শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪

বাকৃবিতে ড্রেনেজ ব্যবস্থায় ঘাটতি, ক্ষয় ক্ষতির সম্মুখীন সাধারণ শিক্ষার্থীরা

মঙ্গলবার, জুলাই ১৬, ২০২৪
বাকৃবিতে ড্রেনেজ ব্যবস্থায় ঘাটতি, ক্ষয় ক্ষতির সম্মুখীন সাধারণ শিক্ষার্থীরা

সিদ্ধার্থ চক্রবর্তী, বাকৃবি প্রতিনিধি: 

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) ঐতিহ্যবাহী দুটি হল শাহজালাল হল এবং শহীদ শামসুল হক হল। দীর্ঘদিন ধরেই হল দুটির পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থায় যথেষ্ট ঘাটতি দেখা দিয়েছে। যে কারণে হালকা বৃষ্টি হলেই ভোগান্তিতে পরতে হয় শিক্ষার্থীদের, ভারী বৃষ্টি হলে তো বেডে পর্যন্ত পানি উঠে যায়। কিন্তু এ সমস্যার সমাধানে এখন পর্যন্ত হল প্রশাসন কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে কোনো ফলপ্রসূ উদ্যোগ গ্রহণ করতে দেখা যায়নি।

জানা যায়, শাহজালাল হলে বছরের অন্যান্য ঋতুতে অনাকাঙ্ক্ষিত সাধারণ বৃষ্টি হলেই হলের সব ব্লকের নিচ তালার ঘরগুলোতে পানি ঢুকতে দেখা যায়। বর্ষার সময়ে এই সমস্যা চূড়ান্ত আকার ধারণ করে। ড্রেনেজ ব্যবস্থায় ঘাটতির কারণে বৃষ্টি হলেই পানি জমে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ঘরে পানি ঢুকে শিক্ষার্থীদের আসবাবপত্র এবং বই-খাতা ক্ষয় ক্ষতির সম্মুখীন হয়। 

এ বিষয়ে শাহজালাল হলের চতুর্থ বর্ষের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী জানান, 'প্রতিবছর অল্প বৃষ্টিতেই সম্পূর্ণ হলের নিচতলার সব ঘরে পানি প্রবেশ করে। নীচ তলার বেশিরভাগ রুমেই ৫ থেকে ৮ জন করে শিক্ষার্থী থাকে। পানি প্রবেশের ফলে তাদের ভোগান্তির শেষ থাকেনা। বছরের পর বছর একই সমস্যা থাকলেও, এখনো এই সমস্যা সমাধানে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয় নি। রুমে জায়গা সংকুলান না থাকায়, বিভিন্ন উৎসব কিংবা কোনো কারণে ছুটি থাকলে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকবার সময়ে বৃষ্টি হলে খাটের নীচে ব্যাগে রেখে যাওয়া কাপড়, বই-খাতায় পানি প্রবেশ করে কাপড়,  বই-খাতা সবই নষ্ট করে ফেলে। এছাড়াও এই সমস্যার কারণে গতবছর বৃষ্টির সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় সব বর্ষের শিক্ষার্থীদের ফাইনাল পরীক্ষাও পেছাতে হয়েছে।'

এই ব্যাপারে শাহ্জালাল হলের প্রভোস্ট ড. তানভীর রহমান বলেন, সময় এবং স্থাপনার বিবেচনায় শাহজালাল হল বাকৃবির দ্বিতীয় প্রাচীন হল। পরবর্তীতে, রাস্তাঘাটের উন্নয়ন এবং অন্যান্য স্থাপনা কর্মের কারণে বর্তমানে শাহজালাল হল রাস্তার পরিপ্রেক্ষিতে একটু নীচু অবস্থানে রয়েছে। ফলত, যেদিক দিয়ে পানি নিষ্কাশিত হওয়ার কথা, সেটা না হয়ে, পানি হল কম্পার্টমেন্টে উল্টো প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়াও, শাহজালাল হলের পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা হল নির্মাণের পরবর্তী সময় কিংবা অনতিদূর অতীতেও ঠিকঠাক ছিলো। হলের প্রত্যেকটি ব্লকের পাশ দিয়ে যেই ড্রেনগুলো আছে, সেগুলো ছোট মাপের এবং কম গভীরতাসম্পন্ন। এই সবকিছু মিলিয়ে, বর্তমানে শাহজালাল হলের পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা প্রায় অপ্রতুল। তাই, শাহজালাল হলের পানি নিষ্কাশনের অপ্রতুলতা একটি দীর্ঘমেয়াদী সমস্যায় পরিণত হয়েছে। অতীতে, শাহজালাল হলের একজন প্রভোস্ট মহোদশ এই সমস্যা নিরসনের তাগিদে ব্লক করিডোরের সামনে ড্রেনের আগ দিয়ে ১০-১৫ ইঞ্চির ইটের গাথুনি দিয়েছিলেন। ফলত, অল্প বৃষ্টিতে নীচ তলার ঘরগুলোতে আর পানি প্রবেশের আশঙ্কা ছিলো না। কিন্তু, বিগত ২-১ বছরে আরও স্থাপনার কাজ হয়েছে, রাস্তার কাজ হয়েছে, তাই, শাহজালাল হলে পানি নিষ্কাশনের অন্যান্য পথগুলোও বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এই কারণেই, বিশেষ করে গতবছর এবং এই বছর নীচতলায় হাঁটু সমান পানি হয়ে গিয়েছিলো। 

