আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
গাজাভিত্তিক ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস যে যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে সোমবার রাজি হয়েছে তার কপি আল জাজিরা প্রকাশ করেছে। মিসর ও কাতারের প্রস্তাবিত এই চুক্তিতে তিনটি পর্যায় পর্যায় বা ধাপ রয়েছে। এতে চূড়ান্ত পর্যায়ে স্থায়ী যুদ্ধ বন্ধ এবং ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড থেকে ইসরাইলি সৈন্য পূর্ণ প্রত্যাহারের কথা বলা হয়েছে।
চুক্তিতে গাজায় বন্দী ইসরাইলি বন্দীদের মুক্তি নিশ্চিত করা হয়েছে এবং সেইসাথে ইসরাইলি কারাগারগুলোতে বন্দী ফিলিস্তিনিদের মুক্তির কথা বলা হয়েছে। তবে কতজন ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেয়া হবে, তা উল্লেখ নেই।
ইসরাইল ও হামাসের এই যুদ্ধবিরতি চুক্তির মূল কথা হলো, উভয় পক্ষ তাদের হাতে থাকা সকল বন্দীকে মুক্তি দেবে এবং স্থায়ী শান্তি কার্যকর করবে। এছাড়া গাজা পুনর্গঠন এবং অবরোধ প্রত্যাহারের নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে। তিন ধাপে বা পর্যায়ে চুক্তিটি বাস্তবায়িত হবে।
প্রথম ধাপ (৪২ দিন)
দুই পক্ষের মধ্যে একটি সাময়িক অস্ত্রবিরতি হবে। এ সময় ইসরাইলি বাহিনী পূর্ব এলাকা এবং ঘনবসতিপূর্ণ স্থানগুলো থেকে সরে যাবে।
প্রতিদিন ১০ ঘণ্টা করে গাজা উপত্যকার ওপর দিয়ে সকল ধরনের বিমান চলাচলে ও উড্ডয়ন বন্ধ থাকবে। আর যখন বন্দীদের মুক্তি দেয়া হবে, তখন বিমান চলাচল ও উড্ডয়ন বন্ধ থাকবে ১২ ঘণ্টা।
চুক্তির তৃতীয় দিনে ইসরাইলি বাহিনী পুরোপুরি পূর্ব প্রান্তের আল-রাশিদ স্ট্রিট থেকে সালাহউদ্দিন স্ট্রিটে সরে যাবে। তারা এই এলাকার সকল সামরিক স্থাপনা ও অবস্থান গুঁড়িয়ে দেবে।
স্থানচ্যুত লোকজন (নিরস্ত্র) তাদের বাড়িঘরে ফিরে যেতে পারবে এবং গাজার সকল অধিবাসী বিনা বাধায় উপত্যকার সকল স্থানে যেতে পারবে।
প্রথম দিন থেকে কোনো বাধা ছাড়াই আল-রশিদ স্ট্রিটের মাধ্যমে মানবিক সহায়তার অনুমোদন দেয়া হবে।
২২তম দিনে (গাজা জীবিত বেসামরিক বন্দীদের অর্ধেক এবং নারী সৈন্য) মুক্তির পর ইসরাইলি বাহিনী গাজা উপত্যকার মধ্য এলাকা তথা সালাহ উদ্দিন স্ট্রিট থেকে সরে সীমান্ত এলাকায় যাবে। এসব এলাকার সামরিক সব স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেবে।
উত্তর গাজায় স্থানচ্যুত লোকজনকে তাদের বাড়িঘরে ফিরতে দেয়া হবে। গাজার সব এলাকার লোকজনকে স্বাধীনতভাবে চলাচল করার সুযোগ দেয়া হবে।
মানবিক সহায়তা, ত্রাণ সামগ্রী এবং জ্বালানি (দিনে ৬০০ ট্রাক, এর মধ্যে ৫০ ট্রাক জ্বালানি এবং উত্তরের জন্য ৩০০ ট্রাকসহ) ব্যাপকভিত্তিতে সরবরাহ করতে দিতে হবে। এ সময় সমগ্র গাজায় বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো চালু করা হবে; বাণিজ্য শুরু হবে; হাসপাতাল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, বেকারিগুলো চালু হবে।
বন্দী বিনিময় যেভাবে হবে
প্রথম ধাপে হামাস ৩৩ ইসরাইলিকে মুক্তি দেবে (জীবিত বা মৃত)। এর মধ্যে নারী (বেসামরিক ও সৈন্য), শিশু (১৯ বছর বয়সের কম এবং সৈনিক নয়), ৫০-এর বেশি বয়স্ক, অসুস্থদের মুক্তি দেবে।
এর বিনিময়ে হামাসের দেয়া তালিকা অনুযায়ী প্রতি ইসরাইলি বন্দীর বিনিময়ে ৩০ ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেবে।
পরবর্তী পর্যায়ে হামাস সকল জীবিত ইসরাইলি নারী সৈন্যকে মুক্তি দেবে। বিনিময়ে প্রতিটি ইসরাইলি নারী সৈনিকের বিনিময়ে হামাসের তালিকা অনুযায়ী ৫০ ফিলিস্তিনি বন্দীকে (৩০ জন যাবজ্জীবন এবং ২০ জন দণ্ডপ্রাপ্ত) মুক্তি দেবে।
প্রথম ধাপে হামাস ৩৩ জন জীবিত ইসরাইলিকে মুক্তি দেবে। তবে ৩৩ জন জীবিত বন্দী পাওয়া না গেলে একই শ্রেণিভুক্ত লাশ ফেরত দেবে।
এ সময় গাজায় বিদ্যুৎ, পানি, পয়ঃনিষ্কাষণ, যোগাযোগ ও সড়ক অবকাঠামো পুনর্গঠন করা হবে। বেসামরিক কার্যক্রম চালানোর জন্য প্রয়োজন্য সকল সরঞ্জাম পাঠানো হবে। বাস্তুচ্যুতদের জন্য ৬০ হাজার সাময়িক বাড়ি এবং দুই লাখ তাঁবু সরবরাহ করা হবে।
দ্বিতীয় পর্যায় (৪২ দিন)
এই পর্যায়ে বাকি সকল ইসরাইলি পুরুষ (বেসামরিক ও সামরিক) বন্দীকে মুক্তি দেয়া হবে। বিনিময়ে ইসরাইলি কারাগারগুলো আটক নির্দিষ্ট সংখ্যক বন্দীকে মুক্তি দেয়া হবে।
এই পর্যায়ে গাজা উপত্যকা থেকে ইসরাইলি সৈন্য পুরোপুরি প্রত্যাহার করা হবে।
তৃতীয় পর্যায় (৪২ দিন)
এই পর্যায়ে উভয় পক্ষ তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকা লাশগুলো ফেরত দেবে।
এই পর্যায়ে গাজা উপত্যকা পুনর্গঠনের তিন থেকে পাঁচ বছর মেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে। এসব কাজ হবে মিসর, কাতার ও যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশ কয়েকটি দেশের তদারকিতে।
গাজা উপত্যকার অবরোধ এই পর্যায়ে পুরোপুরি অবসান হবে।
চুক্তির গ্যারান্টর : কাতার, মিসর, যুক্তরাষ্ট্র ও জাতিসঙ্ঘ।
সময় জার্নাল/এলআর