মো. জাহিদুল হক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়:
দীর্ঘ একটি মাস সিয়াম সাধনার পর মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতরের আগমন হয়। যথাযথ সম্মান জানিয়ে ও ব্যাপক উৎসাহ, উদ্দীপনা ও আনন্দের মধ্যদিয়ে সারা দেশে মুসলমানরা তাদের বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর উদযাপন করে থাকে। এই ঈদকে ঘিরে ছোট-বড়, শিক্ষক-শিক্ষার্থী সবার মাঝে একটি ভিন্ন আমেজ লক্ষ্য করা যায়। এবারের ঈদুল ফিতরকে নিয়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ সাংবাদিকদের অভিমত তুলে ধরেছেন মো. জাহিদুল হক।
ঈদে গরীব-দুঃখী মানুষের পাশে দাঁড়ান
দীর্ঘ একটি মাস সিয়াম সাধনার পর আসে ঈদুল ফিতর। সিয়াম এবং ঈদুল ফিতর এ দুই ইবাদতের মধ্যে রয়েছে মুসলিমদের জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা। সিয়াম বা রোজা একদিকে আমাদেরকে সংযমের শিক্ষা দেয়, অন্যদিকে ক্ষুধার তাড়নায় থাকা ব্যক্তির কষ্ট উপলব্ধি করার সুযোগ তৈরি করে দেয়। অতঃপর সিয়াম শিক্ষার যথার্থ প্রয়োগের সুযোগ দেয় ঈদুল ফিতর। এদিন গরীব-দুঃখীদের মাঝে সদকাতুল ফিতর আদায় করার বিধান রয়েছে। মোট পাঁচটি খাদ্যের মাধ্যমে এটি আদায় করতে হয়। এ ছাড়া নিসাব পরিমাণ সম্পদের অধিকারী ব্যক্তির যাকাত আদায় করার উত্তম মাস হিসেবে সিয়াম মাসকে গণ্য করা হয়েছে। কিন্তু, যখনই সিয়ামের প্রকৃত শিক্ষা অর্জন ও প্রয়োগের ব্যত্যয় ঘটে, তখনই সমাজে দেখা দেয় নানা অনাকাঙ্খিত ঘটনা। সম্প্রতি, ঈদে গরুর মাংস কিনতে না পেরে লজ্জায় আত্মহত্যা করা জামালপুরের হাসান আলী যেন এর জলন্ত উদাহরণ। আফসোস! যদি কোন বিত্তবান ব্যক্তি তার পাশে এসে দাঁড়াত। ঈদের দিন তার পরিবারের খোঁজখবর নিত, তাহলে হয়তো বুকভরা কষ্ট নিয়ে হাসান আলী নিজেকে বিসর্জন দিত না। তাই ঈদ যেন আমাদের শুধু আনন্দের খোরাকই না যোগায়, গরীব দুঃখী মানুষকে নিয়ে তাদের সুখ দুঃখ ভাগাভাগিতেও আমাদের মনোযোগী হওয়া উচিত।
আতিকুর রহমান
ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ
শিক্ষার্থী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক, ঢাকা পোস্ট
সম্প্রীতির অনন্য উদাহরণ ঈদুল ফিতর
আনন্দ ও কল্যাণের সওগাত নিয়ে বছর ঘুরে দেখা মিলে ঈদুল ফিতরের। এক অনন্য-বৈভব খুশির বার্তা বিলাতে আসে মুসলমান সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর। সামাজিক ও আত্বীয়তার শীতল হয়ে যাওয়া সম্পর্কগুলো মজবুত করতে, বন্ধুত্বের বন্ধনকে মজবুত করতে এবং নিরুদ্যম প্রাণে শক্তি ও কর্মপ্রেরণা জোগাতে এক প্রাণবন্ত মিলনমেলার সম্মিলন ঘটে এই ঈদুল ফিতরের আসরে। দীর্ঘ একটি মাস উপবাস ও সংযম সাধনার পর বিশ্ব জাহানের মুসলমানরা আনন্দ উৎসবে মেতে ওঠে। অন্যান্য উৎসবের মতো এটি কোন প্রকার উচ্চবিত্ত সমাজের উৎসব নয়। এই ঈদ হলো শ্রেণিবৈষম্য-বিবর্জিত, পঙ্কিলতা ও অশ্লীলতামুক্ত ইবাদতের আমেজমাখা সুনির্মল আনন্দে ভরা ঈদ আনন্দ। আমেজের দিক থেকে প্রীতি ও মিলনের এক অপূর্ব সুন্দর উৎসব এই ঈদুল ফিতর। আর এই ভাবধারা নিয়েই বাঙালিরা ঈদ উদযাপন করে আসছে বহুকাল ধরে। ঈদের দিন সকালেই সেমাই, বিরিয়ানি ও হরেক রকমারির খাবারের সুঘ্রাণে মুখোরিত হয়ে উঠে চারপাশ। ঈদের দু রাকাত ওয়াজিব নামায আদায় শেষেই প্রতিটি ঘরে হিরিক পড়ে অতিথি আপ্যায়নের। সবার গায়ে নতুন পোশাক, মুখে এক ফালি হাসি, সুসজ্জিত পাড়া-মহল্লা বাসা বাড়ি সব মিলিয়ে এক অবর্ণনীয় আনন্দমেলায় রুপ নেয় ঈদ। সকল বৈষম্য ও বিভেদের দাগ ভুলে সকল শ্রেণীর মানুষকে বুকে টেনে নেয়ার এক পবিত্র ভালোবাসার দৃশ্য খচিত হয় ভূপৃষ্ঠে এমন দিনে । তাই এমন ঈদের দিনের মত দিন আসুক বছরের প্রতিটি দিনেই এই আমার প্রত্যাশা।
মিরাজ মাহমুদ
ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগ
