মো. জাহিদুল হক, চবি প্রতিনিধি:
চট্টগ্রাম পরমাণু শক্তি কেন্দ্রে আয়োজিত হয়েছে আব্দুল জব্বার জ্যোতির্বিজ্ঞান কর্মশালার ১৬তম আসর। এ কর্মশালায় জ্যোতির্বিজ্ঞানের মৌলিক বিষয়াবলির পাশাপাশি কসমোলজি ও মহাকাশবিজ্ঞান নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এ ছাড়া হ্যান্ডস-অন অ্যাক্টিভিটি, স্পেকট্রোস্কোপি ল্যাব পরিদর্শন এবং কুইজ আয়োজন করা হয়।
২৭ থেকে ২৯ জুন তিনদিন ব্যাপী চট্টগ্রামে কর্মশালাটি অনুষ্ঠিত হয়। এতে চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আগত নবম শ্রেণি থেকে স্নাতক পর্যায়ের মোট ৩৪ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন।
কর্মশালার প্রথমদিন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পরমাণু শক্তি কেন্দ্র, চট্টগ্রামের পরিচালক ড. শাহাদত হোসেন, বাংলাদেশ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটির অফিস সেক্রেটারী এবং ন্যাশনাল অ্যাস্ট্রোনমি এডুকেশন কোঅর্ডিনেটর টিমের সদস্য অধ্যাপক ড. উজ্জ্বল কুমার দেব এবং আয়োজন সমন্বয়ক মো. হাসান মাহমুদ । এ দিন বহির্জাগতিক প্রাণের সম্ভাব্যতা নিয়ে আলোচনা করেন বুয়েট এনার্জি ইন্সটিটিউটের পরিচালক ও ন্যাশনাল আউটরিচ কোঅর্ডিনেটর ড. ফারসীম মান্নান মোহাম্মদী। এ ছাড়া জ্যোতির্বিজ্ঞানের ব্যবহৃত স্থানাঙ্ক ব্যবস্থা নিয়ে আলোকপাত করেন চৌধুরী তাসনিম জাহান ও অংশগ্রহণকারীদের নিয়ে হ্যান্ডস-অন অ্যাক্টিটিভিটি পরিচালনা করেন নক-বিডির অ্যাকাডেমিক সদস্য শাফায়েত রহমান।
দ্বিতীয় দিন মহাবিশ্বের অন্তিম পরিণতি নিয়ে আলোচনা করেন ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেড-এর নির্বাহী প্রকৌশলী ফাতেমা জেরিন প্রত্যাশা। স্পেক্ট্রোস্কোপি নিয়ে বিশদ আলোচনা ও ল্যাব প্রদর্শনী পরিচালনা করেন পরমাণু শক্তি কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা জনাব মনীশ দেবনাথ। এ ছাড়া বাহ্যগ্রহ বা এক্সোপ্ল্যানেট এবং জ্যোতির্বিজ্ঞান সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ঘটনা আলোচনা করেন নক-বিডি ও চট্টগ্রাম অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটির অ্যাকাডেমিক সদস্য জান্নাতুল কারিমুন ও ইসরাত সুলতানা ইতু।
শেষদিন অতিথি বক্তা হিসেবে ছিলেন চুয়েট গণিত বিভাগের অধ্যাপক ও ড. উজ্জ্বল কুমার দেব, চবি জামাল নজরুল ইসলাম গণিত ও ভৌতবিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক ও অধ্যাপক ড. অঞ্জন কুমার চৌধুরী। কসমোলজি নিয়ে বক্তব্য দেন চবি পদার্থবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. এ.কে.এম. রেজাউর রহমান, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ আল মাহবুব ও চবি পদার্থবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জনাব নুর মোহাম্মদ ইমন। এ ছাড়া অনলাইনে যুক্ত হন ইউনিভার্সিটি অব কলোরাডো বোল্ডারের রিসার্চ ফ্যাকাল্টি ড. শাহ মোহাম্মদ বাহাউদ্দিন ও ইউনিভার্সিটি অব কানেক্টিকাটের পিএইচডি গবেষক জনাব নিরঞ্জন চন্দ্র রায়। এ দিন কাসমোলজি, ব্ল্যাকহোল ও ওয়ার্মহোল, গ্যালাক্সি, সোলার অ্যাস্ট্রোজিক্স ও স্পেস মিশন নিয়ে নিয়ে ছিল বেশ কিছু আলোচনা। আয়োজনের শেষ অংশে পর্যবেক্ষণমূলক জ্যোতির্বিজ্ঞান ও বাঙালি জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের নিয়ে কথা বলেন চবি গণিত ও ভৌতবিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্রের ডেপুটি রেজিস্ট্রার ও বিজ্ঞান লেখক জনাব শরীফ মাহমুদ সিদ্দিকী।
অনুষ্ঠানের সমাপ্তিপর্বে সম্মানিত অতিথিবৃন্দ কুইজ বিজয়ীদের হাতে পুরষ্কার তুলে দেন। এ সময় বক্তারা শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান ও জ্যোতির্বিজ্ঞান চর্চায় উৎসাহিত করেন এবং জ্যোতির্বিজ্ঞান চর্চা করতে সংগঠনের ভূমিকা নিয়েও আলোকপাত করেন। এরই সাথে বক্তারা চলমান ইন্টারন্যাশনাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিয়নের কোয়াসি-মুন বা চন্দ্রিকা নামকরণ ক্যাম্পেইনে বাংলাদেশ থেকে নাম প্রস্তাবনায়ও শিক্ষার্থীদের উদবুদ্ধ করেন। আয়োজনকারীদের প্রত্যশা, এ কর্মশালার মাধ্যমে উৎসাহী অংশগ্রহণকারীরা উপকৃত হবে ও বাংলাদেশ থেকে অধ্যাপক আব্দুল জব্বার কিংবা জামাল নজরুল ইসলামের মত বিশ্ববরেণ্য জ্যোতির্বিদ উঠে আসবে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে জ্যোতির্বিজ্ঞানের অন্যতম পথিকৃৎ অধ্যাপক মোহাম্মদ আবদুল জব্বারের অবদানের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এবং সবার মাঝে জ্যোতির্বিদ্যার প্রসার ঘটাতে এ বছর তিনটি অঞ্চল- ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রাজশাহীতে আয়োজিত হচ্ছে আবদুল জব্বার জ্যোতির্বিজ্ঞান কর্মশালা এর ১৬তম আসর। কর্মশালার মূল আয়োজক ইন্টারন্যাশনাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিয়নের ন্যাশনাল আউটরিচ কোর্ডিনেটর, বাংলাদেশ (নক-বিডি) অফিস। স্থানীয় আয়োজক হিসেবে সার্বিক তত্ত্বাবধায়নে ছিল চট্টগ্রাম অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটি। সহ-আয়োজক হিসেবে রয়েছে বাংলাদেশ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটি, বাংলাদেশ বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণ সমিতি ও ইউনিভার্স অ্যাওয়ারনেস প্রোগ্রাম।
এমআই