নিজস্ব প্রতিবেদক:
বিশ্ব অর্থনীতিক বিপর্যয়ের চাপে পৃষ্ট একটা বাজেট আমাদেরকে এবার করতে হচ্ছে। এবারের বাজেটে পঁচিশ হাজার কোটি টাকা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটা বড় কথা নয়, বড় কথা হচ্ছে বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী অনেকটা আগের মতো রাখা হয়েছে। তাই এ বাজেট গরীবের মুখে হাসি আনবেনা। প্রস্তাবিত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটের ওপর তাৎক্ষণিক মন্তব্য করে এসব কথা বলেছেন অর্থনীতিবিদ ও ন্যাশনাল ব্যুরো অব ইকোনোমিকস রিসার্চ (এনবিইআর) চেয়ারম্যান অধ্যাপক পারভেজ।
অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯৩ হাজার কোটি টাকার বাজেট পেশ করেন।
প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর মন্তব্য দিতে গিয়ে অধ্যাপক পারভেজ বলেন, তারপরে আসে এডিপি। একধরণের কমবেশি এডিপি আমরা রেখেছি। সেই এডিপির টাকা কোথা থেকে আমরা পাবো সে কথা বলার আগে আমাকে বলতে হবে এবার বাজেট ঘাটতি দুই লক্ষ ছাপান্ন হাজার কোটি টাকা। এত বড় ঘাটতি বাজেট। ঘাটতি বাজেট নিয়ে অর্থমন্ত্রীর চিন্তা কি? তিনি চিন্তা করেছেন, ব্যাংকিং খাত থেকে এক লক্ষ সাইত্রিশ হাজার কোটি টাকা ধার নিবেন। ব্যাস, হয়ে গেল? তিনি ধার নিলে ব্যবসায়ীরা কি নিবে, জনগণ কি নিবে, উদ্যোক্তারা কি নিবে? তারমানে এই কাজটির কারণে দেশের অভ্যন্তরীন বানিজ্য সংকুচিত হবে। এরপরে বৈদিশিক সূত্র থেকে এক লক্ষ সাতাশ হাজার কোটি টাকা ধরা হয়েছে। পেলে ভালো কিন্তু আমার মনে হয় বর্তমান জিও পলিটিক্সে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক যে চাপে আছে তাতে এ লোন নাও আসতে পারে।
সঞ্চয়পত্র থেকে পনেরো হাজার কোটি টাকা নেয়া হবে এ বিষয়ে তিনি বলেন, আমি মনে করি এটা একটা ভালো উদ্যোগ। এতে জাতীয় সঞ্চয় বৃদ্ধি পাবে, মানুষের অপচয় কমবে। এবং যে সুদ সরকারকে দিতে হবে সে সুদ জনগন পাবে।
রাজস্ব আদায়ের যে লক্ষ্যমাত্রা এবছর ধরা হয়েছে এ বিষয়ে তিনি বলেন, এনবিআর নাম শুনলে মানুষের ঘুম চলে যায় উপদ্রপে। বাংলাদেশে আরও বেশি করদাতা বাড়ানো উচিৎ, তারচাইতে দুর্ণীতির মাধ্যমে যে সমস্ত করদাতা টিন নিয়ে কেনাবেচা করেছে তাদেরকে ধরতে হবে। এবং লাল ট্যাক্স ইউনিটকে ধরতে হবে। সবচেয়ে বোধগ্য বিষয় হচ্ছে এ দেশে ব্যক্তি পর্যায়ে সর্বোচ্চ কর ২৫% অথচ কর্পোরেট কর হয়তো ৩০ বা বেশি। এটা বৃদ্ধি করতে হবে। ওদেরকে বোঝাতে হবে আপনারা অনেক পেয়েছেন এ সময় ট্যাক্স দিয়ে সরকারকে সাহায্য করেন।
বাজেটে বাজারে কি ধরনের ফল দিবে এ বিষয়ে তিনি বলেন, বাজেট হওয়ার সাথে সাথেই সিন্ডিকেটরা সুযোগ নিবে কারণ ওরা জানে কোনটার কর বাড়ানো হবে। ওরা ইতিমধ্যে এলসি খুলে রেখেছে। তাই সরকারের সদিচ্ছা আছে এবছর অনেক পণ্যর দাম কমানোর যাতে মানুষ খেয়ে-পরে বাঁচে। কিন্তু সিন্ডিকেট সেটাও হতে দিবেনা।
কালো টাকা সাদা করার বিষেয়ে তিনি বলেন, এবার যে কালো টাকা সাদা করার যে কথাটি এসেছে, এটাকে দুই ভাবে এসেছে। অর্থনীতির ছাত্র হিসেবে আমি এটাকে সমর্থন করি। কারণ এই সময়ে আমাদের যে সমস্ত ব্যবসায়ীরা, আমলারা বিদেশে কয়েক হাজার কোটি টাকা পার করেছেন। তারা দেশকে ভালোবাসে। বঙ্গবন্ধু কন্যার ডাকে অনেকেই এখানে টাকা পাঠাবে। কারণ নাহলে দেশের অর্থনীতি ভেঙে পড়বে। তাদেরকে টাকাটা আনার জন্য এবার যে সুযোগ দিয়েছে সেটা আমি অর্থমন্ত্রীর সাথে একমত। যদিও আমি সন্দিহান তারা সুযোগটি কাজে লাগাবে কিনা।
এমআই