জেলা প্রতিনিধি:
সুন্দরবনের দরজা আজ শনিবার থেকে তিন মাসের জন্য বন্ধ থাকছে। এ সময় সুন্দরবনের সব নদী ও খালে মাছ ধরা বন্ধের পাশাপাশি পর্যটক প্রবেশেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। বন্ধ করা হয়েছে সুন্দরবনে প্রবেশের সব ধরনের পারমিট।
সুন্দরবনের নদী-খালে মাছ ও বনে প্রাণীদের বিচরণ ও প্রজনন কার্যক্রমের সুরক্ষায় সরকারি এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বন বিভাগের কর্মকর্তারা। এ নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল পেশাজীবীরা।
পশ্চিম সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) এ কে এম ইকবাল হোছাইন চৌধুরী নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, জুন থেকে আগস্ট- এই ৩ মাস সুন্দরবনের নদী-খালে মাছের প্রজনন মৌসুম হিসেবে ধরা হয়। এই তিন মাস সুন্দরবনের নদী ও খালে থাকা বেশিরভাগ মাছ ডিম ছাড়ে। এছাড়া এই সময়ে বন্য প্রাণীরও প্রজনন মৌসুম।
তিনি আরো বলেন, ‘এই তিন মাস বনে পর্যটক ও জেলে না গেলে বনের জীববৈচিত্র্য ও বন্যপ্রাণী নিরূপদ্রব থাকবে। ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে সুন্দরবনে প্রাণী ও জীববৈচিত্র্যের যে ক্ষতি হয়েছে, তা দ্রুত কাটিয়ে উঠবে।’
অন্যদিকে শুক্রবার বিকেলে সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আবু নাসের মোহসিন হোসেন বলেন, আগামীকাল (আজ শনিবার) থেকে তিন মাসের জন্য জেলে-বাওয়ালিদের সুন্দরবনে প্রবেশ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। একইসাথে পর্যটকরাও এই সময়ে সুন্দরবনে প্রবেশ করতে পারবে না। ১ সেপ্টেম্বর থেকে পুনরায় সবার জন্য সুন্দরবনের দরজা খুলে দেয়া হবে।
খুলনার বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো বলেন, সরকারি সিদ্ধান্তে ২০২১ সাল থেকে ১ জুন থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সুন্দরবনের সব ধরনের সম্পদ আহরণ নিষিদ্ধ রয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় এ বছরেও এটা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। মূলত সুন্দরবনের বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্যসহ মৎস্য সম্পদ সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে এই তিন মাসব্যাপী নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়ে থাকে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, সুন্দরবনে প্রবেশ তিন মাস বন্ধ থাকবে। তবে এই সময়ে জেলেদের মৎস্য অধিদফতরের মাধ্যমে খাদ্য সহায়তা দেয়া হবে।
বনজীবীদের মধ্যে কয়েকজনের সাথে কথা হলে তারা জানান, ঘূর্ণিঝড় রেমালের সঙ্কেত শুনে ঝড়ের আগেই তারা সুন্দরবন থেকে লোকালয়ে ফিরেছিলেন। এরপর আর বন বিভাগ থেকে বনে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হয়নি।
সুন্দরবনে মাছ, কাঁকড়া ও মধু আহরণ করেই সংসার চলে তাদের। তিন মাস পাস বন্ধ থাকবে। এক সপ্তাহ আগে ঝড়ের সঙ্কেত শুনে বন থেকে বাড়িতে ফিরেছে তারা। ফলে খুব বেশি মাছ ধরতে পারেননি। সামনের তিন মাস বন্ধের সময় সংসার চালানোর মতো সঞ্চয় করা টাকাও নেই। এ নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল পেশাজীবীরা।
সময় জার্নাল/এলআর