জাহিদুল ইসলাম, রাবি প্রতিনিধি:
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাথে সংহতি প্রকাশ এবং দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে চলমান হামলা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে ঐক্যবদ্ধভাবে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার দুপুর ১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিফলকের সামনে নিপীড়ন বিরোধী ছাত্র-শিক্ষক ঐক্যের ব্যানারে এই অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন তাঁরা।
এসময় শিক্ষকেরা, দেশে বৈষম্য নিরসন করে সুবিচার প্রতিষ্ঠা, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোতে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও আন্দোলন থেকে গ্রেফতারকৃত শিক্ষার্থীদের অবিলম্বে মুক্তি দেয়ার দাবি সহ বিভিন্ন দাবি উল্লেখ করেন। এবং সেই সাথে শিক্ষার্থীদের বর্তমান আন্দোলনের সাথে একাত্মতা পোষণ করেন।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সাথে একাত্মতা পোষণ করে পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব বলেন, বৈষম্যের বিরুদ্ধে ইনসাফের পক্ষে যেই রাষ্ট্র এবং সমাজের সুবিচার নেই সেই রাষ্ট্র এবং সমাজের কোনো ভবিষ্যৎ নেই। আমরা এখানে দাঁড়িয়েছি শুধুমাত্র ইনসাফের জায়গা থেকে, আমরা সকলের জন্য সুবিচার চাই, সকলের জন্য মর্যাদা চাই। যারা এই সুবিচার এবং মর্যাদা পথে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছেন। তাদের জন্যও সুবিচার ও মর্যাদা চাই। যারা এটার প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছেন, তারা জানেন না তারা তাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুবিচার থেকে বঞ্চিত করছেন। আজকে যারা সুবিচারের পক্ষে দাঁড়ানোর সাহস রাখে তারা এই সময়ের মুক্তিযোদ্ধা। কারণ একাত্তরে গিয়ে আবার মুক্তিযুদ্ধ করার সুযোগ আর নেই, এবং রাজাকারী করারও সুযোগ নেই। এই সময়ে মানুষের অধিকারের পক্ষে যাঁরা দাঁড়িয়েছে তারা প্রত্যেকে মুক্তিযোদ্ধা। আর মানুষের অধিকার হরণের পক্ষে যারা দাঁড়িয়েছে তারা প্রত্যেকেই রা'জা'কা'র।
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক আবদুল্লাহ-আল মামুন বলেন, নির্বাহী ক্ষমতাবলে হঠাৎ করে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দেওয়া এবং এমনভাবে বন্ধ করা হচ্ছে যে শিক্ষার্থীরা নিরাপদে বাড়ি পৌঁছাতে পারবে কিনা তার কোন দায় দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিচ্ছে না। আমরা এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা দেখতে চাই না। আমরা মনে করি আমাদের শিক্ষার্থীরা যতক্ষণ পর্যন্ত নিরাপদ বোধ না করছে তদেরকে এখানে নিরাপদে রাখা তাদের খাদ্য এবং অন্যান্য সহযোগিতা দেওয়া শিক্ষক সমাজের দ্বায়িত্ব। এটা শুধুমাত্র প্রোক্টরিয়াল বডির বিশ্ববিদ্যালয় না, শুধু ভিসির বিশ্ববিদ্যালয় না। এটা সকল শিক্ষকের বিশ্ববিদ্যালয় এবং সকল শিক্ষার্থীর বিশ্ববিদ্যালয়।
মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক মো. ফরিদুল ইসলাম বলেন, আমি ছাত্রদের দাবির সাথে একাত্মতা পোষণ করছি। যাদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং গোটা বাংলাদেশের যত ছাত্রের নামে অন্যায়ভাবে মামলা দেয়া হয়েছে সেটা অবিলম্বে তুলে নেয়া হোক। কিছুদিন পর ছাত্র-ছাত্রীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে ফিরে আসবে। ছাত্র-ছাত্রীরা ক্যাম্পাসে আসলে দ্বিতীয় বার যেনো হয়রানির শিকার না হয় সেই নিশ্চয়তা আমরা চাচ্ছি। যতক্ষণ পর্যন্ত আমার ছাত্রছাত্রীরা নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারবে না ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা এই নির্যাতন বিরোধী শিক্ষকরা রাস্তায় আছি, তাদের সঙ্গে আছি। এই জীবন যদি চলেও যায় তবুও তাদের সঙ্গে থাকবো।
অবস্থান কর্মসূচির সঞ্চালনা করেন রাকসু আন্দোলন মঞ্চের আহ্বায়ক আব্দুল মজিদ অন্তর। এসময় বিভিন্ন বিভাগের প্রায় শতাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
এমআই