রাবি প্রতিনিধি :
চলমান কোটা বিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহন করায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) এক শিক্ষার্থীকে শিবির আখ্যা দিয়ে মারধরের অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে।
গত মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু হলের ২৩০ নম্বর কক্ষে এ ঘটনা ঘটে। মারধরের পর তাঁকে হল থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে নিরাপত্তা চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী।
অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতারা হলেন রাবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবু, সৈয়দ আমীর আলী হল শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি ফরহাদ হোসেন খান ও নবাব আব্দুল লতিফ হল শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম রেজা। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর নাম মো. মোস্তফা মিয়া। তিনি সমাজকর্ম বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী
অভিযোগপত্র সূত্রে জানা গেছে, গত সোমবার কোটা সংস্কারের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন রেলপথ অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। সেই আন্দোলনে অংশ নেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী মোস্তফা। বিষয়টি ছাত্রলীগ নেতা ফরহাদকে জানান ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী মাসুদ রানা। পরে ফরহাদ ভুক্তভোগীকে ফোন করে দেখা করতে বলেন। তাতে শঙ্কিত হয়ে মোস্তফা বিষয়টি তাঁর বিভাগের সিনিয়র আরিফ মাহমুদকে জানান।
পরে গত মঙ্গলবার আরিফের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. মু. শহীদুল্লাহ একাডেমিক ভবনের সামনে দেখা করেন তিনি। এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন আরিফের বন্ধু ও অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা শামীম রেজা। এরপর তাঁকে (শামীম) বিস্তারিত বললে তিনি ফরহাদকে ফোন দিয়ে বলেন, ‘শিবির ধরছি, নিয়ে আসব নাকি?’ পরে তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয়ের টুকিটাকি চত্বরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাঁকে অশ্রাব্য ভাষায় গালাগাল করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ২৩০ নম্বর কক্ষে নিয়ে যান তাঁরা। কক্ষটি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবুর।
ওই কক্ষে নিয়ে যাওয়ার পর ‘শিবির’ আখ্যা দিয়ে মোস্তফা মিয়ার ফোন চেক করতে শুরু করেন মোস্তাফিজুর রহমান বাবু। তবে তাঁর ফোন চেক করে শিবিরের সঙ্গে কোনো সম্পৃক্ততা পাওয়া পায়নি। কিন্তু ফেসবুকে কোটা আন্দোলন নিয়ে পোস্ট দেখে প্রচণ্ড রেগে যান ছাত্রলীগ সভাপতি। একই সঙ্গে আন্দোলনে যাওয়ার কারণে তাঁকে বেধড়ক মারধর শুরু করেন। এ সময় তিনি ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে বলেন, ‘তুই শিবির করিস, স্বীকার কর।’
তাঁরা কিছু সময় বিরতি দিয়ে দিয়ে মোস্তফাকে মারতে থাকেন। মার খেয়ে শামীম রেজাকে জড়িয়ে ধরলে তিনি ধাক্কা দিয়ে বাবুর কাছে পাঠিয়ে দেন। এ সময় বাবু তাঁকে লাঠি দিয়ে এলোপাতাড়ি মারতে থাকেন। একপর্যায়ে ফারহাদ তাঁকে লাথি-ঘুষি মারতে শুরু করলে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা বাকি কয়েকজনও মারতে থাকেন। ৮ থেকে ১০ মিনিট মেরে কিছু সময় বিরতি নিয়ে আবার মারধর শুরু করেন। এভাবে দুই ঘণ্টার বেশি সময় ধরে তাঁকে নির্যাতন করেন ছাত্রলীগ নেতারা
মারধর চলাকালে ছাত্রলীগ নেতা ফারহাদ ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর কানে কানে বলেন, ‘তুই শিবির করিস, এটা স্বীকার কর, তাহলে ছেড়ে দিব। আর তোর ডিপার্টমেন্টে কে কে শিবির করে এটা বল ছেড়ে দিব। নির্যাতনের একপর্যায়ে তাঁকে পুলিশে দেওয়ার ভয় দেখানো হয়। পরে ছাত্রলীগ নেতারা তাঁকে হল ছাড়ার হুমকি দিয়ে বলেন, ‘তুই আজই হল ছেড়ে দিবি।’ পরে তাঁর সঙ্গে ছাত্রলীগ সভাপতির এক অনুসারী পাঠিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ শামসুজ্জোহা হলের গণরুম থেকে তাঁকে বের করে দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী মোস্তফা মিয়া বলেন, ‘এ ঘটনার পর আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। হল থেকে নামিয়ে দিলে আমি আবাসন সংকটে পড়ে যাই। বাধ্য হয়ে বাড়ি চলে এসেছি। বর্তমানে আমি বাড়িতে আছি।’
অভিযোগের বিষয়ে রাবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবু বলেন, ‘বিষয়টি আমি অবগত নই। কিছুক্ষণ আগেই শুনলাম। এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে তারপর বলতে পারব।’
অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা ফরহাদ হোসেন খান বলেন, ‘মোস্তফা মিয়া নামের কোনো শিক্ষার্থীকে আমি চিনি না। এমনকি অতীতেও তাঁর সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ হয়নি। আর এ ধরনের কোনো ঘটনার সঙ্গে আমি সম্পৃক্ত নই।’
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক বলেন, ‘ওই শিক্ষার্থীর হয়ে তিনজন আমাকে অভিযোগপত্র দিয়েছেন। ঘটনার সত্যতা যাচাইয়ের জন্য তিনজন সহকারী প্রক্টরকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সত্যতা পাওয়া গেলে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
এমআই