মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪

বুটেক্সে ইন্ডাস্ট্রিয়াল ভিজিট আয়োজনে অনীহা

শনিবার, মে ১১, ২০২৪
বুটেক্সে ইন্ডাস্ট্রিয়াল ভিজিট আয়োজনে অনীহা

বুটেক্স প্রতিনিধি 

বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুটেক্স) ফ্যাক্টরি বা ইন্ডাস্ট্রিয়াল ভিজিট আয়োজনে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে। প্রতি সেমিস্টারে বিভাগভিত্তিক একটি করে ভিজিট হওয়ার কথা থাকলেও নিয়মিত হচ্ছে না। এ ব্যাপারে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মাঝে দেখা যাচ্ছে ভিন্ন প্রতিক্রিয়া।

বেশিরভাগ শিক্ষার্থী তাদের বিভাগের কো-অর্ডিনেটরদের ইন্ডাস্ট্রিয়াল ভিজিট আয়োজনে অনীহা ও সক্ষমতা নিয়ে অভিযোগ আনলেও শিক্ষকরা বলছেন ভিন্ন কথা। বিভাগে শিক্ষক সংকট, একসাথে বেশি শিক্ষার্থী ইন্ডাস্ট্রি গ্রহণ না করা, বাজেট সংক্রান্ত বিষয়ে জটিলতা, কেন্দ্রীয়ভাবে ভিজিটের প্রক্রিয়া না থাকা, বারবার চেষ্টার পরও ইন্ডাস্ট্রি গ্রহণ না করা, বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে ইন্ডাস্ট্রি হতে মানা করে দেওয়াসহ নানা কারণ দেখিয়েছেন শিক্ষকরা।

বুটেক্সে এখন রয়েছে ১০টি বিভাগ, যেখানে বিএসসি ইন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি প্রদান করা হয়। এখানকার পাশ করা শিক্ষার্থীরা কর্মক্ষেত্রে টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। প্রযুক্তির উন্নয়নের এ যুগে সবকিছুর সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে টেক্সটাইল সেক্টর। এতে অনেকক্ষেত্রেই দেখা যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠদানের সাথে কর্মক্ষেত্রের অনেক কিছুই মিল পান না শিক্ষার্থীরা। এছাড়া সকল বিষয়ে ব্যবহারিক জ্ঞানার্জনের সুযোগও হয়ে উঠে না শিক্ষার্থীদের। তাই শিক্ষার্থীদের তাত্ত্বিক জ্ঞানের সাথে মিল রেখে ব্যবহারিক জ্ঞানার্জন, টেক্সটাইলের আধুনিক বিষয়াদির সাথে পরিচয়, কর্মক্ষেত্রের পরিবেশ নিয়ে ধারণা নেওয়া এবং টেক্সটাইলের বিভিন্ন প্রক্রিয়া নিয়ে সম্যক ধারণা দেয়ার উদ্দেশ্যে প্রতি সেমিস্টারে টেক্সটাইল ফ্যাক্টরিতে শিক্ষার্থীদের বিভাগভিত্তিক ইন্ডাস্ট্রিয়াল ভিজিটে নিয়ে যাওয়ার নিয়ম রয়েছে।

ইন্ডাস্ট্রিয়াল ভিজিটের সমস্ত ব্যয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহন করা হয় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব কিংবা ভাড়া করা যানবাহনে শিক্ষার্থীরা শ্রেণি কো-অর্নিনেটরের তত্ত্বাবধানে ভিজিটে যান। ফ্যাক্টরি নির্বাচন থেকে শুরু করে ট্যুরের যাবতীয় বিষয়াদি আয়োজন করে থাকেন সংশ্লিষ্ট বিভাগের কো-অর্ডিনেটর।

২০২৩ সালের ২৬ জুন বুটেক্স সাংবাদিক সমিতি কর্তৃক প্রকাশিত জরিপে দেখা যায় বুটেক্সের ৪৪তম হতে ৪৭তম ব্যাচের প্রতি বিভাগে সম্পন্ন হওয়া সেমিস্টার বিবেচনায় মোট ইন্ডাস্ট্রিয়াল ভিজিট হওয়ার কথা ২০২টি, কিন্তু বাস্তবে ভিজিট হয় মাত্র ১০৬ টি। ভিজিট আয়োজনের বিষয়টি অন্যান্য ব্যাচের ক্ষেত্রেও নিয়মমাফিক না হওয়ার চিত্র দেখা যায়।

