সময় জার্নাল প্রতিবেদক : গাজীপুরের টঙ্গীতে দুই পরিবারের সদস্যদের ওপর নৃশংস হামলার ঘটনায় জড়িত ১২ কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-১। এ সময় তাদের কাছ থেকে ২টি বিদেশি পিস্তল, ২টি চাপাতি, একটি ছুরি উদ্ধার করা হয়।
শনিবার মধ্যরাত থেকে ভোর পর্যন্ত টঙ্গী ও উত্তারার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। র্যাব-১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল আব্দুল মোত্তাকিম বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, কিশোর গ্যাং ‘ডি কোম্পানি’ বা ডেয়ারিং কোম্পানির পৃষ্ঠপোষক রাজিব চৌধুরী বাপ্পি ওরফে লন্ডন বাপ্পি এবং মঈন উদ্দিন নিরব ওরফে ডন নিরবসহ ১২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এ নিয়ে রোববার বিকেলে কারওয়ানবাজারের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করে র্যাব।
গ্রেফতাররা হলেন- ডি কোম্পানি (ডেয়ারিং কোম্পানি) কিশোর গ্যাংয়ের পৃষ্ঠপোষক গাজীপুরের আব্দুল মালেকের ছেলে রাজীব চৌধুরী বাপ্পি ওরফে লন্ডন বাপ্পী (৩৫), চাঁদপুরের বোরহান উদ্দিনের ছেলে মঈন আহমেদ নিরব ওরফে ডন নিরব, একই জেলার ইসমাইল হোসেনের ছেলে তানভীর হোসেন ওরফে ব্যাটারি তানভীর (২৪), ময়মনসিংহের ওসমান গণির ছেলে মোহাম্মদ পারভেজ ওরফে ছোট পারভেজ (১৯), বরিশালের শাহ আলমের ছেলে মো. তুহিন ওরফে তারকাটা তুহিন (২১), খুলনার আলমগীর হোসেনের ছেলে রাজীব আহমেদ নিরব ওরফে টম নিরব (৩০), গাজীপুরের শাহ আলমের ছেলে সাইফুল ইসলাম শাওন (২৩), ব্রাহ্মণবাড়িয়ার হোচেন আরীর ছেলে রবিউল হাসান (২০), সামচুল আলমের ছেলে শাকিল ওরফে বাঘা শাকিল (২৮), আব্দুছ ছাত্তারের ছেলে ইয়াছিন আরাফাত ওরফে বিস্কুট ইয়াছিন (১৮), ইদ্রিস আলীর ছেলে মাহফুজুর রহমান ফাহিম (১৮), ময়মনসিংহের শাহজাহানের ছেলে ইয়াছিন মিয়া ওরফে প্রিন্স ইয়াছিন (১৯)।
এর আগে গত মঙ্গলবার (১ জুন) বন্ধুদের নিয়ে টঙ্গীর আরিচপুর (ভূঁইয়াপাড়া শাহী জামে মসজিদ) মহল্লার টং দোকানে চটপটি ও ফুচকা খাওয়ার সময় কাদা ছুড়ে মারার ঘটনাকে কেন্দ্র করে বখাটেদের হামলায় বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্র তুষারসহ ৪ জন আহত হয়।
তুহিনের ভাই শুভ্র জানান, মঙ্গলবার রাতে ভূঁইয়াপাড়া শাহী মসজিদ সংলগ্ন চটপটি দোকানে বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে চটপটি খাচ্ছিল আমার ছোট ভাই তুষার ও তার বন্ধুরা। এ সময় মঈন উদ্দিন নিরব, রবিন, রাশেদ, তুহিন ও রাজাসহ তাদের সহযোগী ১০/১২জন অজ্ঞাতনামা কিশোর আমার ভাইয়ের শরীরে কাদা ছুঁড়ে মারে। এর প্রতিবাদ করায় বখাটেরা আমার ভাইকে এলোপাতাড়ি কিলঘুষি মেরে রক্তাক্ত করে আহত করে। তার ডাকচিৎকারে আমার অপর ছোট ভাই তুহিন আহম্মেদ, স্থানীয় আকতার হোসেন ও সবুজ ঘটনাস্থলে গেলে তাদেরকেও কুপিয়ে ও পিটিয়ে আহত করে বখাটেরা। ওই ঘটনায় আহত তুহিন আহম্মেদ বাদী হয়ে ঘটনার দিন রাতেই টঙ্গী পূর্ব থানায় মামলা করেন।
অপরদিকে, বৃহস্পতিবার (৩ জুন) রাত ৯টায় আরিচপুর এলাকায় দর্জি দোকানে হামলা করে ভাংচুর করে। এ সময় চাপাতি দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করে আরজু মিয়া, সুজন মিয়া এবং তার স্ত্রী রূপালীকে গুরুতর আহত করে। হামলার শিকার কয়েকজন জানান, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে রাতে থানায় মামলা করতে গেলে কিশোর গ্যাং এর অন্যতম নেতা জুয়েল মাহমুদ পারভেজ মামলা না করতে বিভিন্নভাবে হুমকি দেয়। এমন চাপের মুখে থানায় অভিযোগ করলে ওইদিন রাত সাড়ে ১১টার দিকে ধারালো অস্ত্র ও লাঠিসোটা নিয়ে কিশোর গ্যাংয়ের ১৫/২০ জন সদস্য আমাদের বাড়িঘর ও দোকানপাটে হামলা চালায়।
বখাটে এসব কিশোর ‘ডি কোম্পানি’ নামে একটি কিশোর গ্যাংয়ের সঙ্গে জড়িত। এই গ্যাং এর প্রতিষ্ঠাতা সজিব চৌধুরী পাপ্পু ইয়াবা ও অস্ত্র মামলায় কারাগারে থাকায় তার বড় ভাই বাপ্পি ও বন্ধু জুয়েল মাহমুদ পারভেজ গ্যাংটি পরিচালনা করেন।
এদিকে র্যাব জানায়, জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতাররা জানিয়েছে তারা ডি কোম্পানি (ডেয়ারিং কোম্পানি) কিশোর গ্যাং গ্রুপের সক্রিয় সদস্য। তারা মাদক সেবন, স্কুল-কলেজে বুলিং র্যাগিং, ইভটিজিং, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, ডাকাতি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অশ্লীল ভিডিও শেয়ারসহ বিভিন্ন অনৈতিক কাজে লিপ্ত ছিল। তাদের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ সত্য বলে স্বীকার করে।
সময় জার্নাল/এসএ