শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪

জাহাজ আগমন, কার্গো হ্যান্ডলিং, রাজস্ব আয় সব সূচকই ঊর্ধ্বমুখী

শুক্রবার, মে ২৪, ২০২৪
জাহাজ আগমন, কার্গো হ্যান্ডলিং, রাজস্ব আয় সব সূচকই ঊর্ধ্বমুখী

আলী আজীম, মোংলা (বাগেরহাট):

বাংলাদেশের সামগ্রিক বাণিজ্যের ৯২ ভাগ সমুদ্রবন্দর ও নদীপথে হয়ে থাকে। দেশের ক্রমবর্ধমান আমদানি-রফতানি চাহিদা মেটাতে নির্মিত হয়েছে আধুনিক ও পরিবেশবান্ধব মোংলা সমুদ্রবন্দর। উন্নয়নের মহাসড়কে যোগ হয়েছে অমিত সম্ভাবনাময় এ সমুদ্রবন্দর।

পদ্মা সেতু চালুর পর ঝিমিয়ে থাকা বন্দরটিতে প্রাণ ফিরতে শুরু করেছে। পদ্মা সেতু নতুন করে স্বপ্ন দেখাচ্ছে এই বন্দরে। রাজধানী থেকে সবচেয়ে কাছের সমুদ্রবন্দর মোংলা। দূরত্ব মাত্র ১৭০ কিলোমিটার। ফলে পদ্মা সেতু চালুর পর মোংলা বন্দর ব্যবহারে ব্যবসায়ীদের আগ্রহ বাড়ছে। 

১৯৫০ সালে চালনা বন্দর নামে প্রথম বন্দরটির গোড়াপত্তন হয়। ওই বছরের ১১ ডিসেম্বর পশুর নদের জয়মণির ঘোল এলাকায় দ্য সিটি অব লিয়নস নামে জাহাজ নোঙরের মাধ্যমে বন্দরের কার্যক্রম শুরু হয়। পরে ১৯৫১ থেকে ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত চালনায় কার্যক্রম পরিচালিত হয়। ১৯৫৪ সালে খুলনা শহর থেকে ৪২ কিলোমিটার দূরে পশুর নদের পূর্ব তীরে মোংলা চ্যানেল বন্দরটির কার্যক্রম স্থানান্তর হয়।

সম্প্রতি বন্দর এলাকা সরেজমিনে দেখা যায়, একদিকে চলছে গাড়ি খালাসের কাজ। অন্যদিকে আধুনিক ক্রেন দিয়ে ইয়ার্ডে কনটেইনার পরিবহন করা হচ্ছে। বন্দরজুড়েই কর্মচাঞ্চল্য আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। আমদানিকারকের প্রতিনিধিদের আনাগোনায় সরব এখন বন্দর এলাকা। কয়েক বছর আগেও মৃত বন্দর হিসেবে বিবেচিত হত এ বন্দরটি। অথচ বর্তমানে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির সুবাদে মোংলা বন্দরে জাহাজ আসা বাড়ায় কনটেইনার হ্যান্ডলিং ও রাজস্ব দুটোই বেড়েছে। মোংলা বন্দরের রাজস্বে প্রতি বছর লাভ হচ্ছে ১০০ কোটিরও বেশী

বাংলাদেশ ঘিরে আন্তঃআঞ্চলিক বাণিজ্য অর্থাৎ ভারত, চীন, মিয়ানমার, নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য সম্প্রসারণে মোংলা বন্দরের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে দেশের বৈদেশিক বাণিজ্যে ব্যাপক প্রসার ঘটিয়ে সার্বিকভাবে মোংলা বন্দরের সুফল সমগ্র দেশে ছড়িয়ে পড়েছে।

মোংলা সমুদ্রবন্দর শুধু বাণিজ্যের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সামুদ্রিক কেন্দ্র নয়, বরং শক্তি আমদানির জন্য একটি গেটওয়ে হিসেবেও কাজ করে। বন্দর দিয়ে এলএনজি গ্যাস, পেট্রোলিয়াম পণ্য এবং কয়লা আমদানির মাধ্যমে বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান শক্তির চাহিদা মেটানো হচ্ছে। এটি দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা জোরদার করছে এবং শিল্প বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় সংস্থান সরবরাহ করছে। শক্তি সম্পদের প্রাপ্যতা বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং ভারী শিল্পের মতো খাতে দেশী ও বিদেশী বিনিয়োগকে আকৃষ্ট করছে। পরিকল্পিত বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোর সঙ্গে বন্দরের নৈকট্য শিল্প প্রবৃদ্ধিকে আরো প্রভাবিত করেছে।

