আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ :
গেল রাতে (বুধবার দিবাগত রাত) রাত ১১টার পর থেকেই স্যোশাল মিডিয়ার বরাতে ঢাকা মহানগরীর কয়েকটি জায়গা থেকে সংঘবদ্ধ ডাকাতের কবলে পড়ার খবর ছড়িয়ে পড়ছিলো। বিষয় প্রথমে ততটা ভীতি না ছড়ালেও রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নগরির আরো বেশ কিছু এলাকা থেকে একই রকম খবর আসতে শুরু করে। যা নাগরিকদের মনে রীতিমতো আতংক তৈরী করে ফেলে।
এরই মধ্যে নগরীর ইসিবি এলাকা, মোহাম্মদপুরের বসিলা এলাকায় ডাকাতির ঘটনায় নাগরিকদের ফেববুক লাইভ আরো নিরাপত্তা ভীতি সঞ্চার করে দেয়। এলাকায় এলাকায় মসজিদের মাইক থেকে ডাকাতির খবর দিয়ে সতর্ক করা শুরু হয়। এরপরই লাঠি-সোটা হাতে নগরবাসী মধ্যরাতে ডাকাতি প্রতিরোধে রাস্তায় নেমে আসে।
আমার নিজের এলাকাতেও এমনভাবে মসজিদের মাইক থেকে ডাকাতি প্রতিহতের আহ্বান জানানোর পর এলাকাবাসীর সঙ্গে নেমে যাই রাস্তায়। দলবদ্ধভাবে আতংকিত এলাকাবাসী সড়কগুলোতে টহল দিতে থাকে। মোড়ে মোড়ে অবস্থান নেয়। এই মধ্যে ফেসবুকের মাধ্যমে নগরীর বেশ কয়েক জায়গায় ডাকাতির কবলে পড়ার ও দুষ্কৃতিকারী ও ডাকাত দলের সদস্যদের ধরে সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দেয়ার ছবি ও ভিডিও প্রকাশ হতে থাকে। তাদের সেই সব ছবি আবার অধিকাংশই বুঝে হোক কিংবা না বুঝেও নিজ নিজ এলাকায় ডাকাতি করতে এসে ধরা পড়েছে বলে মর্মে প্রচার করেন। সবচাইতে বড় সমস্যা বিভিন্ন এলাকাভিত্তিক গ্রুপে একই ছবি ও ভিডিও দেখতে পাওয়া যায়। সবাই বলছেন ওই ডাকাত দল তাদের এলাকা থেকে গ্রেফতার হয়েছে কিংবা ওই ডাকাতির ঘটনা তাদের এলাকার।
এসব খবরের মধ্যেই আক্রান্ত হওয়ার খবর নিশ্চিত হতে ও আক্রান্তদের উদ্ধার করতে স্বেচ্ছাসেবী ছাত্র-জনতা বিভিন্ন এলাকায় টহল দিতে থাকে। কিন্তু প্রাপ্ত খবর আর সরজমিনে দেখা যায় মূলত: এলাকাবাসীর মাঝে অতিরিক্ত আতংকের কারনেই এমন পরিস্থিতির তৈরী হয়েছে। তাছাড়া বিভিন্ন জায়গা থেকে যে হারে ডাকাত আতঙ্কে সেনাবাহিনীর জরুরি নাম্বার গুলিতে কল যাচ্ছে তাতে করে সেনাবাহিনীও নিশ্চয়ই দ্বিধায় পড়েছে আসলে কোনটি সত্য আর কোনটি গুজব। বিভিন্ন গ্রুপে দেখলাম অনেকে বলছে সেনাবাহিনীর নম্বরগুলিতে ফোন ঢুকছে না বন্ধ বলছে। আসলে একসাথে এত জায়গা থেকে কল আসলে সেটি এমন সমস্যা হওয়াটাই স্বাভাবিক মনে হচ্ছে। সার্বিক দিক বিচার করলে একসাথে সব জায়গায় এমন ডাকাতি কিংবা সব জায়গা থেকেই অতিরঞ্জিত ডাকাতির গুজব পরিকল্পিত বলেই মনে হচ্ছিল।
