আ. ফ. ম. মোদাচ্ছের আলী:
বাংলাদেশ রাষ্ট্রটি স্বাধীন হয়েছিল যে চারটি মূল মন্ত্রের উপর তার একটি ছিল সমাজতন্ত্র। মানুষে মানুষে সমতা, অর্থনৈতিক সমতা- এ লক্ষ্যকে সামনে নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলেন বঙ্গবন্ধু। গরিব মানুষের জন্য দেশটি তৈরি করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সময় তা হতে দেয়নি। বঙ্গবন্ধু শহীদ হন। বিশ্বে সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির চেয়ে দৌড়ে এগিয়ে যায় মুক্ত বাজার অর্থনীতি। আর ঠিক এই সময়ে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর মাহেন্দ্রক্ষণে ইতিহাসের বড় আর্থিক বাজেট উপস্থাপন করেছে। আবার এই সময়টাতেই একজন মানুষ বিভিন্ন মিডিয়াতে বলে চলেছেন "গরিববান্ধব বাজেট, গরিব বান্ধব অর্থনীতির" মন্ত্র। তিনি প্রফেসর আহছানুল আলম পারভেজ। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষক, বিভিন্ন সময়ে সরকার মনোনীত কপালী ব্যাংক, সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের পরিচালক, ইসলামী ব্যাংক এর সরকার মনোনীত স্বতন্ত্র পরিচালক ও ভাইস চেয়ারম্যান এবং চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স এর প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক।
এখন দেখি গরিব বান্ধব অর্থনীতি বা বাজেট বলতে তিনি কি বলতে চাচ্ছেন। এবারের বাজেটে কালো টাকা সাদা করার জন্য ১০% শতাংশ করকে তিনি বলছেন Tax injustice কেননা তার মতে এতে কালো টাকা অর্জনকে উৎসাহিত করা হবে। এইজন্য তিনি এটির করের হার বাড়ানোর প্রয়োজন মনে করছেন যা আমিও সঠিক মনে করি। চলমান করোনা মহামারিতে তিনি বলছেন ফাইভ স্টার হোটেলগুলোতে অর্থের বিনিময়ে দেশের উচ্চ বিত্তদের করোনার টিকা প্রদানের কথা। ফলে দেশ রাজস্ব পাবে, সাধারণ মানুষ উপকৃত হবে অন্যদিকে উচ্চ বিত্তরাও অধিকতরভাবে টিকা গ্রহণ করবে।
তাঁর মতে, মাঠে কর্মরত ৬০ ভাগ মানুষ করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেনা। ভারত এবার ৩৫ হাজার কোটি রুপি করোনার টিকার জন্য বরাদ্দ রেবেছে। বাংলাদেশ বাজেটে টিকার জন্য দশ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখলে বছরে ৪ কোটি মানুষ এর আওতায় আসবে। ব্যাংকগুলোকে মাইক্রো, ক্ষুদ্র এবং মধ্যবর্তী পর্যায়ে বিনিয়োগ করতে হবে যাতে করে করোনাকালে সৃষ্ট শিক্ষিত, স্বল্পশিক্ষিত মানুষ নিজের পায়ে দাড়াতে পারে। ৫০ হাজার থেকে ঋণ সুবিধা শর্ত সাপেক্ষে সাধারণ মানুষকে ২০/৩০ লক্ষ টাকাও ঋণ দেয়া যেতে পারে। "ব্যাংকগুলোকে কিছু মানুষের ব্যাংক থেকে বহু মানুষের ব্যাংক হতে হবে এটি প্রফেসর পারভেজ এর গরিব বান্ধব অর্থনীতির অন্যতম একটি অনুসংগ।