রফতানিমুখী শিল্প স্থাপন এবং বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করছে। ফলে রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি করছে। এ সমুদ্রবন্দর বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য একটি গেম চেঞ্জার পদক্ষেপ। এ সামগ্রিক উন্নয়ন আঞ্চলিক বৈষম্য কমাতে এবং সমগ্র দেশে ভারসাম্যপূর্ণ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। 

বন্দর কর্তৃপক্ষের তথ্য মতে, ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের গেল এপ্রিল মাসে মোংলা বন্দরে জাহাজ এসেছে ৬৩ টি। এর আগে গেল ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরের এপ্রিল মাসে  জাহাজ ভিড়ে ছিলো ৫২টি। একই সাথে চলতি অর্থ বছরের এপ্রিল মাসে কার্গো হ্যান্ডলিং করা হয়েছে ৬.৩৭ লক্ষ মেট্রিক টন। অন্যদিকে গত অর্থ বছরের এপ্রিল মাসে ৪.৬৭ লক্ষ মেট্রিক টন কার্গো হ্যান্ডেল করা হয়েছিল। অর্থাৎ এ বছরের এপ্রিল মাসে ১.৭০ লক্ষ মেট্রিক টন কার্গো বেশি হ্যান্ডেল করা হয়েছে।

এছাড়া গেল মাসে কনটেইনার হ্যান্ডলিং করা হয় ২১৮৯ টিইইউজ। অন্যদিকে আগের অর্থ বছরে এপ্রিল মাসে কনটেইনার হ্যান্ডলিং করা হয়েছিলো ১৮২২ টিইইউজ। সব মিলিয়ে চলতি অর্থ বছরের এপ্রিল মাসে মোংলা বন্দর রাজস্ব আদায় করেছে ২৪ কোটি ১৪ লক্ষ ৫৩ হাজার টাকা।

অন্যদিকে গত অর্থ বছরের এপ্রিল মাসে ২০ কোটি ১২ লক্ষ ৬১ হাজার টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছিল। অর্থাৎ এ বছরের এপ্রিল মাসে ৪ কোটি ১ লক্ষ ৯২ হাজার টাকা রাজস্ব বেশি আদায় হয়। গেল এপ্রিল মাসে মোংলা বন্দরে কনটেইনার জাহাজ ভিড়েছে  মোট ৮ টি। যা মোংলা বন্দরের ইতিহাসে এক মাসে এতগুলো কনটেইনার জাহাজ ভেড়ার এক অনন্য রেকর্ড।

এছাড়া চলতি অর্থ বছরের গেল দশ মাসে মোংলা বন্দরে জাহাজ ভিড়ে মোট ৭২৬ টি। অন্যদিকে ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের এপ্রিল পর্যন্ত ৭০৮ টি জাহাজ এসেছিল। অর্থাৎ গত অর্থ বছরের তুলনায় চলতি অর্থ বছরের এপ্রিল পর্যন্ত মোট ১৮ টি জাহাজ বেশি এসেছে। চলতি অর্থ বছরের সবকটি সূচকে এখন পর্যন্ত সন্তোষজনক বৃদ্ধি লক্ষ্য করা গেছে।

মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের উপ পরিচালক মো. মাকরুজামান মুন্সি জানান, যুদ্ধসহ নানা কারণে সারা বিশ্বে এখন অর্থনৈতিক মন্দা যাচ্ছে। এরই মধ্যে সকল সম্ভবনা কাজে লাগিয়ে মোংলা বন্দর এখনও সব সূচকে ঊর্ধ্বমুখী অবস্থানে রয়েছে। সকল প্রতিকূল পরিস্থিতিতে ও মোংলা বন্দর আমদানি রফতানি বাণিজ্যে আরো ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে  বলে আমরা প্রত্যাশা করি।

সময় জার্নাল/এলআর


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল