এহসান রানা, ফরিদপুরঃ মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রথম পর্যায়ে তৈরি করা ৫০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের মধ্যে ফরিদপুরের সালথা উপজেলা সদরে একটি উদ্বোধন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় গণভবন থেকে ভার্চুয়াল মাধ্যমে এ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তবে উদ্বোধনের আগেই মসজিদ ভবনের ফ্লোরে থাকা টাইলস ফেটে-উঠে যাওয়ায় ও পিলার এবং দেওয়াল বাকা হওয়ায় ব্যাপক ক্ষোভ প্রকাশ করেন উদ্বোধন অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া কয়েকজন অতিথি। মসজিদ নির্মাণে অনিয়মের বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবী জানান তারা।
প্রকল্প সুত্রে জানা গেছে, সারাদেশে প্রতিটি জেলা সদর ও উপজেলা পর্যায়ে একটি করে একই ডিজাইনের মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেয় বর্তমান সরকার। প্রধানমন্ত্রীর গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প এটি। সারাদেশের মত সালথা উপজেলা পরিষদের পাশে সাড়ে ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে মডেল মসজিদের তিনতলা ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়। এস রহমান এ্যাসোসিয়েশন নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজটি করেন।
স্থানীয় মুসল্লিদের অভিযোগ, এই মডেল মসজিদের নির্মাণ কাজ শুরু থেকেই নানারকম অনিয়ম দেখা গেছে। এখানে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে। ঢালাই কাজে মোটা ডোমার বালু ব্যবহারের পরিবর্তে লোকাল বালু, নিম্নমানের পাথর ও ইট ব্যবহার করা হয়েছে। মার্বেল পাথরের টাইলস লাগানোর কথা থাকলেও নিম্নমানের চায়না টাইলস এনে লাগানো হয়েছে। তাছাড়া দক্ষ মিস্ত্রি দিয়ে নির্মাণ কাজ করা হয়নি। তাই উদ্বোধনের আগেই ফ্লোরের বিভিন্নস্থানের টাইলসগুলো উঠে যাচ্ছে ও ফেটে চৌচির হচ্ছে। ভবনের কয়েকটি পিলার ও দেওয়াল বাকা হয়ে রয়েছে। যা উদ্বোধন অনুষ্ঠানে আশা অথিতিরা দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
সালথার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের অতিথি উপজেলা চেয়ারম্যান মো. ওয়াদুদ মাতুব্বর বলেন, মডেল মসজিদ নির্মাণ প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প। সেই প্রকল্প নিয়ে অনিয়ম মেনে নেওয়া যায় না। প্রধানমন্ত্রীও মেনে নেবেন না। আমরা নির্মাণ কাজটি ঘুরে দেখলাম। নিয়মমাফিক কাজটি করা হয়নি। কাজে ব্যাপক অনিয়ম চোখে পড়েছে। যেকারণে উদ্বোধনের আগেই নিম্নমানের টাইলসগুলো ফেটে যাচ্ছে। প্রায় প্রতিটি টাইলসই ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। ফ্লোর ও দেওয়ালের বিভিন্নস্থানে লাগানো টাইলস ধরলেই হাতের সাথে উঠে আসছে। পিলারগুলো ও দেওয়াল বাকা হয়ে আছে। সাড়ে ১২ কোটি টাকার কাজে এত অনিয়ম আসলেই মেনে নেওয়া যায় না। বিষয়টি নিয়ে আমরা উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলবো।
উপজেলা ইসলামিক ফাউন্ডিশনের সমন্নয়কারী মামুদল হাসান বলেন, মসজিদ নির্মাণ কাজে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে। ধর্মীয় কাজ হওয়া সত্বেও মসজিদের কাজে ব্যবহার হওয়ায় সব মালামালই নিম্নমানের। যে কারণে দেওয়ালে হাত রাখলেও পলেস্তা ও চুন হাতের সাথে ওঠে আসে। উদ্বোধন অনুষ্ঠানে আসা সকলেই মসজিদ নির্মাণ কাজের খারাপ দৃশ্য নিজ চোখে দেখে গেছেন।
ফরিদপুর ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সহকারী পরিচালক আশরাফ আলী বলেন, মসজিদ নির্মাণ কাজে কিছু অনিয়ম আমরা দেখেছি। ঠিকাদার এসব ঠিক করে দিতে চেয়েছেন।
কাজে অনিয়মের ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে এ কাজের ঠিকাদার আতিকুর রহমান বলেন, উদ্বোধন করা হবে বলে তাড়াহুড়ো করে দ্রুত কাজ শেষ করতে হয়েছে। এজন্য অনেক কাজই সঠিক বা শিডিউল মত করা সম্ভব হয়নি। তিনি বলেন, তবে এখনও সময় আছে। আমি সব অসংগতি দূর করে দেব।
গণপূর্ত বিভাগের নির্মাণ কাজের তদারক কারী দায়িত্ব প্রাপ্ত (ইঞ্জিনিয়ার) এস ও রাহাত জানান, মসজিদের কাজ সঠিকভাবে করা হয়েছে, কোথায় ও কোন ত্রুটি নাই ।
সময় জার্নাল/এমআই