৪৬তম ব্যাচের শ্রেণি প্রতিনিধি হতে জানা যায়, তাদের ব্যাচে প্রতি বিভাগে ৬টি করে ভিজিট হওয়ার কথা থাকলেও প্রতি বিভাগে সবচেয়ে কম ইন্ডাস্ট্রিয়াল ভিজিট হয়েছে এমন বিভাগগুলো হলো ফেব্রিক ইঞ্জিনিয়ারিং, অ্যাপারেল ইঞ্জিনিয়ারিং, ওয়েট প্রসেস ইঞ্জিনিয়ারিং, টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং ম্যানেজমেন্ট, টেক্সটাইল ফ্যাশন অ্যান্ড ডিজাইন, ডাইস অ্যান্ড কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ। মাত্র ২টি করে ইন্ডাস্ট্রিয়াল ভিজিট সম্পন্ন হয়েছে তাদের। 

তাছাড়া ইয়ার্ণ ইঞ্জিনিয়ারিং এবং টেক্সটাইল মেশিনারি ডিজাইন অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স বিভাগের ৩টি, ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪টি, এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড ইন্জিনিয়ারিং বিভাগের ৫টি। 

এ বিষয়ে ফেব্রিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সোহানুর রহমান বলেন, আমাদের ৬টা সেমিস্টার শেষ হতে চললো, কিন্তু এখন পর্যন্ত মাত্র ২টা ইন্ডাস্ট্রিয়াল ভিজিট হয়েছে। আরেকটি হওয়ার আলোচনা চলছে। ইন্ডাস্ট্রি ভিজিট থেকে আমরা বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রির কর্ম পরিবেশ, বিভিন্ন প্রক্রিয়া, প্রযুক্তির ব্যবহার সম্পর্কে ভালো ধারণা পাই যা আমাদের জব সিলেকশনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। 

একই ব্যাচের অ্যাপারেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী আবিদ হাসান বলেন, উপাচার্য স্যারের ভাষ্যমতে আমাদের কমপক্ষে ৫টি ইন্ডাস্ট্রিয়াল ভিজিট দরকার। নিটিং, উইভিং, স্পিনিং, ডাইয়িং এবং কম্পোজিট সম্পর্কে জানলে মোটামুটি প্রোডাকশন নিয়ে ভালো একটা আইডিয়া হবে আমাদের। ৩য় বর্ষ প্রায় শেষের দিকে, কিন্তু আমাদের এ পর্যন্ত মাত্র ২টা ভিজিট সম্পন্ন হয়েছে। সবাই ব্যাপারটি নিয়ে এত চিন্তিত থাকার পরও কেন হচ্ছে না ইন্ডাস্ট্রিয়াল ভিজিট তা আমাদের জানা নেই।

একই ব্যাচের ওয়েট প্রসেস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী সিয়াম পিবর জানান, আমাদের প্রথম ভিজিট হয় একটা কম্পোজিট ফ্যাক্টরিতে। সেখানে কাটিং সেকশন, ডায়িং সেকশন থেকে শুরু করে মোটামুটি সবকিছুই ছিল। আর দ্বিতীয় ভিজিটে আমাদের ইয়ার্ন-ফেব্রিক ডায়িং এবং প্রিন্টিংয়ের একটি ফ্যাক্টরি ভিজিটে নিয়ে যাওয়া হয়। করোনার কারণে আমাদের প্রথম বর্ষে কোনো ইন্ডাস্ট্রিয়াল ভিজিট হয় নি, এটা একটি কারণ হতে পারে কম ভিজিট হওয়ার। তাছাড়া অন্যান্য প্রতিবন্ধকতাও থাকতে পারে। 

ইন্ডাস্ট্রিয়াল ভিজিট কেন হচ্ছে না এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েট প্রসেস ইন্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৬তম ব্যাচের কো-অর্ডিনেটর শিক্ষক ইমরান হোসেন জানান, ইন্ডাস্ট্রিয়ার ট্যুরে যেসব সমস্যা হয় তার মধ্যে প্রথম সমস্যা হলো ট্যুর ম্যানেজ করা। এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্তৃক কেন্দ্রীয়ভাবে যদি কোনো পদ্ধতি থাকতো যে একবার এক বিভাগ যাবে এক ইন্ডাস্ট্রিতে তাহলে সুবিধা হতো। তাছাড়া ট্যুর থেকে এসে অনেক কাজ থাকে। আর্থিক ব্যাপারটাও আর একটু সহজ করা যেতে পারে। আবার পরিবেশগত কারণে অনেকসময় হয়ে উঠে না। একসময় করোনার কারণে হয় নি। প্রচন্ড গরমেও হয়ে উঠে না। তাছাড়া শিক্ষার্থীরা একটা বিষয় জানা ছাড়াই ইন্ডাস্ট্রিতে দেখে আসলে অনেকসময় ফলপ্রসূ হয় না, এতে তাদের বুঝতে সমস্যা হয়।

