শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪

তিতুমীর কলেজ ছাত্রাবাসে দুর্বৃত্তদের ভাঙচুর, বিপাকে শিক্ষার্থীরা

শনিবার, জুলাই ২৭, ২০২৪
তিতুমীর কলেজ ছাত্রাবাসে দুর্বৃত্তদের ভাঙচুর, বিপাকে শিক্ষার্থীরা

সাইদুল ইসলাম সাঈদ, জিটিসি প্রতিনিধি :

“গায়ে পড়নের এক জোড়া পোশাক বাদে আর কিছুই এখন নেই। সেদিনের রাতের তাণ্ডবে হারিয়েছি নিজের একাডেমিক সার্টিফিকেটও।”— এভাবেই নিজের দুর্দশার কথা বলছিলেন তিতুমীর কলেজের আক্কাছুর রহমান আঁখি হলের শিক্ষার্থী রিয়াদ মুন্সি।

সম্প্রতি কোটা আন্দোলনের সুযোগে তিতুমীর কলেজের আক্কাছুর রহমান আঁখি হল দুর্বৃত্তদের দ্বারা ভাঙচুর ও লুটপাটের শিকার হয়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছে হলের আনুমানিক চার শতাধিক শিক্ষার্থী!

১৮ জুলাই বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আক্কাছুর রহমান আঁখি হলে এই ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা নিশ্চিত করেছেন।

শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, দুর্বৃত্তরা হলের বিভিন্ন কক্ষের তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে। তারা শিক্ষার্থীদের পোশাক, কাথা, বালিশ, সার্টিফিকেট, মোটরসাইকেল পুড়িয়ে নষ্ট করেছে। এছাড়াও হলের আসবাবপত্র, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম এবং অন্যান্য মূল্যবান জিনিসপত্র ভাঙচুর ও লুট করেছে।

আঁখি হলের ৩০৪ নাম্বার কক্ষের শিক্ষার্থী প্রান্ত হোসেন ফয়সাল। নতুন হলে ওঠার জন্য তিনি বাড়ি থেকে এনেছিলেন দশ হাজার টাকা। ১৮ জুলাই দুর্বৃত্তদের হামলায় সেই টাকা খুইয়েছেন। তিনি বলেন, "শুধু টাকা নয়, তাদের তাণ্ডব থেকে রেহায় পায়নি আমার ব্যবহৃত সাইকেলসহ কোনো কিছুই। হল বন্ধ থাকায় আপাতত বাড়িতে এসেছি"

ছাত্রলীগের উপ-ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক রিয়াদ মুন্সি আঁখি হলে থাকতেন। তিনি বলেন, "গায়ে পড়নের এক জোড়া পোশাক বাদে আর কিছুই এখন নেই। সেদিনের রাতের তাণ্ডবে হারিয়েছি নিজের একাডেমিক সার্টিফিকেটও। হল বন্ধ থাকায় বর্তমানে মহাখালীতে থাকছি।"

হলের অন্যান্য শিক্ষার্থীরাও একই সুরে জানান তাদের দুঃখের কথা। আঁখি হলের চারপাশ জুড়ে তাদের প্রায় ২০-৩০টি মোটরসাইকেলের বিচরণ ছিল। দুর্বৃত্তদের আগুনে ঝলসে গেছে তাদের সখের বাহন।

সরেজমিনে দেখা যায়, আঁখি হলের ভেতরের দিক বর্তমানে ধ্বংসস্তূপ। হল বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের অনেকেই চলে গেছেন নিজ বাড়িতে। যারা রাজধানীতে রয়ে গেছেন তারাও কষ্ট করে থাকছেন বন্ধু-বান্ধব কিংবা আশেপাশের মেস বাসা কিংবা হোস্টেলে।

এদিকে, ১০ জুলাইয়ের পর আনুষ্ঠানিকভাবে কোটা আন্দোলনের কর্মসূচি শাহবাগে ছিল বলে জানান তিতুমীর কলেজ বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের একাধিক শিক্ষার্থী।

১৮ জুলাইয়ের পাওয়া তথ্য মতে, তিতুমীরের কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থী মহাখালীতে বিচ্ছিন্নভাবে ছিল। বাকিরা আশেপাশে অবস্থানরত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী। তবে কারা এই ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে তা সুনিশ্চিত করা যায়নি।

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের দেয়া তথ্য মতে, তিতুমীরে পড়ে তিতুমীরের সম্পদ নষ্ট করবে এরা কখনও তিতুমীরের শিক্ষার্থী হতে পারে না।

শিক্ষার্থীরা ঠিক কবে নাগাদ আবার ছাত্রাবাসে উঠতে পারবে এই বিষয়ে আক্কাছুর রহমান আঁখি ছাত্রাবাসের দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক প্রভাষক কাজী মোহাম্মদ আল-নূর বলেন, "শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালু হওয়ার পর ধ্বংসপ্রাপ্ত হল ঠিক করতে সময় লাগবে। তারপর আমরা বলতে পারব কবে হোস্টেল চালু হবে।"

আঁখি হলের এমন পরিস্থিতিতে নতুন হলে শিক্ষার্থীরা কবে নাগাদ উঠতে পারবে জানতে তিতুমীর কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ফেরদৌস আরা বেগমের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।

তবে শুক্রবার গণমাধ্যমে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অধ্যক্ষ বলেন, "আমাদের ডেডিকেটেড ইন্টারনেট সার্ভার লাইন ছিল সেটি দুর্বৃত্তরা ধ্বংস করেছে। সিসি ক্যামেরা, হার্ড ডিস্কসহ প্রায় দুই কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আমরা একটি মামলা করেছি এবং আমাদের কলেজে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের জন্য আরও পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।"

তিতুমীর কলেজের উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক মোঃ মহিউদ্দিন আঁখি হলের বিষয়ে বলেন, "আঁখি হলে এখন ওঠা যাবে না। আমরা শিক্ষার্থীদের শেখ জামাল ছাত্রাবাসে ওঠাবো। কলেজ খুললেই শিক্ষার্থীদের সাক্ষাৎকার নিয়ে টাকা জমা নিয়ে নতুন হলে তাদের স্থানান্তর করব।"

তিতুমীর কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোঃ রিপন মিয়া বলেন, "বন্ধ হলে আগুন লাগিয়ে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করা হয়েছে। এখন এই ক্ষতি পূরণের দায়িত্ব যদি সরকার নেয়, তাহলে হলের শিক্ষার্থীদের জন্য সুবিধা হবে। আমরাও খুশি হবো, যদি সেই সহযোগিতা প্রদান করেন। ক্যাম্পাস বর্তমানে বন্ধ। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে, ক্যাম্পাস খুললে হলের ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে আমরা অধ্যক্ষের নিকট একটি আবেদন করব।"

তিতুমীর কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হক জুয়েল বলেন, "অধ্যক্ষকে জানিয়েছি যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আমরা সকলে এর সুষ্ঠু বিচার চাই। এরকম জঘন্যতম ঘটনা যেন তিতুমীর কলেজকে নিয়ে কেউ আর করতে সাহস না পায়। আমরা আমাদের হলের শিক্ষার্থীদের পাশে সবসময় থাকব। আমরা তাদের সাথে সর্বদা যোগাযোগ রাখছি। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকও পাশে দাঁড়ানোর অঙ্গীকার করেছেন।"

সময় জার্নাল/এলআর


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল