নিফাত সুলতানা মৃধা: গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে করোনা সংক্রমণের জন্য দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। অধিভুক্ত সাত কলেজের ২০১৯-২০২০ শিক্ষার্থীদের অনার্স জীবনের শুরুর দুই মাস পর থেকেই শিক্ষা কার্যক্রম স্থবির হয়ে যায়। দুই মাসে কলেজ ক্যাম্পাস, নিজ ডিপার্টমেন্ট , শিক্ষকদের চিনে উঠেছে কিনা তা নিয়ে সন্দিহান। নামমাত্র অনলাইন ক্লাস নিয়েও শিক্ষার্থীদের রয়েছে অভিযোগ। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া সকল শিক্ষার্থীর কাছে স্মার্ট ফোন থাকলেও ফোন গুলোতে সব অ্যাপ সাপোর্ট করে না অথবা ডিভাইস সংগ্রহ করলে তাতে নেটওয়ার্ক সংক্রান্ত জটিলতা, গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনার সময় নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া। নানা ধরনের বিড়ম্বনার স্বীকার শিক্ষার্থীরা।
তাছাড়া বন্ধের প্রথম দিকে অনলাইন ক্লাসের গুরুত্ব থাকলেও সময় সাপেক্ষে তার চাপ কমে অ্যাসাইনমেন্ট সিস্টেমে চলে আসা। এই সব পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের সিলেবাস সম্পূর্ণ হয়নি। তাই শিক্ষার্থীদের দাবি সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পরীক্ষা নেওয়া বা বিকল্প ব্যবস্থায় অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা। এ বিষয়ে সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের সাথে আলাপকালে তাদের দাবিগুলো তুলে ধরেন নিফাত সুলতানা মৃধা।
কবি নজরুল সরকারী কলেজর ১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল কাফী বলেন, ক্লাসে পা রাখার ১ মাস পর করোনা সংক্রমণের জন্য দীর্ঘ ছুটি পার করছি। পড়াশোনার চাপ না থাকায় অন্য কাজে যুক্ত হয়ে পড়াশোনার মনোযোগ হারিয়ে ফেলেছি। হঠাৎ করে সম্পূর্ণ বই থেকে পরীক্ষা নেয়ার কথা শুনে দিশেহার হচ্ছি। অকৃতকার্য হলে জীবন থেকে ২ টা বছর নষ্ট হবে। তাছাড়া মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান হয়ে ১ম বর্ষ পাশ করার জন্য ৩ বছর অপেক্ষা করা অসম্ভব। তাই আমাদের আবেদন সিলেবাস থেকে যে টপিক গুলো আমাদের জানা অপরিহার্য সেগুলো তালিকা করে সিলেবাস কিছুটা কমিয়ে দেওয়া হোক।
সরকারি সোহরাওয়ার্দী কলেজের ১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী মাহমুদুল বলেন, আমাদের ক্লাস খুব কম হয়েছে যার ফলে বই, সিলেবাস সম্পর্কে যে ধারণা তা পরীক্ষার জন্য ফলপ্রসূ নয়। জুলাই মাসে পরীক্ষার রুটিন দেওয়া হলে পুরো সিলেবাসে প্রস্তুতি নেওয়ার মতো পর্যাপ্ত সময় নেই। শিক্ষকদের কাছে সংক্ষিপ্ত সিলেবাস বা সাজেশনের জন্য গেলেও তেমন কোনো সমাধান বা কমন পড়ার নিশ্চয়তা পাই নি। সব মিলিয়ে মানসিক চাপের মধ্যে রয়েছি। এই সমস্যার উত্তরণ হোক তাই চওয়া।
সরকারি তিতুমীর কলেজের ১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী সাব্বির হোসাইন বলেন, আমরা ১৯-২০ সেশনের সকল শিক্ষার্থীরা ডিপ্রেশন ও মানসিক অশান্তিতে আছি। একদিকে ভালো ভাবে ক্লাস করতে পারিনি অন্য দিকে পরীক্ষার বিষয়ে কোন পরামর্শ আমরা সঠিক ভাবে পায়নি। সম্পূর্ণ সিলেবাসে পরীক্ষা দিলে ফেল নিশ্চিত। তাই আমাদের চাওয়া সিলেবাস কিছুটা কমানো এবং মিনিমাম ১ মাস আগে রুটিন প্রকাশ।