শিক্ষার্থী, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (নোবিপ্রবি)
ক্যাম্পাস প্রতিনিধি, দৈনিক নবদেশ ২৪
ঈদের সম্প্রীতি ছড়িয়ে পড়ুক সবার মাঝে
বছরে মুসলিমদের বড় দুটি উৎসবের একটি হলো ঈদুল ফিতর। পুরো একমাস সিয়াম-সাধনার পর আসে সেই কাঙ্ক্ষিত ঈদ। আমরা যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করি তাদের রোজার পুরো মাসটি কাটে পরিবার,আত্মীয়-স্বজন ছাড়া। আর এই অপূর্ণতাকে পূর্ণতা দিতেই সাধারণ শিক্ষার্থীদের মতোই আমরা যারা ক্যাম্পাস সাংবাদিকতা করি তারাও রমজানের শুরু থেকেই বিশ্ববিদ্যালয় কবে ছুটি হবে সেই অপেক্ষায় থাকি। বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস বন্ধ হওয়ার অনেক আগেই বাড়ি ফিরলেও ফেরা হয় না ক্যাম্পাস সাংবাদিকতায় যুক্ত থাকা শিক্ষার্থীদের। তারপরও ক্যাম্পাস বন্ধ হলে নাড়ীর টানে বাড়ি ফেরা হয়। বাড়ি ফিরে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করা হয় পরিবার, আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধুবান্ধবদের সাথে। এ যেনো এক জন্য রকম আনন্দ। ঈদের দিন সকালে ফজরের নামাজের পর থেকেই প্রত্যেক বাড়িতে শুরু হয় সেমাইসহ বিভিন্ন ধরনের মিষ্টি খাবার রান্না। পরিবারের ছোট বাচ্চারা ব্যস্ত হয়ে পড়ে নতুন পোশাক পরতে। তারপর সেমাই খেয়ে ঈদের নামাজ পড়তে যাওয়া হয় ঈদগাহ মাঠে। সেখানে নামাজ শেষে পরিচিতজনদের সাথে কোলাকুলি করা হয়, চায়ের দোকানে বসে খোশ গল্পে মেতে উঠা হয় পুরনো দিনের বন্ধুবান্ধবদের সাথে।
ঈদ আনন্দের হলেও সবার জন্য কিন্তু ঈদ আনন্দের হয় না। আমাদের আশে পাশে এমনও মানুষ আছে যারা নতুন কাপড় কিনতে পারেনি, ঈদে নিজের পরিবারের সবার মুখে তুলে দিতে পারেনি ভালো খাবার। যে ঈদ সম্প্রীতির, যে রোজা আমাদের ত্যাগ ও আত্মশুদ্ধির শিক্ষা দেয় সেই ঈদে এমন পরিবারগুলোর খোঁজ রাখা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। এই ঈদ কারো ব্যক্তিগত উৎসব নয়, সবার সাথে আনন্দ ভাগাভাগি করে নেয়ার শিক্ষা দেয়ার জন্যই আসে ঈদ। ঈদ হোক আনন্দের , ঈদের সম্প্রীতি সবার মাঝে বজায় থাকুক সব সময়। ঈদে কেউ পরিবারের সকলের মুখে ভালো খাবার তুলে দিতে না পেরে আত্মহত্যা করার মতো পরিস্হিতি তৈরি না হোক।
মো. রাফিউল হুদা
ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগ
হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, দিনাজপুর।
ক্যাম্পাস প্রতিনিধি, দৈনিক ঢাকা টাইমস ও প্রজন্মনিউজ২৪
ঈদ আনন্দ ছড়িয়ে পড়ুক সবার মাঝে
পবিত্র একমাস সিয়াম সাধনার পর ঈদ আসে। বাঙালি জাতিগোষ্ঠীর কাছে ঈদ উদযাপন তাদের চিরায়ত সংস্কৃতির অংশ স্বরূপ। বাংলাদেশে শুধু যে মুসলমানরাই ঈদ উদযাপন করে না, সেটা আমাদের দেশের মানুষদের দেখলে বুঝা যায়। প্রায় সব ধর্মের মানুষেরা ঈদের সময় ঈদ ভাবনা আদান প্রদান করে। তার থেকে আনন্দের বিষয় হচ্ছে সব ধর্মের মানুষরা ঈদ এর সময় ' ঈদ মুবারক ' কুশুল বিনিময় করে। বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রত্যেকেরই প্রায় ভিন্নধর্মাবলম্বী সহপাঠী থাকে। ঈদের সময় তাদেরকে বাড়িতে দাওয়াত করা, মিষ্টিমুখ করানো, অন্যান্য আত্মীয়স্বজনদের দেখা পাওয়া এইসব বিষয়গুলোই ঈদ আনন্দকে বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়। সুখ আপেক্ষিক বিষয়। ঈদের সময় যে কয়টা দিন ছুটি পাওয়া যায় সেটা পুরোপুরি আনন্দ ভাগাভাগির মাধ্যমে কাটিয়ে দিলে সারাবছরের কাজের চাপ আর পড়াশোনার কারণে চলে আসা একঘেয়েমিটুকু কিছুটা হলেও লাঘব হয়।
মো: রাফি সারোয়ার
টেক্সটাইল ফ্যাশন অ্যান্ড ডিজাইন বিভাগ
বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় (বুটেক্স), ঢাকা।
ক্যাম্পাস প্রতিনিধি, দৈনিক সাম্প্রতিক দেশকাল
এমআই