অমর্ত্য সেন বলেছেন বাদ্যের অসম বণ্টন ও ক্রয় ক্ষমতার বিপর্যয়ের কারণে দুর্ভিক্ষ হয়। এক্ষেত্র প্রফেসর পারভেজ বলছেন ক্রয়ক্ষমতা তখনই বাড়বে যখন পরিবারের কেউ কর্মক্ষম হবে। এইজন্য সোশাল নেটওয়ার্ক এর আওতায় একটি পরিবার প্রতি একটি চাকুরী নিশ্চিত করতে তিনি রাষ্ট্রকে আহবান জানাচ্ছেন এবং সেটি প্রাইভেট পাবলিক হতে পারে। বেকারত্ব ও দারিদ্র্য পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। বেকারত্ব দূর হলে ক্ষুধা দারিদ্র্য সহজেই দূর হবে। ক্ষুদ্র ঋণের ব্যাপারে তার অভিমত এন জি ও সমূহের খঋণে সুদের হার বেশি। অনেক ক্ষুদ্র উদ্যেক্তা এই জালে যাতে না আটকায় সেজন্য রাষ্ট্রকে সরাসরি ভূমিকা রাখতে হবে। রাষ্ট্র সহজেই অল্প সুদ ও সহজ শর্তে তৃণমূল পর্যায়ে ক্ষুদ্র ঋণ সরবরাহ করে নতুন উদ্যোক্তা তৈরি করতে পারে। গণচীন তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ।
তাছাড়া ও তিনি টার্গেট এলাকা নির্ধারণ করে এর সংস্কৃতি ও এর সামাজিক বিশ্লেষণ করে দারিদ্র্য বিমোচক পথ দেখাচ্ছেন। রাজশাহীর আম, সিলেট রাঙামাটির আনারস, চট্টগ্রামের লেবু, টমেটো ইত্যাদির জন্য একটি মহাসড়ক চিহ্নিত করে সেখনে Multi pur- pose Storage এর ব্যবস্থার মাধ্যমে উৎপাদকদের পণ্য সারা বছর বন্টন এবং রপ্তানিও করা যাবে। এক্ষেত্রে তাদের ঋণ সুবিধা দেয়া যেতে পারে। সরকারি বেসরকারি ব্যাংক নির্বিশেষে পরিবার প্রতি দুটি গাভী কেনার জন্য স্বল্প সুদে মেয়াদি ঋণ দিলে প্রান্তিক নারীরাও এক্ষেত্রে এগিয়ে আসবে। এনজিওগুলোও এর ফলে তাদের প্রক্রিয়া আরো সহজ করবে কারণ তারা তখন প্রতিযোগিতার অর্থনীতি লড়বে যার অন্যপক্ষ সরকার।
২০২১-২০২২ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণার পর দিন স্বনামধন্য অর্থনীতিবিদ ড. আতিউর রহমান দৈনিক সমকাল পত্রিকায় 'আউট অব বক্স গেলেননা অর্থমন্ত্রী' এই শিরোনামের কলামে শুরুতেই লিখেছেন আমরা যতটা আউট অব বক্স বাজেট আশা করেছিলাম তা পাইনি।' এই আউট অব বক্স হচ্ছে আমি মনে করি প্রফেসর পারভেজ এর প্রস্তাবিত কর্মসূচি। অভিজিৎ বন্দোপাধ্যায় এর মতে দারিদ্রদ্র্য দূরীকরণে নীতি নির্ধারণ জরুরি। স্থান বিশেষ, সংস্কৃতি, বিশ্বাস সবকিছুর উপর নির্ভর করে এই নীতি। সবশেষে বলা যায় অমর্ত্য সেন, অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় দারিদ্র্য বিমোচনের থিউরির সম্পূরক থিউরি প্রফেসর পারভেজ দিয়েছেন। কেননা দারিদ্রদ্র্য বিমোচনে বেকারত্ব দূর করা অবশ্যম্ভাবী বিষয়। বেকারত্ব দূর করতে হলে নতুন কর্মসংস্থান ও সমাজের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী থেকে উদ্যেভতা তৈরির কোন বিকল্প পথ নেই।
এমআই