তিনি আরও বলেন, শিক্ষক সংকট আছে। একজন শিক্ষককে বারবার যাওয়া লাগে, ইন্টার ডিপার্টমেন্ট টিচার নিয়ে যাওয়া সম্ভব হলে এ ব্যাপারটি সহজতর হতো। শিক্ষকদের ক্লাস নেওয়ার পাশাপাশি আরো নানা ধরণের কাজ করা লাগে। ইন্ডাস্ট্রি ম্যানেজ করা কষ্ট হয়ে যায়, সময় সাপেক্ষ ব্যাপারও। আমার কাছে মনে হয় প্রতি ৬ মাসে টুরের দরকার হয় না। এক বছরে একবার গেলেই হয়। আমরা ওয়েট প্রসেস বিভাগ সবসময় যে আমাদের বিভাগ সংক্রান্ত ইন্ডাস্ট্রিতে যেতে হবে এমন তো নয়। যে সেমিস্টারে ফেব্রিক, ইয়ার্ন পড়ায় ঐ সেমিষ্টারে ঐ রিলেটেড ইন্ডাস্ট্রিতে যাওয়া যেতে পারে।

ফেব্রিক ইন্জিনিয়ারিং বিভাগের কোঅর্ডিনেটর শিক্ষক মো. মোহাদ্দেস হোসেন বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, প্রতি সেমিস্টারে ১টা করেই ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্যুর হওয়ার কথা, কিন্তু শিক্ষক সংকটের জন্য হয়ে উঠে না। কিছু শিক্ষক সংকট রয়েছে আমাদের, অনেকে বিদেশে অবস্থান করছে। আমরা উইভিং, নিটিং ছাড়া করাই না। এতে করে ইন্ডাস্ট্রি পেতে সমস্যা হয়। প্রথম বর্ষে মূলত ফাইবার, পলিমার পড়ানো হয়। বাংলাদেশে এসব সংক্রান্ত ইন্ডাস্ট্রি খুব একটা নেই, যদি থাকতো তাহলে ভাল হতো।

তিনি আরও বলেন, ৪৬তম ব্যাচের প্রথম এক থেকে দেড় বছর করোনার জন্য ভিজিট হয় নি। তবে পরবর্তী ব্যাচদের নিয়মিত হচ্ছে। এখন চেষ্টা করা হচ্ছে বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রিতে যোগাযোগ করার। আগে ইন্ডাস্ট্রিতে বড় ভাই যারা আছেন তাদের বললেই হতো, কিন্তু এখন ম্যানেজিং ডিরেক্টরের সাথে যোগাযোগ করা লাগে ট্যুরের জন্যে, রেসপন্স অনেক কম আসে, তাও চেষ্টা চলছে। অনেক সময় শেষ মুহুর্তে এসে ফ্যাক্টরি না করে দেয় অডিট বা অন্য কোনো কারণ দেখিয়ে। অনেক সময় যখন আমরা যোগাযোগ করি তখন বিভাগের ৭০-৮০ জন শিক্ষার্থী সংখ্যা শুনলে তারা একটু ইতস্ত করে। দুই ধাপে আসার জন্য বলেন। একই ব্যাচকে দুই ধাপে নেয়া নিয়ম নেই, এতে করে ইন্ডাস্ট্রি ম্যানেজ করা কঠিন হয়ে পরে। যদিও প্রতি সেমিস্টারে নিয়ে যাওয়া কঠিন হয়ে যায়, তাও আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

বারবার আবেদন করেও নিয়মিত ইন্ডাস্ট্রিয়াল ভিজিট না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেক শিক্ষার্থী। এ নিয়ে ডাইস অ্যান্ড কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাকিব ইকবাল বলেন, বিভাগে বারবার জানানো হলেও এখনও পর্যন্ত লেভেল-৩ এর ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্যুরের ব্যবস্থা করা হয় নি। গত ২ মে ছিল এ সেমিস্টারের শেষ ক্লাস। এবারের প্রিপারেটরি লিভ (পিএল) এর সময়ও অনেক কম, মাত্র ১৩ দিন। এখন যদি ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্যুরের কথা ভার্সিটি থেকে বলা হয়, ছাত্ররা কী টার্ম ফাইনালের প্রস্তুতি নিবে নাকি ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্যুরে যাবে। যে জায়গাতে টেক্সটাইল সেক্টরের লেখাপড়ায় প্রাকটিক্যাল শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা অনেক, সেখানে তৃতীয় বর্ষ শেষ করেও ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্যুর হল মাত্র ২টা! আবেদন থাকবে যেন  ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্যুর আগামী টার্মেও যথাসময়ে হয় এবং যেটা হয় নি, সেটারও যাতে ব্যবস্থা করা হয়। যেকোনো টার্মের শুরুতে একাডেমিক প্রেসার অনেক কম থাকে। সিটি, ল্যাব ভাইবার কোনো চাপ থাকেনা। এরকম সময়ে করলে আর কোনো সমস্যা থাকেনা।

আরইউ


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল