লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি : লক্ষ্মীপুরে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি) এর আওতাধীন একটি সড়কের নির্মাণ কাজে কার্পেটিং ঢালাইয়ে নিন্মমানের পাথর ব্যবহার করা হচ্ছে। এছাড়া সড়কে যে ইটের খোয়া ব্যবহার করা হয়েছে-তাও একেবারে ন্মিমানের ছিলো বলে অভিযোগ উঠেছে।
স্থানীয়দের আপত্তির মুখে পাথরের নমুনা সরবরাহ করে নিম্নমানের বিষয়ে সহমত প্রকাশ করেছেন কাজের তদারকি কর্তৃপক্ষ। তা সত্ত্বেও গতকাল রবিবার পর্যন্ত মানহীন ওই কাজে কর্তৃপক্ষের কোন নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়ন হয়নি। এ পরিস্থিতিতে নির্মিতব্য সড়কটির স্থায়ীত্ব নিয়ে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আন্তরিক হস্তক্ষেপ কামনা করছেন এলাকাবাসী।
জানা গেছে, জেলার সদর উপজেলার মান্দারী ইউনিয়নের রতনপুর গ্রামে হাজী পানা মিয়া সড়কের প্রায় ১২শ’ মি. সড়কের নির্মাণ কাজ চলছে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৯৬ লাখ টাকা। নিলামে কাজটির কার্যাদেশ পায় পিংকী এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। উক্ত প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী না হয়েও বাস্তবে কাজটির দেখভাল করছেন শামীম আহম্মেদ প্রিন্স নামের সকারদলীয় স্থানীয় এক নেতা। দলীয় প্রভাবের সুবিধা খাটিয়ে তিনি কাজ বাস্তবায়নে অনিয়ম করে চলছেন বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।
এদিকে রবিবার (১৩ জুন) সকালে সরেজমিনে সদর উপজেলার জকসিন পূর্ব বাজারে গিয়ে দেখা যায়, মান্দারীর রতনপুর গ্রামের এলজিইডি’র ওই সড়কের কার্পেটিং এর জন্য পিচ দিয়ে চার ধরণের পাথর দিয়ে মিশ্রণ তৈরী করা হচ্ছে। সেগুলো ট্রলির মাধ্যমে সড়কের কার্পেটিং এর কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। কিন্তু মিশ্রণ তৈরীতে নিন্মমানের পথর দিয়ে মিশ্রণ কাজে ব্যবহৃত পাথর, পিচসহ আনুষাঙ্গিক মালামালের গুণগত মান ঠিক রাখতে সংশ্লিষ্ট অফিসের একজন নিয়োগকৃত ব্যক্তি (কার্য সহকারী) সর্বদা নিয়োজিত ছিলো। কিন্তু তার দায়িত্ব পালন নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তার সামনে দিয়েই নিন্মমানের পাথর ব্যবহার করা হলেও অজ্ঞাত কারণে অনেকটা নিশ্চুপ ছিলেন তিনি।
দুপুরে ওই পাথরের স্যাম্পল (নমুনা) এলজিইডি’র জেলা কার্যালয়ে এনে সদর উপজেলা প্রকৌশলী ফখরুল ইসলামের নজরে আনলে তিনি পাথরের মান ভালো ছিলো না বলে জানান। পরে তাৎক্ষণিক তিনি নির্মাণকাজে দায়িত্বরতদের নিন্মমানের পাথর অপসারণের নির্দেশ দেন। যদিও বিকেলে পুনরায় পাথর মিশ্রণ প্লান্টে গিয়ে দেখা যায়, ঢালাইয়ের কাজে ব্যবহৃত পাথরের সাথে বুজুরি নামে এক প্রকার নিন্মমানের পাথর ব্যবহার করা হচ্ছে।
বিষয়টি পুনরায় উপজেলা প্রকৌশলীকে অবগত করা হলে তিনি এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান। তবে এরই মধ্যে নিন্মমানের পাথর দিয়েই নির্মাণাধীন সড়কের পিচ ঢালাইয়ের কাজ সিংহভাগ সম্পন্ন হয়ে যায়।
রাস্তায় নিন্মমানের পাথর ব্যবহারের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বুজুরী একেবারে নিন্মমানের পাথর, যার বাজার মূল্য ৪০ টাকা (প্রতি ফুট)। কিন্তু বুজুরীর স্থলে যে পাথর ব্যবহারের নিয়ম রয়েছে সেগুলোর বাজার মূল্য একশ টাকা (প্রতি ফুট)। বুজুরী পাথর ব্যবহারের কারণে রাস্তার মান ঠিক থাকে না। অল্প সময়ে রাস্তার কার্পেটিং উঠে চলাচলের অনুপোযোগী হয়ে যায়।
কাজের মানের বিষয়ে ঠিকাদার কর্তৃক দায়িত্বরত শামীম আহম্মেদ প্রিন্স জানান, পাথরের মান ভালো, কাজও ঠিকমতো হচ্ছে। এলজিইডি’র কার্য সহকারীদের (ওয়ার্ক এসিস্ট্যান্ড) উপস্থিতিতে কাজ করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে রবিবার বিকেলে এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ শাহ আলমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি আমি খোঁজ নেব।
সময় জার্নাল/এমআই