তিনি আরও বলেন, শাহজালাল হলের প্রভোস্ট হিসেবে নিযুক্ত হবার পর যথাযথ পানি নিষ্কাশনের জন্যে আমি বেশকিছু ব্যবস্থা নিয়েছি এবং উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। দায়িত্ব গ্রহণের ৩ মাসের মধ্যেই চীফ ইঞ্জিনিয়ার বরাবর ড্রেনেজ ব্যবস্থাকে নতুন করে সাজানের জন্য আমি চিঠি দিয়েছি। চিঠিতে আমি আবেদন করেছিলাম, শহীদ নাজমুল আহসান হলের পাশ দিয়ে যেই ড্রেনটি গিয়েছে, সেটির সঙ্গে যেনো একটি নতুন ড্রেন তৈরির মাধ্যমে শাহজালাল হলের ড্রেনেজ ব্যবস্থাকে সংযুক্ত করা হয়। এটি নিয়ে প্রশাসন অদ্যাবধি কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি দেখে ২০২৩ সালে আমি ছাত্র বিষয়ক উপদেষ্টাকে বিষয়টি সম্পর্কে অবগত করি এবং তিনিও নিজের তরফ থেকে চেষ্টা করবার আশ্বাস দেন। পরবর্তীতে, ব্যাপারটি বর সেভাবে অগ্রসর হয়নি। 

শাহজালাল হলের সামনে দিয়ে যে পানিটুকু নিষ্কাশিত হয় সেটি গ্রাজুয়েট ট্রেনিং ইনস্টিটিউট (জিটিআই) এর সামনে গিয়ে জমা হয়। এরমধ্যেই, ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনের নতুন ড্রেনেজ ব্যবস্থার কাজ শুরু হয় এবং ছাত্র বিষয়ক উপদেষ্টা আমাকে শাহজালাল হলের ড্রেনেজ ব্যবস্থাটিকে সিটি কর্পোরেশনের নতুন এই ড্রেনেজ ব্যবস্থার সঙ্গে সংযুক্ত করবার পরামর্শ দেন। বর্তমানে, এই প্রক্রিয়াতেই আমরা এগিয়েছি। এছাড়াও, হলের পানি নিষ্কাশনের জন্য ৪ টি ব্যবস্থা করা আছে। হলের সামনের অংশের জলাবদ্ধতার সমস্যা দূর করতে এমন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে যেনো পানি ঈশা খাঁ লেকে গিয়ে জমা হয়। শাহজালাল হলের নতুন গেট করবার সময়ে ব্যক্তিগত উদ্যোগ নিয়ে আমি গেটের সামনের ড্রেনের উচ্চতা বাড়িয়ে নিয়েছি। ফলত, হল এলাকার বাইরের যে অংশটুকু সেখানের পানি নিষ্কাশন জনিত সমস্যা মোটামুটি সমাধান করে ফেলেছি। হলের পূর্ব দিকে শহীদ জামাল হোসেন হলের সাথে সংযুক্ত নিষ্কাশন জাংশন দিয়ে পানি বের করবার ব্যবস্থা করা হয়েছে। হলের দক্ষিণ দিকের জলাবদ্ধতা নিরসনে সিটি কর্পোরেশনের ড্রেনেজ ব্যবস্থার সাথেই হলের নিষ্কাশন ব্যবস্থা সংযুক্ত করবার একটি অস্থায়ী বন্দোবস্ত করবার চেষ্টা করেছি যেখানে দুটো নিষ্কাশন জাংশন পরিষ্কার করবার ব্যবস্থা করেছি। সিটি কর্পোরেশনের ড্রেনেজ ব্যবস্থাটি চালু না হবার কারণে, হলের পশ্চিম অংশের জমে থাকা পানি জিটিআই এর সামনে গিয়ে জমা হয়। মূলত, সেখান থেকেই পানি হলের ভিতরের দিকে উপচে পরে, এটাই বড় সমস্যা। আশা করছি, সিটি কর্পোরেশনের ড্রেনেজ  ব্যবস্থাটি চালু হলেই হলের সামনের দিকে জলাবদ্ধতার সমস্যাটি আর থাকবে না এবং সামগ্রিক ভাবে হলের জলাবদ্ধতার সমস্যাটি ৫০ শতাংশের অধিক সমাধান হয়ে যাবে। এছাড়াও, হলের পেছনের দিকের পানি নিষ্কাশেনের জন্য শেষ মোড়ের পাকা রাস্তার নিচ দিয়ে একটি ড্রেনেজ ব্যবস্থা গিয়েছে, যেটার সঙ্গে হলের পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা সংযুক্ত করবারও চেষ্টা করছি। এই দুটো কাজ সম্পূর্ণ হয়ে গেলেই হলে আর জলাবদ্ধতার সমস্যা থাকবে না বলে আশা করছি। 

