জাকারিয়া শেখ, ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি
কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার চরাঞ্চলে ভয়াবহ নদীভাঙন আবারও হাজারো মানুষের জীবন ও জীবিকার স্বপ্ন কেড়ে নিচ্ছে। টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের পানিতে নদ-নদীর পানি অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ার পর পানি নেমে গেলেও থেমে নেই ভাঙনের তাণ্ডব। মুহূর্তের মধ্যেই বিলীন হয়ে যাচ্ছে ফসলি জমি, ঘরবাড়ি ও বসতভিটা।
নদীবেষ্টিত সাতটি ইউনিয়নের প্রায় তিন শতাধিক গ্রামের মানুষ আজ দিশেহারা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। অনেক পরিবার ইতোমধ্যে গৃহহারা হয়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন। যাদের বাড়িঘর ভাঙনের মুখে, তারা রাত জেগে বসতভিটা পাহারা দিচ্ছেন—যেন ভোর হতে না হতেই নদী গিলে না ফেলে সর্বস্ব।
স্থানীয়দের অভিযোগ, বছরের পর বছর ধরে নদীভাঙন প্রতিরোধে নানা প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও আজও কার্যকর ও স্থায়ী কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। সরকারি উদ্যোগ সীমিত ও অস্থায়ী হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের দুর্ভোগ কমছে না বরং বেড়েই চলেছে।
এই পরিস্থিতি থেকে স্থায়ী সমাধানের দাবিতে শনিবার (১৬ আগস্ট) দুপুরে উপজেলার নারায়ানপুর ইউনিয়নের চৌদ্দঘুড়ী চর এলাকায় নদীর পাড় ঘেঁষে মানববন্ধন ও সমাবেশের আয়োজন করে চর উন্নয়ন কমিটি, নাগেশ্বরী শাখা। এতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেন নয়টি নদীঘেরা ইউনিয়নের হাজারো মানুষ।
সমাবেশে বক্তারা আবেগঘন কণ্ঠে বলেন— “নদীভাঙনে সর্বস্ব হারিয়ে মানুষ আজ পথে বসছে। কিন্তু বছর বছর প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি ছাড়া কোনো কার্যকর পদক্ষেপ আমরা পাইনি। অবিলম্বে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ না হলে চরাঞ্চলকে মানচিত্র থেকেই মুছে ফেলবে নদী।”
চর উন্নয়ন কমিটির আহ্বায়ক ও নাগেশ্বরী উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম রসুল রাজা বলেন—“চরের মানুষ বছরের পর বছর ধরে ঘরবাড়ি হারাচ্ছেন। প্রতিবার শুধু প্রতিশ্রুতি মেলে, কিন্তু বাস্তবায়ন হয় না। এবার আর প্রতিশ্রুতি নয়—আমরা চাই অবিলম্বে কার্যকর ব্যবস্থা।”
জেলা চর উন্নয়ন কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক সফিউল আলম সফি বলেন— “কেবল কথার ফুলঝুরি নয়, এখনই দরকার স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ। তা না হলে হাজারো পরিবার পথে বসবে।”
উপজেলা চর বিষয়ক কমিটির সদস্য সচিব ওমর ফারুক, যুগ্ম আহ্বায়ক জাহিদুল ইসলাম খান, পৌর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আশরাফ হোসেন আপেল, প্রেসক্লাব নাগেশ্বরীর সভাপতি রফিকুল ইসলামসহ স্থানীয় অর্ধশতাধিক নেতা-কর্মী সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন।
সমাবেশে উপস্থিত মানুষ একসঙ্গে শপথ নেন— “নদীভাঙন রুখবই, বাঁচাবই আমাদের অস্তিত্ব।”
প্রতিদিনই নদীর গর্ভে বিলীন হচ্ছে গ্রাম, রাস্তা, স্কুল-কলেজসহ অসংখ্য স্থাপনা। চরবাসীর শেষ প্রশ্ন একটাই—“তাদের আর্তনাদ কি পৌঁছাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীদের কানে?”
এমআই