কবি নজরুল কলেজ প্রতিনিধি :
রাজধানীর ঐতিহ্যবাহী কবি নজরুল সরকারি কলেজের বিভিন্ন সংকট ও অবকাঠামো সংকট দূরকরণে বারবার অধ্যক্ষের কাছে গিয়ে সমাধান পাননি শিক্ষার্থীরা।সংকট নিরসনে মানববন্ধন করায় ৫ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কারের জন্য কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন কবি নজরুল সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক আমেনা বেগম।
গত রবিবার কলেজটির শতাধিক শিক্ষার্থী কলেজের প্রধান ফটকের সামনে মানববন্ধন করেন।মানববন্ধন চলাকালে একাধিক শিক্ষক অধ্যক্ষের আদেশে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ধরে অধ্যক্ষের রুমে নিয়ে যায়।পরবর্তীতে মানববন্ধনরত পাঁচ শিক্ষার্থীর আইডি কার্ডের ছবি ছবি তুলে তাদেরকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
বুধবার (০৫ জুন) সকালে এই পাচঁ শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিতে আসলে তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয় গত ৪ জুন অধ্যক্ষ আমেনা বেগম স্বাক্ষারিত এই নোটিশ।
নোটিশটিতে বলা হয়,ধারাবাহিক ভাবে কলেজে অনুপস্থিতি এবং প্রতিষ্ঠানের আইন-শৃংখলা পরিপন্থি কাজের জন্য তাকে কেন বহিস্কার করা হবে না তা আগামী পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে নিম্নস্বাক্ষরকারীর নিকট অভিভাবকের মতামতসহ লিখিতভাবে ব্যাখ্যা প্রদানের জন্য অনুরোধ করা হলো।উল্লেখ্য ব্যাখ্যা সন্তেষজনক না হলে তাকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হতে বহিষ্কার করা হবে।
কারণদর্শানো নোটিশ রবিবার মানববন্ধনে নেতৃত্ব দেওয়া একাদশ শ্রেনির পাঁচ শিক্ষার্থীরা হলেন ব্যবসা শিক্ষা বিভাগের মো.রাব্বি,সিয়াম শুভ,মো. মোনায়েম ফরাজী মুন্না ও মানবিক বিভাগের মো.পাপলু মিয়া ,মুজাহিদ ইসলাম রাফি ।
এই বিষয়ে ভুক্তভোগী মোনায়েম ফরাজী মুন্না বলেন , শ্রেনিকক্ষ সংকট , শ্রেনিকক্ষ সাউন্ড সিস্টেম মেরামত , কলেজের ওয়াশ রুম সংস্কার ,শিক্ষক সংকট, পরিবহন সংকট সহ কলেজের সার্বিক উন্নয়নের দাবিতে একাধিক বার আমরা কলেজ অধ্যক্ষের সাথে দেখা করতে গিয়েছি ।কিন্তু তিনি আমাদের সাথে দেখা করেন নি।আমরা কলেজের অভিযোগ বক্সে আমাদের অভিযোগ গুলো লিখিত আকারে জমা দিয়েছি। তারপরও কোন সমাধান হয়নি।
অভিযোগকারী শিক্ষার্থী আরও বলেন, তিনি শুধু আমাদের সাথে নয় তিনি কোন শিক্ষার্থীর সাথে কথা বলেন না এবং তার রুমে ঢুকতে দেন না।আমরা এর পরই সব রকম চেষ্টা করে আন্দোলনে যাই। গত রবিবার আমরা প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থীদের নিয়ে কলেজ ক্যাম্পাসের সামনে অবস্থান করি । কিন্তু এসময় অধ্যক্ষ বিষয়টি জানতে পেরে কয়েক জন শিক্ষককে পাঠান। তারা এসে আমাদের প্রথমে শিক্ষক মিলাতায়নে ধরে নিয়ে যায়।এর পর অধ্যক্ষের রুমে আমাদের নিয়ে যান এবং আমাদের মানসিক ভাবে নির্যাতন করেন। আমাদের আইডি কার্ড নিয়ে নেন এবং আইডি কার্ডের ছবি তুলে রাখেন।
ভুক্তভোগী আরেকজন শিক্ষার্থীর নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তিনি বলেন, অধ্যক্ষের সামনে ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক পুতুল স্যার আমাদের বলেন যেহেতু এই কলেজে এত সমস্যা তোমাদের তোমাদের টিসি দিয়ে দেই । চলে যাও। এর পরই আমাদের এই নোটিশ দেয়া হলো।
এ বিষয়ে ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক পুতুল চন্দ্র বর্মনের সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে।তিনি ফোন তুলেন নি।
এর আগে একাধিকবার কলেজটির শিক্ষার্থীরা অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য শিক্ষার্থীদের নানা দাবিতে আন্দোলন করে ।শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের দাবি ছিল ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীদের জন্য নিজেস্ব পরিবহন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা, শহিদ শামসুল আলম হল সংস্কার করা ও শিক্ষার্থীদের বাস উপযোগী করে গড়ে তোলা, প্রতিটি একাডেমিক ভবনে ছাত্রীদের কমনরুম, পরিত্যক্ত ডাফরিন হল চালু, আধুনিক ক্লাস রুম ও ওয়াশরুমের ব্যবস্থা করা ,লাইব্রেরিতে নতুন বই সংযোজন সহ ডিজিটালেইজেশন করা,কলেজটির প্রতিটি বিভাগে শিক্ষক সংকট দূরকরণ এবং মানসম্মত ক্যান্টিন পুনরায় চালু করা সহ কলেজের সার্বিক অবকাঠামোর উন্নয়নের দাবি জানান।
কিন্তু এর মধ্যে কোন দাবিই পূরণ হয়নি। তবে ১৭ হাজার শিক্ষার্থীর তোপের মুখে পড়ে বহু বছর ধরে পরিবহন খাতে দেওয়া শিক্ষার্থীদের জমে থাকা টাকা দিয়ে ডেমরা ও রামপুরা রুটে বিআরটিসির দুইটি বাস ভাড়া চালানোর উদ্যোগ নিলেও তাতে করে আয় ব্যয়ের হিসাব নিয়ে আছে শিক্ষার্থীদের মনে নানা প্রশ্ন । শিক্ষার্থীরা বলছে ১৭ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য বাস দুইটি অপ্রতুল । আর বাস দুইটি ভাড়ায় চালাতে ব্যয় হয় তা দিয়ে কয়েকটি নিজেস্ব বাস কেনা যায়।
এবিষয় কলেজটির অধ্যক্ষ আমেনা বেগমের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি এ বিষয়ে আমি মুঠো ফোনে কথা বলতে রাজি না।অধ্যক্ষ আমেনা বেগম ওই গণমাধ্যম কর্মীকে বলেন,আপনি আপনার আইডি কার্ড নিয়ে অফিসে এসে আমার সঙ্গে কথা বলুন।গণমাধ্যম কর্মী বলেন এই বিষয়টা তো আপনি মুঠো ফোনেই বলতে পারেন।পরবর্তীতে তিনি কোন কিছু না বলে ফোনটি কেটে দেন।
সময় জার্নাল/এলআর