অন্যদিকে, ঝুম বৃষ্টি হলেই, শহীদ শামসুল হক হলের উঠোন পর্যন্ত পানি উঠবার আশঙ্কা বিরাজ করে। বিশেষত, ড্রেনে ময়লা জমে থাকার কারণে বৃষ্টি হবার পরে জল নিষ্কাশনে সমস্যার সৃষ্টি হয়। এছাড়াও, হলের সামনে পাকা রাস্তা হয়েছে যেটি হলের পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার সাথে সমন্বয় করে করা হয়নি। তাই সাধারণ বৃষ্টি হলেই অধিকাংশ সময়ে জলাবদ্ধতা তৈরি হতে দেখা যায় বলে জানান শিক্ষার্থীরা।

শহীদ শামসুল হক হলের চতুর্থ বর্ষের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী জানান, 'ড্রেনেজ ব্যবস্থায় ঘাটতির কারণে টানা ২-৩ ঘণ্টা বৃষ্টি হলে, ময়লা জমে ড্রেন বন্ধ হয়ে যাবার দরুণ পানি বের হবার উপায় থাকে না। দেখা যায়, নিরন্তর বৃষ্টি হলে নিচতলার উঠোন পর্যন্ত পানি জমে যায়।'

এই ব্যাপারে শহীদ শামসুল হক হলের প্রভোস্ট ড. এস. এম. লুৎফুল কবীর বলেন, যখন শহীদ শামসুল হক হলের পানি নিষ্কাশনের গাঠনিক কাজ সম্পন্ন করা হয়, সেসময়ে আমি হলের প্রভোস্ট হিসেবে নিযুক্ত ছিলাম না। এছাড়াও, হলের সামনে নতুন করে পাকা রাস্তা করা হয়েছে। ফলত, রাস্তার পরিপ্রেক্ষিতে শামসুল হক হল একটু নীচু অবস্থানে রয়েছে। তাই, বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা তৈরি হবার একটা সম্ভাবনা থেকেই যায়। এটি একটি দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা। বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার প্ল্যানের সাথে হলের পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার গাঠনিক সমন্বয়ের অভাবেই এই সমস্যাটি সৃষ্টি হয়েছে। 

তিনি আরও জানান, তবে জলাবদ্ধতা নিরসনে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক ভাবেই প্রকৌশল অংশে একটি চিঠি দিয়ে পানি নিষ্কাশনের সমস্যার কথাটি জানাবো যে, বৃষ্টি হলেই ডিএমপির পানি জমে থাকে। 

হলের পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থায় ঘাটতি সম্পর্কে পূর্বে তিনি অবগত ছিলেন কিনা বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে প্রতিউত্তরে তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে জল উঠোন পর্যন্ত উঠবার ঘটনা সম্পর্কে আমি অবগত ছিলাম না। গতবছর, টানা কদিন বৃষ্টির দরুণ সব হলের নীচ তলা পর্যন্তই পানি উঠে গিয়েছিলো, তখন হলের নীচতলায় কিংবা উঠোন পর্যন্ত পানি উঠা সম্পর্কে আমার অভিজ্ঞতা হয়।

এমআই


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল