জাবালুন নূর:
ভয়কে জয় করার বাংলাদেশে একমাস পার হলো । মুলত ১৬ জুলাই আবু সাইদের বুলেটের সামনে বুক পেতে দেয়ার মাধ্যমে দেশের মানুষ ভয়কে জয় করতে শেখে । তারপর আর থামতে হয়নি, ১৮, ১৯ জুলাই আর তার পরবর্তি সময়ে যারা ঢাকার রাজপথ দেখেছেন তারা যদি রাস্তায় নেমে পড়া ছাত্র-ছাত্রী, নারী-পুরুষ, শ্রমিক রিকশাওয়ালাদের চোখের দিকে তাকান তবে দেখেছেন কি সেখানে ছিলো ভয়হীন প্রতিবাদের অভিব্যাক্তি ।
অভ্যুথানের ক্রেডিট ছাত্রদের, আবার মাস্টারমাইন্ডও খোঁজা হচ্ছে, কোন নেতা আন্দোলন কারীদের নিজের শিষ্য বলে দাবী করছেন । আজ দেশ পুনঃগঠনে প্রত্যেকে নিজ মতামতে সরব । অনেক দিন পর প্রাণখুলে কথা বলতে পারছি । সোসাল মিডিয়ায় লিখছি । যেসব ক্যামেরা বুম পরীমনি, বুবলি, সাকিব খানের পরিবারের পিছনে ছুটতো তারা ছুটছে রাজনৈতিক খবরের পেছনে । আর আমরাও খবরেরে শিরোনাম দেখে মত দ্বিমতের ব্যাক্যালাপে ব্যাস্ত । কিছু কিছু টিভিতে টকশো দেখছি সব আলোচক এক সুরে কথা বলছেন ফলে র্কাযত সেসব টকশো তেমনটা জমছেনা । কারন আমরা যে পক্ষ বিপক্ষর বাহাস দেখতে অভ্যস্থ । অথচ জুলাই অভ্যুথানে চোখে দেখা ঘটনা আর টিভি নিউজ ছিলো ভিন্ন ।
এ আন্দোলনের আসল চিত্র আমরা দেখেছি সাধারণ মানুষের ক্যামেরায় । সবাই তাদের ধারণকৃত ভিডিও ছড়িয়ে দিয়ে আন্দোলনকে সাফল্যের মুখ দেখিয়েছে ।
এ গনজোয়ার কিসের বিরুদ্ধে ? শাসনযন্ত্রের সব অংশ কব্জা করে চেপে বসা এক রক্তপিপাসু শাসককে মাত্র কদিনের আন্দোলনে কেন উৎখাত করা সম্ভব হলো ?
প্রথমত শিক্ষা নিয়ে ছাত্র ও অভিভাবকের হতাশা । পতিত সরকার দেশের শিক্ষাব্যাবস্থার মাধ্যমিক পর্যায় থেকেই এমন অবস্থা করেছিলো যে পাঠ্যপুস্তক থেকে শেখার কিছুই ছিলোনা । তারপর পরীক্ষাগুলোতে চলছিল প্রশ্নফাসের হিড়িক । অন্যদিকে এই শিক্ষাব্যাবস্থাকেই সবচেয়ে অধুনিক বলা হচ্ছিল সরকারের পক্ষ থেকে ।
দ্বিতীয়ত দ্রব্যমুল্যের উর্ধ্বগতির কারনে হিমশিম খেতে হচ্ছিল সমাজের বড় একটা অংশের । দেশের অর্থনীতির এমন বেহাল অবস্থায় সরকারের আমলা ও মদদপুষ্টদের সম্পদের পাহাড় একটি বড় অর্থনৈতিক বৈষম্য সৃষ্টি করে । কাছাকাছি সময়ে একজন দুদক কর্মকর্তার ছাগলকাণ্ড, সাবেক পুলিশ প্রধান বেনজিরের দূর্নীতি মিডিয়ায় ব্যাপক আলোচিত হওয়ায় জনরোষ আরো বাড়ে ।
তৃতীয়ত কোটা আন্দোলন বিষয়ে সরকার প্রধানের প্রহনসনমুলক উক্তি। এরকম উক্তি তিনি দেশের বিভিন্ন সমস্যায় বারবার করেছেন । গুরুতর সমস্যার দিয়েছেন হাস্যকর সমাধান কখনো কাঠালের রেসিপি, কখনোবা মরিচ সংরক্ষণ ফর্মুলা ।
চতুর্থত অরাজনেতিক দাবীতে ছাত্ররা নেমেছিলো তাদের উপর নজিরবিহীন দমনপীড়ন । ছাত্রীদের গায়ে হাত তোলা এমনকি হেলিক্পটার থেকে গুলি করে ঘরে অবস্থানরত নাগরিকদেরও হত্যা করা, যার কারনে জনগনের দেয়ালে পীঠ ঠেকে গিয়েছিলো । যার ফলে কেবলমাত্র এই খুনি সরকারের পতনই ছিল এর একমাত্র সমাধান । সুতরাং ৫ আগষ্ট অনিবার্য ছিলো ।
তবে অভ্যূথান পরবর্তি একটি দেশের চ্যালেঞ্জ অনেক । একটি আপাদমস্তক র্দুনীতিতে ডুবে যাওয়া সরকার পতনের পর তার ক্ষত সহসাই উন্মুক্ত হয়ে গেছে । পতিত আওয়ামীলীগ সরকার তার ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করার জন্য সংবিধানসহ রাষ্ট্রের সবকটি গুরুত্বপুর্ণ বিভাগে তাদের সুবিধামত পরিবর্তন করেছে, যা আর মেরামতের পর্যায়ে নেই । প্রয়োজন ঢেলে সাজানো বা পুনঃনির্মাণ ।
এ অবস্থায় মতামত বা ভিন্নমত থাকবে তবে এসকল বিতর্কের ফাকফোকর গলে যেন ফ্যাসিবাদের অনুসারীরা ছোবল না দিতে পারে সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে । মনে রাখতে হবে ক্ষমতার চারপাশে সবসময় কিছু সুবিধাবাদী ও স্বার্থান্বেসী গোষ্ঠী থাকার চেষ্টা করে, এদের কোন দল নেই, আদর্শ নেই, সকল সময় ক্ষমতার পদলেহন করতে এরা বিন্দুমাত্র দ্বিধা করেনা ।
সর্বপরি বাংলাদেশের জনগন হিসেবে জাতিগতভাবে আমাদের একটা বিষয়ে ঐক্যমতে পৌছাতে হবে আমরা কোন মানদন্ডে নতুন বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবো ? রাজনীতির পুরোনো বিতর্ক নিয়ে ? না সকল মত ও পথের ব্যক্তির সমন্বয়ে একটি অংশগ্রহনমুলক ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গঠনে ?
সময় জার্নাল/এলআর