সাইফ ইব্রাহিম, ইবি প্রতিনিধি:
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের সভাপতি ও সহযোগী অধ্যাপক ড. সঞ্জয় কুমার সরকারের বিরুদ্ধে তার স্ত্রীকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, হত্যার হুমকি ও হত্যা চেষ্টাসহ বিভিন্ন অপকর্মের অভিযোগ উঠেছে।
মঙ্গলবার (৪ জুন) সকাল ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস কর্ণারে সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করে ওই শিক্ষকের বিচারের দাবি জানিয়েছেন স্ত্রী জয়া সাহা ও তার পরিবার। পরে এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোতে লিখিত অভিযোগ জমা দেন তারা।
অভিযুক্ত ওই শিক্ষক পাবনা জেলার চড়াডাঙ্গা উপজেলার সুশান্ত কুমার সরকারের ছেলে। অন্যদিকে তার স্ত্রী জয়া সাহা নাটোর জেলার উপরবাজার উপজেলার রতন কুমার সাহার বড় মেয়ে। তিনি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। সম্প্রতি এল.এল.এম শেষ বর্ষের পরীক্ষা সম্পন্ন করেছেন।
জানা যায়, উচ্চ মাধ্যমিক ২য় বর্ষের ছাত্রী থাকাকালে ২০১৫ সালের ১৬ ডিসেম্বর ড. সঞ্জয় সরকারের সাথে জয়া সাহার বিয়ে হয়। বিয়ের সময় জয়ার বাবা মেয়ের কল্যাণের কথা ভেবে উপহার হিসেবে ২৫ লক্ষ টাকা, ২০ ভরি স্বর্ণালংকার, টিভি, ফ্রিজ সহ প্রয়োজনীয় যাবতীয় ফার্ণিচার প্রদান করে। তবে বিয়ের পরপরই সঞ্জয় ও তার স্ত্রীর মধ্যে মনোমালিন্য শুরু হয়। গত বছরের জুন মাসে স্ত্রীকে জোরপূর্বক শ্বশুরবাড়ি রেখে আসে সঞ্জয়। তারপর থেকে উভয়ই একবছর আলাদা থাকছেন। তাদের সংসারে সাড়ে চার বছরের একটি পুত্র সন্তান রয়েছে। পরে নির্যাতনের বিষয়ে জয়া সঞ্জয়ের বিরুদ্ধে মামলা করলে সেটি বর্তমানে চলমান রয়েছে বলে জানা গেছে।
জয়ার অভিযোগ, বিয়ের পর থেকেই মানসিক নির্যাতনের পাশাপাশি তাকে শারীরিক নির্যাতন করতেন সঞ্জয়। সেন্ডেল, বেল্ট, ঝাঁটা, হাতা, খুন্তি, বেলনা থেকে শুরু করে হাতের কাছে যখন যা পেতেন তা দিয়েই তাকে নির্দয়ভাবে শারীরিক নির্যাতন করতেন। অনেক সময় মারতে মারতে অসুস্থ হয়ে পড়লে গাড়ী ভাড়া করে তাকে বাপের বাড়িতে রেখে আসতো সঞ্জয়। এছাড়া তাকে বিভিন্ন সময় মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হতো। এছাড়া বিয়ের সময় জয়াকে তার বাবার দেওয়া স্বর্ণালঙ্কার বিক্রি করে নিজের নামে জমি কেনা, বিয়ের সময় পাওয়া টাকা দিয়ে চাকরির দেনা শোধ করা, বাপের বাড়ি থেকে টাকা আনতে স্ত্রীকে মারধর করা, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের সাথে অনৈতিক সম্পর্ক ও তাদের শ্লীলতাহানি করা এবং তার সাড়ে চার বছরের সন্তানকেও শারীরিক নির্যাতনসহ বিভিন্ন অভিযোগ করেন তিনি।
মারধর ও হত্যার হুমকির বিষয়ে তিনি বলেন, অনেক সময় মারতে মারতে সঞ্জয় বলতো বাঁচতে চাইলে বাপের কাছ থেকে ট্যাকা নিয়ে আয়। এছাড়া মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে বলতো, ‘তোকে আমি একদিন মেরেই ফেলবো, এমন কায়দা করে খুন করবো সবাই জানবে তুই আত্মহত্যা করেছিস। খুন করেছি জানলেও আমার কিচ্ছু হবে না। আমার হাত অনেক লম্বা, আমার হাতে অনেক পাওয়ারফুল লোক আছে, তোর বাপের কি করার ক্ষমতা আছে?" একদিন তো বটি দিয়ে আমার গলায় কোপ দিতে উদ্যত হয়েছিল। সেদিন গৃহ পরিচালিকা দৌড়ে এসে সজোরে ধাক্কা মেরে সঞ্জয়কে ফেলে না দিলে আজ হয়ত আমি এসব কথা বলারই সুযোগ পেতাম না।
তিনি আরও বলেন, বিয়ের পর কিছুদিন পার হলে সঞ্জয় আমার উপর পাশবিক নির্যাতন শুরু করে আমার জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলে। কারণে অকারণে আমাকে মারধর শুরু করে। তার পাশবিকতার হাত থেকে আমার ছোট ছেলেটিও রক্ষা পাইনি। আমি এই শিক্ষক নামের জ্ঞানপাপীর উপযুক্ত শাস্তি চাই।
জয়ার বাবা রতন কুমার সাহা বলেন, ‘সঞ্জয় আমার মেয়েকে বিয়ের পর থেকে অমানবিক নির্যাতন করেছে। এক বছর আগে মেয়েকে আমার বাড়ি রেখে গেছে। এরপর আর যোগাযোগ করেনি। আমি একজন বাবা হিসেবে এই অন্যায়ের বিচার চাই।’
অভিযুক্ত সহযোগী অধ্যাপক সঞ্জয় কুমার সরকার বলেন, ‘এটা আমাদের পারিবারিক বিষয়। আমি অমার স্ত্রীকে ফিরিয়ে নিতে মামলা করেছি। আমি তার সঙ্গে সংসার করতে চাই। এর বেশি কিছু মন্তব্য করতে চাচ্ছি না।’
প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালে সঞ্জয় কুমারের বিরুদ্ধে বিভাগের এক ছাত্রীকে মানসিক নিপীড়ন ও হুমকির অভিযোগ রয়েছে। এতে ওই ছাত্রী মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। পরে ছাত্রীর বাবার অভিযোগে গঠিত তদন্তে ঘটনার সত্যতা মিললে, ওই শিক্ষককে ভুক্তভোগী ছাত্রীর কোনো কোর্সে সংশ্লিষ্ট থাকতে পারবে না বলে প্রশাসন সিন্ধান্ত প্রদান করেন।
সময় জার্নাল/এলআর