মুহা: জিললুর রহমান, সাতক্ষীরা:
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় 'রেমাল' ক্রমেই উপকূলের দিকে এগিয়ে আসছে। এর প্রভাবে উত্তাল হয়ে উঠেছে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপকূলের বিভিন্ন নদ-নদী। নদীতে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রবল ঢেউ আচড়ে পড়ছে জরাজীর্ণ বেড়িবাঁধের উপর। ফলে মানুষের মধ্যে বাড়ছে আতংক। উপকূল জুড়ে শুরু হয়েছে মাইকিং। ঘূর্ণিঝড়ের কবল থেকে জানমালের নিরাপত্তায় স্থানীয় মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে আসার আহবান জানাচ্ছেন স্বেচ্ছাসেবকরা। শ্যামনগরের কপোতাক্ষ, খোলপেটুয়া, চুনা, কালিন্দিসহ স্থানীয় নদ-নদী পানিতে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে উঠেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের সেকশন অফিসার (এসও) সাজ্জাদুর রহমান জানান, বর্তমানে উপকূলের নদ-নদীতে জোয়ার চলছে। স্বাভাবিকের তুলনায় বর্তমানে ২-৩ ফুট পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এজন্য কিছুটা ঝুঁকিও বেড়েছে। বেড়িবাঁধের ঝুকিপূর্ণ পয়েন্ট গুলো সংষ্কারের জন্য সকাল থেকে কাজ চলছে। যে কোন পরিস্থিতি মোকাবেলায় পর্যাপ্ত জিও ব্যাগ ও জিও রোল মজুদ রয়েছে। ফলে যে কোন পরিস্থি সামাল দেওয়া যাবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
শ্যামনগরের আটুলিয়ার জুবায়ের মাহমুদ জানান, সকাল থেকেই শ্যামনগরে বৃষ্টি হচ্ছে। সেই সাথে ঝড়ো বাতাস বইছে। আশ্রয় কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত থাকলেও সেখানে যেতে মানুষের আগ্রহ কম দেখা যাচ্ছে। পদ্মপুকুরের সালাউদ্দীন জানান, খোলপেটুয়া নদীর পাতাখালী এলাকায় প্রচন্ড ঢেউ আচড়ে পড়ছে বেড়িবাঁধের উপর। ইতিমধ্যে বাঁধের নিচের মাটি সরে গেছে। যে কোনো সময় ভেঙে বিস্তনীর্ এলাকা প্লাবিত হওয়ায় মারাত্মক শংকা দেখা দিয়েছে।
বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাজী নজরুল ইসলাম বলেন, ইউনিয়নের কয়েকটি জায়গায় নদীর বেড়িবাঁধ খুবই ঝুঁকিতে রয়েছে। ঘূর্ণিঝড় রেমাল মোকাবেলায় আমরা প্রস্তুত আছি। কিন্তু বাঁধ ভেঙে গেলে করার কিচ্ছু থাকবে না।
গাবুরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জি.এম মাসুদুল আলম বলেন, সকাল সবার মধ্যে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা কাজ করছে। এলাকাজুড়ে মানুষকে সতর্ক করে ও আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য প্রচারণা চালানো হচ্ছে। এছাড়া হরিষখালী, পার্শেমারী, খলষিবুনিয়া, লেবুবুনিয়াসহ ৫টি স্থানে বেড়িবাঁধ খুবই ঝুঁকিতে রয়েছে। কি হবে বলা যাচ্ছে না।
শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাজিবুল আলম বলেন, ঘূর্ণিঝড় রেমাল মোকাবিলায় উপজেলায় মোট ১৬৩ আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে। এ ছাড়া প্রয়োজনে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও অন্যান্য বহুতল ভবন নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য ব্যবহার করা হবে। ঘূর্ণিঝড়টি আজ রোববার সন্ধ্যায় শ্যামনগর উপকূলে আঘাত হানতে পারে। এজন্য সকলে যাতে আশ্রয় কেন্দ্রে যায় সে লক্ষ্যে মাইকিং করে আহŸান জানানো হচ্ছে। এজন্য স্বেচ্ছাসেবক কাজ শুরু করেছেন। প্রতিটি এলাকার জনপ্রতিনিধির সঙ্গে সবসময় যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।
সাতক্ষীরা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুলফিকার আলী রিপন জানান, ঘূর্ণিঝড় রেমাল ক্রমেই উপকূলের দিক অগ্রসর হচ্ছে। বর্তমানে মোংলা বন্দর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেওয়া হয়েছে। রাতে বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়া অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
এমআই