রাইসা মেহজাবীন:
ব্যথা- আমাদের জীবনের সাথে যেন ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে আছে। ব্যথার সঙ্গ থেকে মুক্তি মিলাতে আমরা অহরহ খেয়ে নেই পেইন কিলিং ট্যাবলেট, যা সাময়িক দ্রুত শান্তি দিলেও, আজীবনের জন্য শরীরে রেখে যায় ক্ষতিকর প্রভাব, যার পরিণাম ও মাঝে মাঝে ভয়াবহ। কিন্তু আমাদের দৈনন্দিন জীবনে পরিচিত এমন অনেক খাদ্য রয়েছে, যেগুলো প্রাকৃতিক ভাবেই ব্যথানাশক বিভিন্ন উপাদান সমৃদ্ধ এবং পেইন কিলিং ট্যাবলেটের মতো ভয়ানক পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া মুক্ত।
আজ আমরা জানবো এমনই কিছু খাদ্য দ্রব্য সম্পর্কে
হলুদ:
ব্যথা নাশক খাদ্যর তালিকায় প্রথমেই আছে হলুদ।এতে থাকা কারকউমিন নামক একটি উপাদানের কারণে হলুদ রং হয়ে থাকে এই মসলার। আর এতে আছে প্রচুর অ্যান্টিইনফ্লামাটরি উপাদান যা অনেক ক্ষেত্রেই অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধের মতো কাজ করে থাকে। তাই মাংসপেশি এবং শরীরের বিভিন্ন সংযোগ স্থলে ব্যথা উপশমে হলুদ বেশ উপকারী।
চেরি:
লাল লাল চেরি কে আমরা কে না চিনি ! সুন্দর এই ফলটি কিন্তু ব্যথা উপশমে ভীষণ কার্যকরী। চেরিতে উচ্চ মাত্রায় অ্যান্থোসায়ানিন এবং ফ্ল্যাভোনয়েড রয়েছে যা প্রদাহ বিরোধী এবং ব্যথা উপশমকারী প্রভাবের জন্য দায়ী।
লাল আঙুর:
রেসভেরাট্রল নামক একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের উপস্থিতির কারণে এই আঙুরের রং এমন লালচে হয়ে থাকে। আর এই উপাদান পিঠ ব্যথাসহ বিভিন্ন ব্যথা উপশমে সহায়ক।
আনারস:
আনারসে প্রচুর পরিমাণে ব্রোমেলেইন আছে, যা রক্ত সঞ্চালন বাড়ানোর পাশাপাশি পেশিতে টান ধরা এবং প্রদাহ কমায়। বিশেষ করে ইনফ্লমেটরি ডিজিজ আর্থ্রাইটিস-এর ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
টক দই:
কটু গন্ধের জন্য বদনাম থাকলেও বহু গুনে গুণান্বিত এই টক দই নামক খাদ্যটি । পেট ফাঁপা, জ্বলুনি এবং ব্যথা কমাতে দই বেশ উপযোগী। দইয়ের ব্যাক্টেরিয়া হজমে সহায়তা করে ফলে পেটের ব্যথা বা জ্বলুনি কমিয়ে আরাম দেয়। প্রতিদিন এক বাটি দই খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
কফিঃ
কফিতে রয়েছে ক্যাফেইন নামে একটি উপাদান। এটি যন্ত্রণার প্রকোপ কমায়। মাথার যন্ত্রণা কমাতেও দারুণ কাজে আসে ক্যাফেইন। তবে বেশি মাত্রায় কফি খাওয়া একেবারেই উচিত নয়। শরীরে মাত্রাতিরিক্ত ক্যাফেইন প্রবেশ করলে অন্য ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই দিনে এক কাপের বেশি কফি খাওয়া উচিৎ নয়।
পুদিনা পাতাঃ
পুদিনা পাতা চিবানো আমাদের নিঃশ্বাসকে সতেজ করে তুলতে পারে। এতে থাকা মেন্থল পেশীর ঝাঁকুনি রোধে সহায়তা করে। পুদিনা পাতার তেল বিরক্তিকর আন্ত্রিক সমস্যার বিরুদ্ধে কাজ করে। এ তেল মাথা ব্যথা উপশমের জন্যও কার্যকরী।
লবঙ্গ:
লবঙ্গ গুলিতে একটি শক্তিশালী প্রাকৃতিক অবেদনিক ইউজেনল থাকে যা দাঁতে ব্যথা এবং মাড়ির ব্যথার প্রাকৃতিক প্রতিকার হিসাবে কাজ করে।
সালমন, হেরিং, সার্ডিন মাছঃ
উচ্চ পরিমাণে ওমেগা -3 ফ্যাটি অ্যাসিডে ভরপুর মাছ খাওয়া পিঠে ব্যথা উপশম করতে পারে।
মরিচ:
ঝাল মরিচে রয়েছে ক্যাপসাইসিন নামক একটি উপাদান যা বিভিন্ন ধরনের ব্যথানাশক ক্রিমে পাওয়া যায়। এই উপাদান স্নায়ুকে আরাম দেয় এবং ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।প্রতিদিন খাবারের সঙ্গে মরিচ খাওয়ার অভ্যাস করা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
ওটসঃ
আগে অপরিচিত থাকলেও এখন ওটস খুবই পরিচিত একটি খাদ্য। নিয়মিত ওটস খেতে পারলে তলপেটের ব্যথা কমে। কারণ এতে প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেশিয়াম থাকে। এই উপাদানই ব্যথা কমাতে সাহায্য করে
নারকেল তেল:
নারকেল তেলের কিছু প্রাকৃতিক অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য রয়েছে।এটি ব্যথা হ্রাস করতে সাহায্য করে।
অলিভ অয়েল:
অলিওকানথাল, জলপাইয়ের তেলের একটি যৌগ, যা স্টেরয়েডাল অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরিগুলোর সাথে ব্যথার বিরুদ্ধে কাজ করে।
গ্রিন টি, ব্ল্যাক টি ও হোয়াইট টিঃ
গ্রিন টি, ব্ল্যাক টি ও হোয়াইট টি-তে থাকা পলিফেনল্সে রয়েছে অ্যান্টি-ইনফ্লামেটারি প্রপার্টি, যা বাতের ব্যথায় কার্যকরী।
পিনাট বাটার:
পিনাট বাটার এর মধ্যে রেসভেরাট্রল রয়েছে, যা প্রদাহ হ্রাস করে এবং কার্টিলেজ এর সুরক্ষার মাধ্যমে আর্থ্রাইটিসে জয়েন্টে ব্যথা কমাতে পারে।
সয়াবিন:
সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, সয়াতে রয়েছে ‘আইসোফ্লাভোনস যা তাদের অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্যগুলোর জন্য পরিচিত এবং যা বাতের ব্যথা উপশম করতে ও অস্টিওআর্থারাইটিসের লক্ষণগুলোর বিরুদ্ধে কাজ করতে সহায়তা করে।
এ ধরনের খাদ্যর মাধ্যমে আমরা প্রাকৃতিকভাবেই ব্যথার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে পারবো, যা আমাদের বহুদিন সুস্থ থাকতে সহায়ক।
লেখক: রাইসা মেহজাবীন
শিক্ষার্থী, খাদ্য ও পুষ্টি
গভর্নমেন্ট কলেজ অব আপ্লাইড হিউম্যান সায়েন্স।