নিজস্ব প্রতিবেদক:
বিখ্যত ভাষাতত্ত্ববিদ, ভাষাসৈনিক, শিক্ষাবিদ ও সাহিত্যিক ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দের এই দিনে তিনি ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হলের পাশে সমাহিত করা হয়। ভাষাক্ষেত্রে তার অমর অবদানকে সম্মান ও শ্রদ্ধা জানাতে ওই বছরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ঢাকা হলের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় শহীদুল্লাহ হল।
পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর দেশের রাষ্ট্রভাষা নিয়ে বিতর্ক শুরু হলে বাংলাকে রাষ্ট্র ভাষা করার পক্ষে তিনি জোরালো ভূমিকা পালন করেন। ফলে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের পথ অনেকখানিই প্রশস্ত হয়।
প্রাচ্যে অন্যতম ভাষাবিজ্ঞানী, ভাষাবিদ, ভাষাসৈনিক, পণ্ডিত, দার্শনিক, বাংলা সনের সংস্কারক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমোরিটাস অধ্যাপক ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ স্মৃতিরক্ষায় ৬ টি প্রস্তাব দিয়েছেন ভাষা আন্দোলন স্মৃতিরক্ষা পরিষদ।
১. রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে প্রতিবছর তার জন্ম ও মৃত্যুদিবস যথাযথ মর্যাদায় পালন।
২. ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্-কে শ্রেষ্টভাষাবিদ ঘোষণা।
৩. শহীদুল্লাহর সমাধিস্থল চত্ত্বর-কে সম্প্রসারিত করে দৃষ্টিনন্দন করে তোলা।
৪. শহীদুল্লাহর জীবনীগ্রন্থ ও রচনা সমগ্র বাংলা একাডেমি কর্তৃক পুনঃপ্রকাশ।
৫. শহীদুল্লাহর সংস্কারকৃত / প্রণীত বাংলা বর্ষপঞ্জি ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা।
৬. মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায় পাঠ্যপুস্তকে তার প্রবন্ধ অন্তর্ভুক্ত করা।
উল্লেখ্য, ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর জন্ম ১৮৮৫ খ্রিষ্টাব্দের ১০ জুলাই পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগনায়। যশোর জিলা স্কুলে শিক্ষকতা দিয়ে কর্মজীবন শুরু। পরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে দীনেশচন্দ্র সেনের তত্ত্বাবধানে শরতচন্দ্র লাহিড়ী গবেষণা-সহকারী হিসেবে কাজ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত ও বাংলা বিভাগে প্রভাষক পদে যোগ দেন।
ঘরোয়া পরিবেশে উর্দু, ফারসি ও আরবি এবং স্কুলে সংস্কৃত শিখেছিলেন। ইউরোপ গিয়ে শেখেন প্রাচীন ভারতীয় বৈদিক সংস্কৃত, প্রাকৃতসহ বিভিন্ন ভাষা।
তিনি ‘চর্যাপদাবলি’ বিষয়ে গবেষণা করে প্যারিসের সোরবোন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভারতীয় মুসলমানদের মধ্যে প্রথম ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন। এ বছরই ধ্বনিতত্ত্বের মৌলিক গবেষণার জন্য তিনি প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপ্লোমা লাভ করেন। ১৯৩৭ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যক্ষ হন, ১৯৪৪ খ্রিষ্টাব্দে অবসর নেন।
১৯৬৭ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ইমেরিটাস নিযুক্ত হন। তার কাজের মধ্যে অভিধান তৈরি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। তার রচনার মধ্যে আছে, ‘সিন্দবাদ সওদাগরের গল্প’, ‘ভাষা ও সাহিত্য, ‘বাঙ্গালা ব্যাকরণ’, ‘দীওয়ান-ই-হাফিজ’, ‘রুবাইয়াত-ই-উমর খইয়্যাম’, ‘পদ্মাবতী’, ‘বাঙ্গালা ভাষার ইতিবৃত্ত’ প্রভৃতি।
এমআই