সৌরভ শুভ, জাবি প্রতিনিধি:
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) আইন অনুষদের সহযোগী অধ্যাপক তাপস কুমার দাস ও সুপ্রভাত পালকে অবাঞ্ছিত ঘোষনা করেছে আইন ও বিচার বিভাগের শিক্ষার্থীরা। চাকরী থেকে অব্যহতি না নেওয়া পর্যন্ত ক্লাস বর্জন ও আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষনা দেন শিক্ষার্থীরা।
সোমবার (১২ আগস্ট) বেলা ১২ টায় মহুয়া চত্বর থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে রেজিস্ট্রার ভবনের সামনে যায়। এসময় দুই শিক্ষকের অব্যবহিতর দাবীতে রেজিস্ট্রারের রুটিন দায়িত্বে নিয়োজিত ডেপুটি রেজিস্ট্রার এবিএম আজিজুর রহমানের কাছে স্মারক লিপি জমা দেন শিক্ষার্থীরা। পরবর্তীতে, মিছিলটি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে আসলে সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে ওই দুই শিক্ষকদের অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন এবং তারা অব্যহতি না নেওয়া পর্যন্ত ক্লাস বর্জন ও আন্দোলন চালিয়ে যাবেন বলে জানান শিক্ষার্থীরা।
মিছিল শেষে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বিভাগের ৪৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী আরশাদুল হক শিক্ষক নিয়োগে সীমাহীন দুর্নীতির অভিযোগ এনে বলেন শিক্ষার্থী বলেন, আমরা শুনেছি, তাপস কুমার দাস দুর্নীতির মাধ্যমে তার পছন্দের লোকদের নিয়োগ দিয়ে নিজস্ব বলয় তৈরি করেছেন। তার বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছের ছোটভাই সুপ্রভাত পালকে নিয়োগ দিয়েছেন। এরই ধারাবাহিকতায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আলোচিত দুর্নীতির মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়া সুপ্রভাত পালের তৎকালীন গার্লফ্রেন্ড বনশ্রী রানীকে একই বিভাগে নিয়োগ দেওয়া হয়। পরবর্তী নিয়োগে যোগ্য প্রার্থীকে বাদ দিয়ে তাদের পছন্দের লোকদের নিয়োগ দেন।
সমাবেশে বিভাগের ৫০ ব্যাচের শিক্ষার্থী তানজিম চৌধুরী বলেন, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আমি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছিলাম এবং ২২ জুলাই আমি গুলিবিদ্ধ হয়েছিলাম। তাপস কুমার দাসের স্যারের সাথে অনেক বার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন বন্ধ রাখেন এবং ২৩ জুলাই আমার বাবা তার সাথে যোগাযোগ করে কান্না করে অনুনয় করার পরেও তিনি আমাকে কোনো সাহায্য করেনি। উল্টো আমার বিরুদ্ধে সাভার থেকে লোকজন এনে হলে হামলা করার মিথ্যা অভিযোগ আানেন। আমি গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি থাকাকালে ও আমার সাথে কোনো ধরনের যোগাযোগ করেননি।
৫২ ব্যাচের শিক্ষার্থী রিয়াজুল রাহী বলেন, বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সময় আমি অন্দোলনে অংশ নেই। ২২ জুলাই পুলিশ গেরুয়াতে আক্রমণ করলে পুলিশের গুলির মুখে আমরা আত্মসমর্পণ করি। সেসময় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আটক হওয়া শিক্ষার্থীদের জন্য আইনি সুপারিশের সেল গঠন করা হয়। আইন অনুষদের ডিন ও বিভাগের চেয়ারম্যান তাপস কুমার সেই সেলের সদস্য। তাপস স্যারকে জানানো হলে তিনি বলেন, আমি নাকি জামায়ত, শিবির, হিজবুততাহরীরের লোক, দুষ্কৃতিকারী। যেখানে অন্য বিভাগের শিক্ষকরা আটক হওয়া শিক্ষার্থীদের ছাড়িয়ে নিচ্ছেন সেখানে আমার ডিপার্টমেন্টর স্যার এসব বলেন।
সহযোগী অধ্যাপক সুপ্রভাত পাল শিক্ষার্থীর গায়ে তোলে অভিযোগ তুলে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী সুহার্ত্য দৌলা অনিক বলেন, গত ২৭ জুন আমার ফাইনাল পরীক্ষা চলছিল। আমি তাড়াহুড়ো করে ক্লাসে আসি এবং দ্বিতীয় সারির একটি বেঞ্চে বসে পরীক্ষা শুরু করি। তাড়াহুড়োয় আমার ফোনটা রাখতে মনে ছিলো না। পরীক্ষার একদম শেষ পর্যায়ে আমার ফোনটা বেজে উঠলে তিনি বলেন, আমি নকল করছি। আমি নকল করিনি বললে তিনি আমাকে সবার সামনে থাপ্পর মারেন। আমার ফোন নেয়ার দেড় মাস পার হলেও এখনো তিনি ফোন ফেরত দেননি।
উল্লেখ্য গতাকাল, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে জড়িত শিক্ষার্থীদের হেনস্থা, তাদেরকে দুষ্কৃতিকারী হিসেবে আখ্যা দেওয়া, শিক্ষার্থীর গায়ে হাত তোলা, ছাত্রীকে যৌন নিপীড়ন, টুপি, বোরকা ও পর্দা করলে তাদের নানা ভাবে হেনস্তা, মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের সাথে বিরুপ আচারন, পরিকল্পিতভাবে রেজাল্ট কমিয়ে দেয়া, সহ নানা অভিযোগে দুই শিক্ষকের পদত্যাগ দাবিতে মানববন্ধন করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের শিক্ষার্থীরা।
এমআই