রুহুল সরকার,রাজীবপুর(কুড়িগ্রাম): আজ ২৩ জ্যৈষ্ঠ, আষাঢ় মাস আসতে এখনও ৭ দিন বাকী। তবে গত কয়েক সপ্তাহে থেকেই প্রায় প্রতি দিনই মুসুলধারে বৃষ্টি হচ্ছে। গাছে গাছে ফুটেছে কদম ফুল। প্রকৃতি প্রেমীদের অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কদম ফুলের ছবি দিয়ে আগাম শুভেচ্ছা জানাচ্ছে বর্ষা ঋতুর।
সকালের দিকে বের হয়ে রাজীবপুর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে কদম গাছের সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে ফুটন্ত কদম ফুলের দেখা মিলেছে। আকাশ মেঘলা থাকায় চোখ ধাঁধানো সৌন্দর্যের কিছুটা ম্লান ছিলো তবে দেখার মত দৃষ্টি থাকালে এই সৌন্দর্য কমতি মনে হবে না।
কদম ফুল সাধারণত আষাঢ় শ্রাবন মাসে ফোঁটে। এজন্য একে বর্ষা ঋতুর ফুল বলা হয়। তবে গত কয়েক বছর থেকে বৈশাখ মাসের শেষের দিকে ফুল ফুটতে শুরু করে এবং জ্যৈষ্ঠ থেকে আষাঢ় মাস পর্যন্ত ফুল ফুঁটতে দেখা যায়।
উদ্ভিদ বিজ্ঞানী'রা বলছেন বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে জীববৈচিত্র্য পরিবর্তন হচ্ছে একারনে এখন নির্দিষ্ট ঋতুর আগে আগেই ফুঁটছে কদম ফুল। বৃষ্টির পানি এর শিকড়ে পৌছলেই গাছের শাখা প্রশাখায় ফুল ফুঁটতে শুরু করে। যেহেতু নির্দিষ্ট সময়ের আগেই বৃষ্টি হচ্ছে তাই কদম ফুলও আগেই ফুঁটছে।
কদম ফুলের সৌন্দর্য ও গন্ধ সকলকেই আকর্ষণ করে। গ্রামের পথের ধারে, বাগানে, বসত বাড়ির ঝোপঝাড়ে প্রাকৃতিক ভাবেই জন্মে কদম গাছ। গাছ গুলো উচ্চতায় ২০থেকে ৫০ ফুট পর্যন্ত হয়। এর ইংরেজি নাম Cadamba বৈজ্ঞানিক নাম Anthocephalus Indicus ।
হলুদ সাদা রঙ্গের ছোট বলের মত গুচ্ছাকৃতির ফুল হয়। হলুদ বলে ছোট লম্বা দন্ডের মতো পাপড়িগুলো আটকে থাকে। পাপড়ির মাথায় থাকে সাদা রঙের পরাগদন্ড। এর ফল টক স্বাদ যুক্ত। কাঠবিড়ালি এবং বাদুরের এসব ফল প্রিয় খাবার।
ফুলের মিষ্টি গন্ধ আছে। ফুল ফুটলে গন্ধ চারপাশে ছড়িয়ে যায়। কদম ফুলের আরও বিভিন্ন নাম রয়েছে যেমন, ললনাপ্রিয়, সুরভী, মেঘাম প্রিয়,মঞ্জু কেশনী,কর্ণপূরক,পুলকি ইত্যাদি।
কদম গাছ লম্বা উচ্চতা বিশিষ্ট। পাতা সবুজ রঙ্গের সরু লম্বাকৃতি। শীত কালে পাতা ঝড়ে যায় বসন্ত কালে নতুন পাতা জন্মে। এর কাঠ ততটা শক্ত নয়। দেয়াশলাই এর কাঠি সহ বিভিন্ন হালকা ওজনের বাক্স তৈরিতে ব্যাবহার করা এর কাঠ। গ্রাম অঞ্চলে জ্বালানি হিসেবেও ব্যাবহার করে।
কদমে রযেছে নানা ভেষজ গুন। ৪ থেকে ৫ বছর বয়সী শিশুদের কৃমি হলে কচি কদম পাতার রস বেঁটে খাওয়ালে উপকার পাওয়া যায়।
মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে কদম ফুল কেটে পানিতে সেদ্ধ করে সেই পানি দিয়ে কুলকুচি করতে হয় এতে মুখের দুর্গন্ধ দূর হয়। কচি কদম গাছের ছাল বেটে হালকা গরম করে প্রলেপ দিলে ফোলা ও ব্যাথা স্থানে লাগালে আরাম হয়। খুব জ্বরে হলে মানুষের পিপাসাও বেশি হয় এসময় কদম ফলের রস করে খেলে পিপাসা কমে যায়।
শহরে এলাকায় কদম ফুল বিক্রি করতে দেখা গেলেও গ্রামে এর বিক্রি নেই। গ্রামের শিশুরা সাধারণত খেলার উপকরণ হিসেবে কদম ফুল ব্যবহার করে।
সময় জার্নাল/এমআই