শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪

শিশু তামিমতো কোন আন্দোলনে যায়নি, তাহলে কেন তাকে মরতে হলো?

মঙ্গলবার, জুলাই ৩০, ২০২৪
শিশু তামিমতো কোন আন্দোলনে যায়নি, তাহলে কেন তাকে মরতে হলো?

এহসান রানা, ফরিদপুর প্রতিনিধি:

ঢাকায় মর্মান্তিকভাবে গুলিতে নিহত শিশু তামিমের পরিবারে চলছে শুধুই আহাজারি।  ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার হামিরদী ইউনিয়নের খাপুরা গ্রামে তার বাড়ি। ওই গ্রামের হতদরিদ্র রিক্সাচালক জুয়েল শিকদারের একমাত্র পুত্র সন্তান তামিম শিকদার(১০)কে হারিয়ে শোকে স্তব্ধ সমস্ত এলাকাবাসী। তাদের একটাই প্রশ্ন  তামিমতো কোন আন্দোলনে যায়নি। তাহলে কেন তাকে মরতে হলো?

জানা যায়, রাজধানীর  রামপুরা প্রাইমারি স্কুলের ৩য় শ্রেণির ছাত্র তামিম শিকদার (১০) বন্ধুদের সাথে বল খেলতে গিয়েছিল ১৯ জুলাই (শুক্রবার) বিকেলে। ওইদিন রামপুরায় কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে  সংঘর্ষের সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায় শিশুটি। হতদরিদ্র  রিকশাচালক বাবা একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে শোক বইছেন বুকে। মা-বাবা সহ  পুরো পরিবারে বইছে শোকের মাতম। ওইদিন  সহপাঠীদের সামনেই বুকে গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে শিশু তামিম। হাসপাতাল থেকে লাশ পেলেও টাকার অভাবে তার লাশ ভাঙ্গার গ্রামের বাড়িতে এনে দাফন করতে পারেননি তারা।  

জুয়েল শিকদার রিক্সা চালিয়ে জীবিকার জন্য ১৫ বছর আগে পরিবার নিয়ে ঢাকায় যান। সেখানে রামপুরা এলাকায় বসবাস করেন। অভাব-অনটনের মধ্যে রিকশা চালিয়ে তিনি সংসার চলাতেন। নিজের বলতে জায়গা-জমি ঘর-দরজা কিছুই  না থাকায় গ্রামের বাড়ি খাপুরা গ্রামে মাঝে মধ্যে এসে অন্যের ঘরে থাকতেন। 

গুলিতে নিহত তামিমের বাবা জুয়েল শিকদার জানান, আমাদের বাসার আশপাশের মহল্লার ছোট ছোট শিশুরা মিলে প্রতিদিনের মত বিকেলে  রাস্তার পাশে মাঠে ফুটবল  খেলতে যায়। গত শুক্রবার (১৯ জুলাই) বিকেল ৩টার দিকে তামিম সহপাঠীদের নিয়ে রামপুরা এলাকায় ফুটবল খেলতে যায়। তার পাশেই রাস্তার উপর কোটা সংস্কার আন্দোলনের ছাত্র ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষ চলছিল । সকল শিশুরা রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে এই দৃশ্য দেখছিল।

তিনি আরো  জানান, অন্যান্য শিশুদের মাধ্যমে জেনেছি যে হঠাৎ তামিম চিৎকার দিয়ে লুটিয়ে  পড়ে। সবাই দেখে তামিমের বুক থেকে রক্ত বের হচ্ছে। তারা আমাদের বাসায় এসে খবর দিলে আমরা দৌড়ে গিয়ে দেখি তামিমের বুকে একটি গুলি লেগেছে। তামিমকে রিকশায় করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে তামিমকে ভাড়া বাসার সামনে নিয়ে আসি এবং ওই দিনই রাত ১২টার দিকে রামপুরা কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

তামিমের চাচা মিরাজ শিকদার বলেন, আমার বড় ভাই জুয়েল শিকদার অনেক গরিব মানুষ। ১৫ বছর আগে তিনি  বাড়ি থেকে ঢাকা রামপুর এলাকায় গিয়ে ভাড়া বাসায় বসবাস করেন। সেখানে মা, বোন, স্ত্রী ও একমাত্র সন্তান তামিমকে নিয়ে রামপুরা এলাকায় রিকশা চালিয়ে সংসার চালাতো। বছরে ২/১ বার ভাঙ্গার খাপুরা গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে আসতো। শুক্রবার বিকেলে সংবাদ পাই, আমার ভাতিজা তামিমের বুকে গুলি লেগেছে। পরে আমার ভাই ও ভাবিসহ সকলে তামিমকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে ডাক্তাররা তামিমকে মৃত ঘোষণা করেন। মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে ও দেশের পরিস্থিতি খারাপ দেখে আমরা কেউ ঢাকায় যেতে পারিনি।

তিনি বলেন, আমার ভাতিজা তামিমকে হারিয়ে তার দাদি, ফুপু বাবা-মাসহ সবাই এখন পাগলের মতো হয়ে গেছে।  শুনেছি সরকার নাকি অনেককে সহযোগিতা  করছে। কই সরকার থেকে তাদের কোনো ধরনের সহযোগিতা করেনি। লাশ গ্রামের বাড়িতে আনার মতো তাদের কোনো সামর্থ্যও ছিল না। আমরা ভাঙ্গা থেকে টাকা পাঠাবো, তারও কোনো ব্যবস্থা ছিল না। পরে ওই দিন রাত ১২টার দিকে রামপুরা কবরস্থানে তামিমকে দাফন করা হয়েছে। 

এমআই 


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল