জাহিদুল ইসলাম, রাবি প্রতিনিধি:
সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা ও পোষ্যকোটা বাতিলের দাবিতে মশাল মিছিল করেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ক্রিয়াশীল সাত সংগঠনের নেতাকর্মীরা। বুধবার (১০ জুলাই) সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন মার্কেট থেকে মিছিল শুরু করেন তাঁরা। মিছিলটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিফলক চত্বরে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মিলিত হয়।
এ সময় তারা 'কোটা না সমতা, সমতা সমতা', 'দালালি না রাজপথ রাজপথ রাজপথ', 'কোটা প্রথার বিরুদ্ধে লড়াই হবে একসাথে', আপোষ না সংগ্রাম' সংগ্রাম সংগ্রাম , বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই হবে একসাথে, প্রশ্নফাসের বিরুদ্ধে লড়াই হবে একসাথে','জ্বালো রে জ্বালো,আগুন জ্বালো আগুন জ্বালো, 'এসো ভাই এসো বোন, গোড়ে তুলি আন্দোলনসহ বিভিন্ন স্লোগান দেন।
সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয় সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের আহ্বায়ক ফুয়াদ রাতুল বলেন, আমরা এমন একটা দেশে বাস করি যেখানে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা প্রায় ২৫ লক্ষ। এতো বেকারত্ব থাকা সত্বেও ১০০ টি চাকরির মধ্যে যখন ৩০ টি যখন মুক্তিযোদ্ধার সন্তাননাতিদের দিয়ে দেওয়া হয়, যাদের সংখ্যা দেশের জনসংখ্যার ১ শতাংশও নন, তখনই বিরাট বৈষম্যের সৃষ্টি হয়। পোষ্য কোটা একটি তেলা মাথায় তেল দেওয়ার মতো বিষয়। আমরা এ পোষ্য কোটার বিরোধিতা ঘোষণা করছি। সংখ্যা লঘু জাতিস্বত্তা, নারী, প্রতিবন্ধী,ও অনুন্নত জনপদ কোটা ব্যতীত মুক্তিযোদ্ধা ও পোষ্য কোটা সহ বৈষম্যমুলক কোটার বাতিল চাচ্ছি।
বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রীর সভাপতি শাকিল হোসেন বলেন, শিক্ষার্থীরা যে কোটা সংস্কার আন্দোলন করছে এই আন্দোলনে কোটা সংস্কার খুবই জরুরি। কারণ প্রত্যন্ত অঞ্চলে যে নারীরা আছে এখনো গ্রামীণ সংস্কৃতির কারণে তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত হয়নি। এখনো রাজনৈতিক দলগুলোতে দেখুন সেখানে নারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত হয়নি। তাই আমি মনে করি নারীদের জন্য নূ্ন্যতম কোটা থাকা যৌক্তিক। এছাড়া অনগ্রসর যে জাতিসত্তা যারা আছে যেমন সাওতাল, গারো, চাকমা, ত্রিপুরা তারা এখনও আমাদের মূল জনপদের সাথে সর্বক্ষেত্রে সমান তালে অংশগ্রহণ করতে পারেনি। সুতরাং এই বহুবৈচিত্রের বাংলাদেশে সমতা নিশ্চিতের জন্য এই ক্ষুদ্র জাতিসত্তা এবং নারীদের জন্য নূ্যনতম কোটা রাখা দরকার বলে মনে করি।
নাগরিক ছাত্র ঐক্যের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মেহেদী হাসান মুন্না বলেন, ছাত্র সমাজ কোটা বাতিল চায়নি, তারা সংস্কার চেয়েছিল। তবে সংসদে প্রধানমন্ত্রী রাগান্বিত হয়ে কোটা বাতিল করেন। যারা ফলে আবার ২০২৪ সালে এসে আমাদের আন্দোলন করতে হচ্ছে। বর্তমানে দেশের প্রতিটি সেক্টর দুর্নীতি গ্রাস করেছে। দেশের এসম সিস্টেমের কারনে মেধাবীরা ক্লিনার আর ড্রাইভার হওয়ার জন্য দেশ ছাড়ছে। পুরো সিস্টেম আজ অকেজো হয়ে গেছে। পিএসসি'র মতো একটা প্রতিষ্ঠান থেকে প্রশ্ন ফাঁস হচ্ছে। আমাদের এসব বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে। শুধু কোটা নয়, সকল প্রকার অন্যায়ের বিরুদ্ধেই আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে।
বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক শামিন ত্রিপুরা বলেন, কোটা সংস্কারের এই আন্দোলনকে আমি সাধুবাদ জানাই। ২০১৮ সালে সরকার সকল প্রকার কোটা পদ্ধতি বাতিল করে দেয়। এর ফলে আমরা আরও বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি। এমনিতেই পাহাড়িরা বিভিন্ন দিক দিয়ে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর চেয়ে পিছিয়ে আছে। আমাদের মাতৃভাষার পাশাপাশি অন্য ভাষাতে গিয়ে পড়াশোনাসহ যাবতীয় কাজ করতে হয়। যতদিন আমরা সমতায় না আসতে পারি আমাদের জন্য কোটা পদ্ধতি বহাল রাখতে হবে।
সমাবেশে সঞ্চালনা করেন বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সাংগঠনিক সম্পাদক খন্দকার শাহরিয়ার আলিফ। এসময় ছাত্র ইউনিয়ন, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, নাগরিক ছাত্র ঐক্য, ছাত্র গণমঞ্চ, বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ ও ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
সময় জার্নাল/এলআর