সিদ্ধার্থ চক্রবর্তী, বাকৃবি প্রতিনিধি:
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় রিসার্চ সিস্টেমের (বাউরেস) দুই দিনব্যাপী বার্ষিক গবেষণা অগ্রগতি কর্মশালা শুরু হয়েছে। শনিবার (২৭ এপ্রিল) সকাল ১০ টায় বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) সৈয়দ নজরুল ইসলাম সম্মেলন কক্ষে ঐ কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠিত হয়। দুই দিনের কর্মশালায় মোট ২০ টি (১৯ টি টেকনিক্যাল সেশন, ১ টি বিশেষ সেশন) সমান্তরাল সেশন ও ২ টি পোস্টার উপস্থাপনা সেশন অনুষ্ঠিত হবে। টেকনিক্যাল সেশনে প্রায় ৬০১ টি গবেষণা প্রকল্পের ফলাফল উপস্থাপন করা হবে।
অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিক মানদÐ সম্পন্ন বিভিন্ন জার্নালে প্রকাশিত গবেষণার ‘এইচ-ইনডেক্সথ অনুযায়ী বাকৃবির ১৬ জন গবেষককে সম্মানজনক ‘গেøাবাল রিসার্চ ইমপ্যাক্ট রিকোগনাইজেশন অ্যাওয়ার্ড-২০২৪ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ স্কোরধারী ৫ জন এবং অনুষদভিত্তিক একজন করে সিনিয়র ও জুনিয়র মোট ১১ শিক্ষককে এ পুরস্কার দিয়েছে বাউরেস। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালিত গবেষণা প্রকল্প থেকে উন্নত মানের ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টর জার্নালে আর্টিকেল প্রকাশ করায় প্রকাশনা খরচ বাবদ ৬১ জন গবেষককে মোট ২৭ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা প্রদান করা হয়।
বাউরেসের পরিচালক অধ্যাপক ড. মাহ্ফুজা বেগমের সভাপতিত্বে এবং সহযোগী পরিচালক অধ্যাপক ড. চয়ন গোস্বামীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাবেক পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক ড. শামসুল আলম। অনুষ্ঠানে প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাকৃবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমদাদুল হক চৌধুরী। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক ড. দেবাশীষ সরকার এবং ফুড এন্ড এগ্রিকালচার অরগানাইজেশনের (ফাউ) বাংলাদেশ প্রতিনিধি ড. সী জাউসীন।
‘এইচ-ইনডেক্স’ এর সর্বোচ্চ স্কোরধারী ৫ জন গবেষকবৃন্দ হলেন কৌলিতত্ত¡ ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, কৃষি শক্তি ও যন্ত্র বিভাগের অধ্যাপক ড. এহসানুল কবীর, পশুবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ মোহাম্মদ এহসানুর রহমান, ফিশারিজ ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক ড. জোয়ার্দ্দার ফারুক আহমেদ এবং সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আবদুল মজিদ।
অনুষ্ঠানে প্রথমবারের মত কৃষি সাংবাদিকতা পুরস্কার-২০২৪ প্রদান করা হয়। এবছর এই পুরস্কারটি বাকৃবি সাংবাদিক সমিতির সদস্য এবং দৈনিক কালের কণ্ঠের বাকৃবি প্রতিনিধি কৃষিবিদ আবুল বাশার মিরাজকে প্রদান করা হয়।
এছাড়া মাৎস্য উৎপাদনে বিশেষ অবদানের জন্যে খুলনার প্রকৃতি বিশ্বাস, সমম্বিত কৃষিতে বিশেষ অবদানের জন্যে নেত্রকোনার মো. শফিকুল ইসলাম, মৌচাষে বিশেষ অবদানের জন্যে পাবনা জেলার মো. শাজাহান আলী, বাণিজ্যিক কৃষি উৎপাদনে বিশেষ অবদানের জন্য বগুড়ার মোছা. সুরাইয়া ফারহানা রেশমা, জৈব কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহার করে আধুনিক কৃষি খামারে বিশেষ অবদানের জন্যে জামালপুরের মো. রোকনুজ্জামান সুমন এবং কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহার করে নীল চাষে বিশেষ অবদানের জন্যে রংপুরের রায় মনিকে বাউরেস থেকে ‘প্রফেসর ড. আশরাফ আলী খান স্মৃতি পুরষ্কার-২০২৪’ প্রদান করা হয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে শামসুল আলম বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র বাংলাদেশে ডেল্টা প্লান আছে। জলবায়ু পরিবর্তনে বিরূপ প্রভাবকে মাথায় রেখে এই পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে ১০০ বছরের জন্য। বৈশি^ক গড় তাপমাত্রা ২০৬৫ সালের মধ্যে ১.৫ ডিগ্রি বৃদ্ধি পাবে। তাই তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য কাজ করতে হবে। বাংলাদেশের তাপমাত্রা ক্রমাগত বাড়ছে, বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমছে। প্রান্তিক কৃষকদের সাথে কাজ করে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সাথে কৃষির আধুনিকায়নের সমন্বয় করতে হবে। কৃষির অগ্রগতিতে বাকৃবির অবদান অপরিসীম। এখন কৃষি প্রযুক্তির ব্যবহার, এক জমিতে বহু ফসলের চাষ, পতিত জমির ব্যবহার এবং কৃষির আধুনিকায়নে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. এমদাদুল হক চৌধুরী বলেন, কর্মশালার মধ্য দিয়ে গবেষকদের অনুরোধ করতে চাই, আপনাদের চলমান গবেষণার জন্য বাউএক-এর তালিকাভুক্ত খামারিদের সাথে একাত্ম হয়ে কাজ করুন। পাশাপাশি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশের কৃষি এলাকাগুলোকে নিজস্ব গবেষণার কাজে ব্যবহারের আহবান জানাচ্ছি। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশের স্থানীয় মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন হোক, এটাও আমাদের নৈতিক দায়িত্বের মধ্যে পরে। বিশ্বব্যাপী ইতোমধ্যেই চতুর্থ শিল্পবিপ্লব শুরু হয়ে গিয়েছে। আমাদের দেশকেও প্রতিযোগী মনোভাব নিয়ে বিশ্বের সাথে পাল্লা দিয়ে এই বিপ্লবে অংশ নিতে হবে। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে স্মার্ট কৃষি বাস্তবায়নে গুরুত্ব দিতে হবে।
এমআই