বিশেষ প্রতিনিধি : দেশের চলমান পরিস্থিতিতে সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে ছাত্র-জনতা, নাগরিক সমাজ, রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি ও সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।
আজ (শুক্রবার) বিকাল ৪টায় উত্তরার দিয়াবাড়ি মেট্রোরেল ভবনে অবস্থিত সেনা ক্যাম্পে সভাটি অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক প্রতিনিধি, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, সেক্টর কল্যাণ সমিতি নেতৃবৃন্দ, সিটি কর্পোরেশনের প্রতিনিধি, উত্তরা বিভাগ পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
মতবিনিময় সভায় নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের উদ্দেশ্যে লেফটেন্যান্ট কর্ণেল তাহসিন বলেন, নাগরিকদের মাঝে বিরাজমান আতংক কাটাতে আমরা পেট্রোলিংসহ পর্যায়ক্রমে পুলিশের কার্ক্রমগুলো চালু করতে চাই। আপাতত এ অঞ্চলের থানাগুলোর প্রাথমিক কাজ শুরু হয়েছে আজ থেকে। তাই পুলিশ বাহিনী যাতে সুষ্ঠুভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে সেজন্য আপনারা যারা নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিবৃন্দ রয়েছেন দেশের কল্যাণে সকলের সার্বিক সহযোগিতা প্রয়োজন।
তিনি বলেন, প্রতিনিয়তই আমরা প্রচুর কল পাচ্ছি। কোথাও ডাকাতি, কোথাও চুরি-ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা ঘটছে। সেসব অপরাধীদের যাতে আইনের আওতায় নিয়ে আসা যায় সেজন্য থানার কার্যক্রম শুরু করা খুবই প্রয়োজন।
সভায় ডিএমপি উত্তরা বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মির্জা সালাহউদ্দীন বলেন, ৫ আগস্টের আগের পুলিশ আর এখনকার পুলিশ এক নয়। সকলের সহযোগিতা পেলে আমাদের পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা থানায় থানায় কার্যক্রম শুরু করতে পারবে।
মতবিনিময় সভায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আব্দুল আজিজ বলেন, আমরা দেখতে পাচ্ছি উত্তরার বিভিন্ন সেক্টরগুলোতে কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্ব রয়েছে। এছাড়া ফুটপাত দখল করে চাঁদাবাজিতেও হাতবদল হচ্ছে। এছাড়াও আমাদের যারা ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় কাজ করে যাচ্ছে তাদের সার্টিফিকেশনের মাধ্যমে ভবিষ্যতের জন্য তৈরি করার বিষয়টি বিবেচনা করা উচিত।
সভায় উপস্থিত বিএনপি প্রতিনিধি হিসেবে এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, আমরা সার্বিকভাবে সেনাবাহিনী ও পুলিশকে সহযোগিতা করব। বৃহত্তর উত্তরায় বিএনপি পরিচয়ে যদি কেউ চাঁদাবাজি কিংবা কোন অপরাধ করে তাহলে তাদেরকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে তুলে দিবেন। পাশাপাশি উপস্থিত জামায়াতে ইসলামের উত্তরা পশ্চিম থানার আমির মকবুল আহসান ও জাতীয় পার্টি তুরাগ থানার সভাপতি আলাউদ্দিন আলাল একমত পোষণ করেন।
সাংবাদিকদের পক্ষ থেকেও বর্তমান পরিস্থিতির আলোকে পরযবেক্ষ তুলে ধরেন সিনিয়র সাংবাদিক আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ। সভায় উপস্থাপিত পরযবেক্ষণগুলো আমলে নিয়ে ট্রাফিকিং, ফুটপাত, স্ট্যান্ড ও পরিবহন কেন্দ্রিক চাঁদাবাজি এবং বাজার ব্যবস্থা মনিটরিংয়ে সেনাবাহিনীর সতর্ক দৃষ্টি রয়েছে বলে জানান লেফটেন্যান্ট কর্ণেল তাহসিন। এছাড়া সেক্টর কল্যাণ সমিতি, মসজিদ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন কমিটিগুলো সম্পর্কে ওঠা অভিযোগগুলোর সমাধানে নিয়ে স্থানীয়ভাবে উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানান।
তাছাড়া এলাকাবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিতে এলাকা ভিত্তিক সমন্বয় কমিটি করে কারক্রম পরিচালনা কাঠামো দাঁড় করাতে সহযোগীতা কামনা করেন। তিনি বলেন, আমরা গত কয়েকদিনে দেখেছি যে, নিরাপত্তা বিষয়ে আতংকে কিভাবে গুজব ছড়িয়ে যায়। এসব গুজব সতর্কতার পরিবর্তে আরো বেশি করে আতংক ছড়ায়। সুতরাং নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চয়তা দিতে পুলিশিং কার্যক্রম শুরু অতি জরুরী। আমি আশা করবো এজন্য ছাত্র-জনতাসহ নাগরিক সমাজ এগিয়ে আসবে।
সভার শেষে দিয়াবাড়ি আর্মি ক্যাম্পের মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কর্ণেল তাহসিন বলেন, সবকিছুর পাশাপাশি এখানকার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, মন্দির-প্যাগোডা-গির্জা ইত্যাদি স্থাপনা সুরক্ষিত রাখতে হবে। এসময় তিনি উত্তরায় সেক্টরভিত্তিক (সেক্টর ১,৩,৫,৭- ০১৩১৮৩৭১৫৫৪, সেক্টর ৯,১০,৪- ০১৩১৮৩৭১৫৫৫, সেক্টর ১২,১৩,১৪- ০১৩১৮৩৭১৫৫৬, সেক্টর ১৫,১৬,১৭,১৮- ০১৩১৮৩৭১৫৫৭) সেনাবাহিনীর কল সেন্টারের নাম্বারে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ প্রদানের জন্য নাগরিকদের আহ্বান জানিয়েছেন।
ক্যাপ্টেন আসিফের সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় এসময় উপস্থিত ছিলেন মেজর জাহিদ, ক্যাপ্টেন তামজিদ, ক্যাপ্টেন হাসিন, ক্যাপ্টেন মাহমুদ প্রমুখ।
এসজে/এমএম