মুহা: জিললুর রহমান, সাতক্ষীরা সংবাদদাতা: প্রশাসন ও পুলিশের কড়া নজরদারিতে মঙ্গলবার (৮জুন) সাতক্ষীরায় চলছে তৃতীয় দিনের মতো লকডাউন। সাধারণ মানুষকে ঘরে ফেরাতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। তারপরও মানুষের অবাধ চলাচল নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। ফলে লকডাউনের মধ্যেও ঠেকানো যাচ্ছে না করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি।
করোনা সংক্রামণ প্রতিরোধে কঠোর লকডাউন বাস্তবায়নে শহরে প্রতিটি সড়কে পুলিশ ব্যারিকেড দিয়ে সাধারণ মানুষের চলাচল নিয়ন্ত্রনের চেষ্টা করছেন। সাতক্ষীরায় গত কয়েকদিনের তুলনায় মঙ্গলবারের লকডাউনের চিত্র ছিল কিছুটা ভিন্ন রকম। এদিন বাই সাইকেলেও চলাচল নিয়ন্ত্রন করা হয়। এছাড়া পথচারীদের উপস্থিতি ছিল তুলনামূলকভাবে কম। রাস্তার মোড়ে মোড়ে পুলিশের কড়া ব্যারিকেডের কারনে সরকারি গাড়িসহ চিকিৎস্যকদের গাড়িও প্রতিরোধের মুখে পড়ে। এছাড়া আন্তঃজেলা ও দুরপাল্লার গণপরিবহন বন্ধ রয়েছে। তবে শহরে কড়া লকডাউন চললেও গ্রামাঞ্চলের চিত্র ভিন্ন রকম।
এদিকে অবৈধ প্রবেশে ঠেকাতে সীমান্তে কঠোর নজরদারি বজায় রেখেছে বিজিবি সদস্যরা। সাথে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানও অব্যাহত রয়েছে।
সাতক্ষীরা ৩৩ বিজিবি’র অধিনায়ক লে. কর্নেল আল মাহমুদ জানান, সাতক্ষীরা সীমান্ত পথে বৈধ-অবৈধ যাতায়াত পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সীমান্ত জুড়ে টহলে রয়েছে বিজিবি সদস্যরা। ভারত থেকে অবৈধপথে আসার সময় গত ২৪ ঘণ্টায় সদরের পদ্মশাখরা সীমান্তে তিনজন বাংলাদেশীকে আটক করে কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়েছে। কোয়ারেন্টাইন শেষে তাদেরকে কলারোয়া থানায় সোপর্দ করা হবে। এনিয়ে গত এক সপ্তাহে পাসপোর্টবিহীন ৩৯জন ও দু’পাচারকারিকে আটক করেছে বিজিবি।
লকডাউন সফল করার বিষয়ে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান জানান, লকডাউন চলাকালে সাতক্ষীরার সাথে খুলনা ও যশোরের সংযোগস্থলে পুলিশ চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে একইভাবে পুলিশ চেকপোস্ট বসিয়ে চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। শহরের কয়েকটি প্রবেশ পথ একেবারে বন্ধ করা হয়েছে। ভোমরা স্থল বন্দরে আসা ভারতীয় ট্রাক চালক ও হেলপারদের বন্দরে খোলামেলা চলাফেরায় নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
সিভিল সার্জন ডা. হুসেইন শাফায়েত জানান, সাতক্ষীরায় গত ২৪ ঘন্টায় ১৮৭ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১০৩টি করোনা পজেটিভ রিপোর্ট পাওয়া গেছে। শতকরা হিসেবে সংক্রমনের হার দাঁড়ায় ৫৫ ভাগ। লকডাউনের মধ্যেও বেড়েছে করোনা সংক্রমণের হার। তবে লকডাউন ২ সপ্তাহ একটানা সফলতার সাথে চালালে করোনা সংক্রমণ কমে আসবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন ওই স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা।
তিনি আরও জানান, জেলায় এ পর্যন্ত করোনার সক্রিয় রোগী রয়েছেন ৩৭১ জন। এছাড়া হাসপাতালে ১৩৫ জনের বিপরীতে করোনা রোগী ভর্তি রয়েছেন ৪৮জন। ৮টি আইসিইউ বেডে করোনা পজিটিভ রোগীরা ভর্তি আছেন। জেলায় এ পর্যন্ত ১৯৮৯ জন রোগী পজিটিভ শনাক্ত হয়েছেন। সাতক্ষীরায় ২ সপ্তাহ লকডাউন চললে কাঙ্খিত ফলাফল আসবে বলে জানান সিভিল সার্জন।
করোনা সংক্রমণ রোধে লকডাউন সফল করতে পুলিশী তৎপরতার পাশাপাশি জেলাব্যাপী চলছে ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যক্রম।
জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল জানান, সর্বশেষ লকডাউনের তিনদিনে ৪১টি মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ২১৭টি অভিযান পরিচালিত হয়েছে। এসব আদালতের মাধ্যমে ১ লাখ ৬৫ হাজার ৮০০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে।
সময় জার্নাল/এমআই