সাথে বেরোবির শিক্ষার্থীদের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছোট বড়ো গাছগুলোতে হরহামেশাই পাখির বাসা চোখে পড়ে।পাখিগুলোর তার ইচ্ছে মতো ক্যাম্পাসে ঘুরতে পারে এই ক্যাম্পাস তাদের বড্ড আপন।
এমআই