সময় জার্নাল প্রতিবেদক : স্বাস্থ্যখাত নিয়ে টিআইবির প্রকাশিত রিপোর্ট মিথ্যা ও ভুল তথ্য সংবলিত উল্লেখ করে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, ‘করোনার সংকটকালে দেশের স্বাস্থ্য খাত যখন বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়েছে তখন টিআইবি দেশের স্বাস্থ্য খাতকে নিয়ে একটি অসত্য রিপোর্ট তুলে ধরেছে। টিআইবির রিপোর্টটি আগাগোড়াই ভুল তথ্য সংবলিত।’
শনিবার রাজধানীর জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে করোনাযুদ্ধে জীবনদানকারী জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. মাহমুদ মনোয়ারের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত দোয়া মাহফিলে ভার্চুয়ালি অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে বসে টিআইবি স্বাস্থ্যখাত নিয়ে মনগড়া সমালোচনা করেছে উল্লেখ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘করোনার দুঃসময়ে টিআইবি মাঠে নেমে কোনো কাজ করেনি। মাঠে কাজ করেছে দেশের স্বাস্থ্যখাতের চিকিৎসক, নার্সসহ অন্যান্য ফ্রন্টলাইন যোদ্ধারা। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত রুমে বসে তারা মুখস্থ বিদ্যার মতো ঢালাওভাবে স্বাস্থ্য খাতের সমালোচনা করেছে।’
টিআইবির সমালোচনা করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘টিআইবি বলেছে, দেশে কোভিড টেস্টিং সুবিধা বৃদ্ধি করা হয়নি। অথচ দেশে কোভিড টেস্টিং কেন্দ্র মাত্র একটি থেকে এখন ৫১০টি করা হয়েছে। টিআইবি বলেছে, হাসপাতালে করোনার বেড সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়নি, অথচ এখন দেশে করোনা বেড সংখ্যা ১৫ হাজারেরও বেশি। কিছুদিন আগেও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন হাসপাতালে প্রায় এক হাজার নতুন কোভিড ডেডিকেটেড বেড বৃদ্ধি করা হয়েছে, যেখানে প্রায় সবই সেন্ট্রাল অক্সিজেন সুবিধাপ্রাপ্ত এবং সেখানকার অর্ধেক সংখ্যাতেই আইসিইউ সুবিধা রয়েছে। টিআইবি বলেছে, দেশে আইসিইউ বেড সংখ্যা বাড়েনি। অথচ করোনার শুরু থেকে এ পর্যন্ত দেশে ৩০০ ভাগ আইসিইউ বেড সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়েছে। আগে দেশে মাত্র ২০০টির মতো আইসিইউ বেড ছিল। আর এখন আইসিইউ বেড সংখ্যা এক হাজারটিরও বেশি হয়েছে। টিআইবি ভারতের সঙ্গে টিকা ক্রয় চুক্তিতে অস্বচ্ছতার কথা বলেছে যা মোটেও সত্য নয়। ভারতের সঙ্গে চুক্তি থেকে শুরু করে সবকিছু ছিল স্বচ্ছ পানির মতো পরিষ্কার ও উন্মুক্ত। দেশের সব মানুষই জানে ভারতের সঙ্গে কী কী ছিল চুক্তিতে এবং কেন ভারত চুক্তির অবশিষ্ট টিকা দিতে পারেনি।
‘এ ছাড়া টিআইবি বসুন্ধরা আইসোলেশন সেন্টার প্রসঙ্গে, টিকার প্রায়োরিটি সেট করা বা বিদেশগামী যাত্রীদের সেবাদানের যে সমালোচনা করেছে তা আগাগোড়াই মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এমনকি টিকা প্রদান কার্যক্রম যখন গোটা দেশেই প্রশংসিত হয়েছে তখন টিআইবি সেটি নিয়েও সমালোচনা করেছে। দেশে মাত্র একটি হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন ব্যবস্থা ছিল। এখন ১৩৪টি হাসপাতালে স্থাপিত হয়েছে। টেলিমেডিসিন সেবার মাধ্যমে মানুষ ঘরে বসেই করোনার চিকিৎসা পেয়েছে। প্রায় ২০ হাজার চিকিৎসক, নার্সসহ নতুন লোকবল নিয়োগ করা হয়েছে। সুতরাং, স্বাস্থ্যখাতকে নিয়ে টিআইবির এই মনগড়া মিথ্যা রিপোর্টটি একেবারেই অগ্রহণযোগ্য।’
স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘স্বাস্থ্যখাত নিয়ে টিআইবি কেবল সমালোচনা করার জন্যই সমালোচনা করেছে। কিন্তু করোনা কেন বৃদ্ধি পাচ্ছে সে বিষয়ে কোনো মন্তব্য তারা করেনি। কারণ, তারা করোনা নিয়ন্ত্রণে কোনো প্রচার বা ভূমিকাই রাখেনি।’
টিকা ক্রয় নিয়ে চীনের সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়েছে। চীনের পক্ষ থেকে দ্রুতই এ বিষয়ে পরবর্তীতে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলে সরকারের প্রত্যাশা রয়েছে বলেও জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী। অন্যান্য দেশের সঙ্গেও ফলপ্রসু আলোচনা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
স্বাস্থ্যখাতে দুর্নীতির অভিযোগ করাটা এখন অনেকেরই একটি ‘ফ্যাশনে’ পরিণত হয়েছে উল্লেখ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘স্বাস্থ্যখাতের দুর্নীতির কথাটি এখন একটি ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। অথচ বেসরকারি হাসপাতালের টেস্টিং জালিয়াতি, একজন ড্রাইভার বা নিম্নপদস্ত কর্মচারীর দুর্নীতি বা বিচ্ছিন্ন কোনো কর্মকর্তার মাধ্যমে অস্বচ্ছতার খবর ছাড়া কেউ স্বাস্থ্যখাতের বড় কোনো দুর্নীতি দেখাতে পারেনি। এক্ষেত্রে যারাই স্বাস্থ্যখাতে অনিয়ম করেছে তাদেরকেই আইনের আওতায় এনে বিচার করা হয়েছে।’
স্বাস্থ্যমন্ত্রী চিকিৎসক ডা. মাহমুদ মনোয়ারের মৃত্যুবার্ষিকীতে মরহুমের আত্মার শান্তি কামনা করেন ও তাঁর পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।
জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের পরিচালক মীর জামাল উদ্দিনের সভাপতিত্বে দোয়া মাহফিলে বিশেষ অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব লোকমান হোসেন মিয়া, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক এ বি এম খুরশিদ আলম, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক রোকেয়া সুলতানা প্রমুখ।
সময় জার্নাল/এসএ