শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪

তিতুমীর কলেজে চিত্র প্রদর্শনী

রং-তুলির আঁচড়ে পরিবেশ-প্রকৃতি-জীবনের নান্দনিক রূপায়ণ

সোমবার, জুন ৩, ২০২৪
রং-তুলির আঁচড়ে পরিবেশ-প্রকৃতি-জীবনের নান্দনিক রূপায়ণ

মো. মাইদুল ইসলাম:

এক্রেলিকে আঁকা শ্যামবর্ণের ছবিতে শিশুটি নিস্তব্ধ। মাথায় বাটি তাও ওপর হাত দেয়া, মাথা বেয়ে পানি গঁড়িয়ে পড়ছে মুখমন্ডল ও শরীরে। হয়তো তার নিয়তি বারবার তার পরিবারের কান্না দেখে আসছে। আর কান্না সহ্য করতে করতে তার মুখে একটুখানি হাসি ফুটে আছে ঐ দিনের জন্য যে দিন হয়তো সে একটু সুখ খুঁজে পাবে কিন্তু সে জানে তার সুখ ছোঁয়া তার স্বপ্নের সমান! তবে তার মনে হাজার প্রশ্ন কেনো তার সাথে এমনটা হচ্ছে?  এর কী কখনো শেষ আছে? কিন্তু  তার এ প্রশ্ন সাজিয়ে অন্যের কাছে তুলে ধরার মতো কেউ নেই আর এই কারনেই সে নিস্তব্ধ। একটু ছন্নছাড়া টাইপের ছেলেটি। আর সে ছন্নছাড়া ও সেটা গোপন রাখতে গিয়ে তার চাঞ্চল্যেকর চোখে তা প্রকাশ করছে ফেলেছে। কেউ বুঝতে না পারলেও সে অভিব্যক্তি বুঝেছে এক চিত্রশিল্পী। শিল্পী তার চোখের দিকে তাকিয়ে তার পেছনের গল্প ধারনা করার চেষ্টা করেছে ক্যানভাসে। কোনো এক মায়ের এই শিশুর চিত্রটি রঙ-তুলির ছোঁয়ায় নিখুত হাতে ফুটিয়ে তুলেছেন এক্রেলিকের কাজে।  'নিস্তব্ধ' শিরোনামে চিত্রটি এঁকেছেন শিল্পী সারিয়া। যার পেছনে তাকে সময় দিতে হয়েছে ৩১ দিন।  



এমন অনেক চিত্র ঝুলছে তিতুমীর কলেজের শহীদ বরকত মিলনায়তনের দেয়ালে। রং-তুলির ছোয়ায় শিল্পী তার মনের মাধুরি মিশিয়ে গড়ে তুলেছে একেকটি অনিন্দ্য চিত্র। জলরঙ, এক্রেলিকসহ নানা রঙের মিশলে আকাঁ সব চিত্রকর্ম ঝুলছে দেয়ালে দেয়ালে। যেগুলোতে ফুটে উঠেছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের চিত্র, ফিলিস্তিনের আগ্রাসন, ক্যাম্পাস, বাংলার চিরাচরিত রূপ, সবুজ প্রকৃতি ও সৌন্দর্য। সেই সঙ্গে হারিয়ে যাওয়া ঐতহ্য, বাঙালির উৎসব, নগর জীবনের কঠিন বাস্তবতা, প্রকৃতির উপর মানুষের নিয়ন্ত্রণ ও এর প্রভাব, মানুষের না বলা কথা আবেগ-ভালোবাস-দুঃখ,কষ্টের প্রাণ-প্রকৃতি-জীবনের বাস্তব চিত্রও। 