সাম্মি নিলা, ইডেন মহিলা কলেজের ১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী বলেন, সরাসরি ক্লাস করার সুযোগ কম পেয়েছি। অনলাইন ক্লাস করার ক্ষেত্রে ছিল একাধিক জটিলতা। পড়াশোনা না করতে করতে আমাদের মস্তিষ্কে যেমন মরীচিকা পড়ে গেছে তেমন "শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় অমনোযোগী হওয়া সব বিষয়ের মূল কারণ" বলে শিক্ষকদের দায়সারা কথাবার্তার মাঝখানে আমাদের জীবন শাঁখের করাতে। হঠাৎ করে সম্পূর্ণ সিলেবাসে পরীক্ষার ঘোষণা সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করছে আমাদের শিক্ষাজীবন। সঠিকভাবে সরাসরি ক্লাস করলে একজন শিক্ষার্থী প্রশ্নের ধরন, গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন, উত্তর লেখার সঠিক ধারাবাহিকতা কিংবা নিজের যেকোনো পাঠের সমস্যা আলোচনার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের কাছ থেকে সহজেই জেনে নিতে পারে। অনলাইন ক্লাসে আমরা সে সুবিধা থেকে বঞ্চিত। তাই একাধিক যৌক্তিক কারণগুলো বিবেচনা করে সিলেবাস কমানো জরুরি এবং অন্তত ৩০ দিন সময় দিয়ে পরীক্ষা নিয়ে আমাদের শিক্ষাজীবন উদ্ধার করা হোক।
বদরুন্নেসা কলেজের একই সেশনের শিক্ষার্থী নুসরাত নূপুর বলেন, পুরো সিলেবাসে পরীক্ষা ভাবলেই চক্ষুচড়ক গাছ। ক্লাস তাহলে কবে হলো ? জুমে ক্লাস করে সম্পূর্ণ সিলেবাসে পরীক্ষা দেওয়া আর নির্দেশনা ছাড়া পরীক্ষা দেওয়ার মধ্যে কোনো ফারাক নেই। ফলাফল গণহারে ফেল। হাজার হাজার শিক্ষার্থীদের জীবন ধ্বংসের মুখে, তখন করোনার দোহায় দিয়ে কি আমাদের শিক্ষাবর্ষ বিবেচনা করা হবে? এসব মানসিক চাপ থেকে মুক্তির উপায় হিসেবে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পরীক্ষা নেওয়া হোক। আমাদের পরিস্থিতি মানবিক বিবেচনায় আনা হোক।
মোঃ নুরুল হায়দার সিফাত ঢাকা কলেজের ১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী তিনি বলেন, গ্রামে থেকে নেটওয়ার্কজনিত সমস্যার কারণে ঠিকমতো ক্লাস করতে পারিনি। প্রথম দিকে ক্লাস করার জন্য বাড়ি থেকে অনেক দূরে যেতে হতো পরবর্তীতে নানা সমস্যায় আর ক্লাস করা হয়নি। তাছাড়া ক্লাস যা হয়েছে তার হিসাব করলেও দেখা যাবে যে সম্পূর্ণ সিলেবাস শেষ হয়নি। যেহেতু স্বশরীরে পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত এসেছে সেক্ষেত্রে মূল বিষয়াবলির উপর একটা চার্ট দেওয়া হোক অথবা সিলেবাস সংক্ষিপ্ত করা হোক।
ঢাবি অধিভূক্ত সরকারি সাত কলেজের সমন্বয়ক ও ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক আই কে সেলিম উল্লাহ খোন্দকার শিক্ষার্থীদের দাবি অস্বীকার করে বলেন, সাত কলেজের প্রতিটা কলেজেই অনলাইনে ক্লাস হয়েছে। ফলে পরীক্ষায় সিলেবাস কমানোর কোনো সুযোগ নেই। কয়েকদিনের নোটিশে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা দেবার প্রস্তুতি রাখবে হবে।
সময় জার্নাল/এমআই