ছাত্র-জনতার এমন একটি বিজয়ের মুহূর্তে দেশের রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুট থেকে শুরু করে পরবর্তী বিভিন্ন জায়গায় বিশৃঙ্খল তৈরীর কার্যক্রম, নগরীর থানাগুলিতে অগ্নি সংযোগ, পুলিশের হঠাৎ কর্মবিরতি কিংবা রাতের এই ডাকাতি সবই একই সুতোয় গাঁথা বলে মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে ইচ্ছে করেই অনিয়ন্ত্রিত আর অরক্ষিত করে নগরবাসীকে রেখে দিয়ে তাদেরকে বিজয়ের প্রকৃত স্বাদ থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। তবে যে তারুণ্য আমাদের নতুন একটি স্বস্তির সময় এনে দিচ্ছে, তারা কিন্তু বসে নেই। ট্রাফিকহীন নগরীকে যেভাবে তারা নিয়ন্ত্রণ করেছে কোন প্রশিক্ষণ ছাড়াই কিংবা আন্দোলন সংগ্রাম এবং লুটপাটে অপরিচ্ছন্ন নগরীকে যেভাবে তারা ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে পরিচ্ছন্ন করে তুলেছে সেটি সত্যি প্রশংসার দাবি রাখে।
দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী যে দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়ে নতুন একটি বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে কাজ শুরু করতে যাবে সেই মুহূর্তে এই ধরনের বড় সঙ্ঘবদ্ধ ডাকাতির চেষ্টায় আক্রমণ কিংবা সংঘবদ্ধ গুজব উভয়ই নতুন করে চক্রান্তকারীদের নীল নকশাকে প্রস্ফুটিত করে দিচ্ছে। সুতরাং এই মুহূর্তে সতর্কতার কোন বিকল্প নেই। আমরা সকলেই সতর্ক হই, চোখ-কান খোলা রাখি। গুজব না ছড়িয়ে প্রকৃত পদক্ষেপে অংশ নেই। স্বপ্নের বাংলাদেশ বিনির্মাণে সকলের সচেতনতাই আমাদের কাম্য।
শুধু তাই নয়, ফজর নামাজের পর বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা ডাকাত আতঙ্কে থাকা এলাকাবাসীর মধ্য থেকে পাহারাদাররা যে তথ্য দিলেন তা আরেকটি অশনি সংকেত। নগরীর প্রধান সড়ককে কেন্দ্র করে যেসব পথশিশুসহ ছিন্নমূল মানুষ রয়েছে, যাদের অধিকাংশই সারাক্ষণ নেশায় আক্রান্ত থাকেন। যাদেরকে সারাদিন ফুটপাতের উপর দেদারছে ঘুমাতে দেখা যায় কিংবা ডেন্ডি নামক নেশা নিয়ে ছোটাছুটি করতে দেখা যায় তারা আজ বিভিন্ন স্থানে আক্রান্ত হয়েছেন। এরা সাধারণত সারারাত চুরি কিংবা ছিনতাই এর মত অপরাধের সাথে জড়িত থাকে এবং দিনে নেশা করে ঘুমায়। রাতে ডাকাত আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ার পর অপরিচিত কাউকে পেলেই এলাকার লোকজন তাদের আটকে মারপিট করেছে। সেই অপরিচিতদের কবলে পড়েছে বেশিরভাগ এই শ্রেণীর মানুষগুলো। সুতরাং আমার মনে হয়েছে আগামীর রাষ্ট্র ব্যবস্থায় এই শ্রেণীর মানুষদের একটি সুনির্দিষ্ট সমাধান প্রয়োজন।
লেখক : সাংবাদিক ও গণযোগাযোগ স্পেশালিস্ট
এসজে/এমএম