গ্যালারিতে ঘুরতে ঘুরতে আরেকটি চিত্রে দেখা যাচ্ছে, ’চোখ দিয়ে লাল রক্ত ঝড়ে পড়ছে’। কথা হয় এর শিল্পী শাহানা ইফাথ ফারিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, এমন অনেক কথা আছে যা বলতে চাই, কিন্তু আমরা বলতে পারি না। আমাদেরকে চুপ থাকতে হয়, অন্ধ সাজতে হয়। অন্যথায় এই পৃথিবী আমাদের রক্ত কাঁন্না দেয়। এমন নানা না বলা কথা, পরিস্থিতি ফুটিয়ে তুলেছেন  শিল্পী তার রঙ-তুলির আঁচড়ে। প্রায় ৯০ টি ছবি নিয়ে দুইদিনব্যাপী চিত্র প্রদর্শনীতে অংশগ্রহন করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত সাত কলেজের ৫৬ জন শিক্ষার্থী। এবছরই প্রথম তিতুমীর কলেজের বাহিরে অন্য ছয় কলেজের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহনের সুযোগ পায়। চিত্রের পাশাপশি প্রদর্শন করা হয় ক্রাফট, নকশী কাঁথা, ফুলদানি, পালকিসহ আবহমান বাংলার বিভিন্ন সংস্কৃতি।

এর আয়োজক তিতুমীর আর্ট ক্লাব। প্রতিবারের ধারাবাহিকতায় ‘লোকশিল্প’ থিম নিয়ে ক্যাম্পাসে চতুর্থবারের মত চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে ক্লাবটি। ২ জুন সকাল ১০ টায় প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ফেরদৌস আরা বেগম। উদ্বোধনের মাধ্যমে শুরু হওয়া চিত্র প্রদর্শনীর সমাপনী ঘটে ৩ জুন দুপুর ২:৩০ মিনিটে। 

আয়োজনের শেষ দিনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বিজয়ীদের হাতে পুরষ্কার তুলে দেন অধ্যক্ষ অধ্যাপক ফেরদৌস আরা বেগম। আর্ট ও ক্র্যাফট মোট দুটি ক্যাটাগরিতে পুরষ্কার প্রদান করা হয়। আর্ট ক্যাটাগরিতে জয়নুল আবেদীন পুরস্কার পেয়েছেন তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী ফাতেমা আক্তার। সফিউদ্দিন আহমেদ পুরস্কার পেয়েছেন বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী মোছা: মুনিয়া। এস এম সুলতান পুরস্কার পেয়েছেন সৈকত রয় ও কামরুল হাসান পুরস্কার পেয়েছে তানিয়া আক্তার। ক্র্যাফট ক্যাটাগরিতে আনোয়ারুল হক পুরস্কার পেয়েছে মুনাজ্জা হোসেন লাকি ও রশিদ চৌধুরী পুরস্কার পেয়েছে সাদিয়া আক্তার মীম।

পুরষ্কার বিতরণী শেষে অধ্যক্ষ অধ্যাপক ফেরদৌস আরা বেগম বলেন, গতবছরেও আমাদের শিক্ষার্থীরা চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করেছিল। আমাদের শিক্ষার্থীদের মধ্যে যে অসাধরণ প্রতিভা, সৃজনশীলতা আমাকে অভিভূত করেছিল, মুগ্ধ করেছিল। যে কারণে এই বছরে আমি অধিক আগ্রহে অপেক্ষা করছিলাম যে, এবার তারা (তিতুমীর আর্ট ক্লাব) আমাদের কি উপহার দিতে যাচ্ছে। অসাধারণ এই আয়োজনের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।  

প্রদর্শনী সম্পর্কে তিতুমীর কলেজ আর্ট ক্লাবের সভাপতি তানভীন তামান্না রাফা বলেন, ‘এবারের চিত্র প্রদর্শনী শুধু তিতুমীর কলেজে সীমাবদ্ধ নয়, পুরো সাত কলেজ থেকে সাবমিশন পড়েছে। এ চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করতে পেরে আমরা খুবই আনন্দিত।’


প্রদর্শনীতে দুইদিনই দর্শনার্থীদের ভীড় চোখে পড়ে। শিল্পীদের নজরকাড়া চিত্রকর্ম মোহিত করে ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থী ও অতিথিদের।

উল্লেখ্য, তুলির রঙে ক্যাম্পাস রাঙাতে গড়ে সংগঠন সরকারি তিতুমীর কলেজ আর্ট ক্লাব প্রতিবছর এই চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করে থাকনে।

সময় জার্নাল/এমআই 


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল