রাইসা মেহজাবীন:
বন্যার্ত শিশুদের নিয়ে নিউট্রিশন ক্যাম্পেইন " Flood Recovery Nutrition Initiative For Infants" আয়োজন করলো হ্যান্ডস অফ হোপ এবং নিউট্রিশন ফর চেঞ্জ।
গতকাল বন্যাকবলিত এলাকা ফেনী জেলার ছাগলনাইয়া উপজেলার, রাধানগর ইউনিয়নের কাশিপুর গ্রামের শিশুদের জন্য একটি বিশেষ নিউট্রিশন ক্যাম্পেইন আয়োজন করেছে গভর্নমেন্ট কলেজ অফ অ্যাপ্লাইড হিউম্যান সায়েন্সের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন "হ্যান্ডস অফ হোপ" ’।
এই ক্যাম্পেইনে সহযোগী হিসেবে ছিলো নিউট্রিশন ফর চেঞ্জ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিজাস্টার সায়েন্স এন্ড ক্লাইমেট রিজিলেন্স ডিপার্টমেন্ট।
ক্যাম্পেইনের মূল উদ্দেশ্য ছিল বন্যাদুর্গত এলাকার শিশুদের পুষ্টির ঘাটতি পূরণে সচেতনতা সৃষ্টি ও প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করা। বন্যার পর ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার শিশুদের মধ্যে অপুষ্টিজনিত সমস্যা বেড়ে যাওয়ার কারণে এ ধরনের উদ্যোগ অত্যন্ত সময়োপযোগী।
নিউট্রিশন ক্যাম্পেইনের আয়োজনটি বেশ কয়েকটি ধাপে সম্পন্ন হয়। প্রথম ধাপে, পুষ্টিবিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের তত্ত্বাবধানে বন্যার্ত শিশুদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও তাদের পুষ্টিগত চাহিদা নির্ধারণ করা হয়। দ্বিতীয় ধাপে, সেসব শিশুদের জন্য পুষ্টিকর খাদ্য "হ্যাপি কিড" সরবরাহ করা হয় এবং তাদের পরিবারগুলোকে শিশুদের স্বাস্থ্য সম্পর্কে বিশেষ দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়। পুষ্টিকর খাদ্য " হ্যাপি কিড " তৈরি করে হ্যান্ডস অফ হোপ এর কয়েকজন তরুণ খাদ্য ও পুষ্টি বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
"হ্যান্ডস অফ হোপ" এর সদস্যরা এ উদ্যোগের মূল আয়োজক হিসেবে এই ক্যাম্পেইন এ অংশ নেন এবং স্থানীয় শিশুদের মধ্যে পুষ্টি খাদ্য " হ্যাপি কিড " সরবরাহ করেন । উল্লেখ্য এই পুষ্টি খাদ্য " হ্যাপি কিড " মূলত পুষ্টিবিজ্ঞানের কয়েকজন শিক্ষার্থীর নিজস্ব ফর্মুলা ও নিজেদের ক্যাম্পাসের ল্যাবে তৈরি। খাদ্যটি তৈরি করেন মায়িশা হাফসা খান ও তার দল ।
এই দলের অন্যান্যরা হলেন - সুমাইয়া তাবাসসুম, নূরে জান্নাত , রাইসা মেহজাবীন , হাবীবা সুলতানা, এবং জারিন তাসনিম রাফা । অন্যান্য আরো কিছু শিক্ষার্থী এই প্রজেক্টে অংশ নেন। উক্ত খাদ্যে উপাদানের পরিমাপ ও ক্যালোরি ভ্যালু তৈরিতে শিক্ষার্থীদের সাহায্য করেন গভর্নমেন্ট কলেজ অফ অ্যাপ্লাইড হিউম্যান সায়েন্স এর সহযোগী অধ্যাপক শম্পা শারমিন খান।
এছাড়া সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিজাস্টার সায়েন্স এন্ড ক্লাইমেট রেজিলেন্স ডিপার্টমেন্টের শিক্ষার্থীরা , যারা বন্যা-পরবর্তী অন্যান্য চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলার জন্য বিশেষ কর্মশালা পরিচালনা করেন।
হ্যান্ডস অফ হোপ এর প্রজেক্ট ডিরেক্টর মায়িশা হাফসা খান বলেন“বন্যা-পরবর্তী সময়ে শিশুদের পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। বন্যাকবলিত এলাকায় সাধারণত শিশুদের জন্য কৃত্রিম দুধ, গুঁড়ো দুধ, প্রক্রিয়াজাত খাবার, চিনিযুক্ত পণ্য, বিস্কুট, কেক, চিপস, কিংবা ইনস্ট্যান্ট নুডলস বিতরণ করা হয়। যদিও এসব খাবার ক্ষুধা মেটাতে পারে, কিন্তু তা প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহে দিতে ব্যর্থ।
দীর্ঘমেয়াদে এই পুষ্টিহীনতা শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। আমাদের প্রকল্প ‘ফ্লাড রিকভারি নিউট্রিশনাল ইনিশিয়েটিভ ফর ইনফ্যান্টস’ এই চাহিদা পূরণ করবে বলে আমরা আশাবাদী। এই উদ্যোগের মাধ্যমে শিশুদের জন্য পুষ্টিসমৃদ্ধ ও স্বাস্থ্যকর খাদ্য নিশ্চিত করা হবে, যা তাদের সুষ্ঠু শারীরিক ও মানসিক বিকাশে সহায়ক হবে ।
নিউট্রিশন ফর চেঞ্জ এর সিইও রাইসা মেহজাবীন জানান, “বন্যা-পরবর্তী সময়ে শিশুদের পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি, কারণ পুষ্টিহীনতা তাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে বাধা সৃষ্টি করে। এই ক্যাম্পেইন সেই চাহিদা পূরণে আমাদের ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা।”
হ্যান্ডস অফ হোপ এর ফাউন্ডার সুমাইয়া তাবাসসুম জানান " আজকের শিশুরাই দেশের ভবিষ্যৎ কর্ণধার। সুস্থ শিশুরাই একদিন দেশের সম্পদ হয়ে উঠবে। এই ক্যাম্পেইনের সফলতা তখনই নিশ্চিত হবে যখন দেশের ক্রান্তিলগ্নে প্রতিটি শিশুর পুষ্টি চাহিদা পূরণ সম্ভব হবে এবং সকলে সচেতন হবে। দেশের সকল স্তরের জনগণের মধ্যে সচেতনতা গড়ে উঠুক। আগামী প্রজন্ম একটি দক্ষ জনশক্তিতে রুপান্তরিত হোক।"
উল্লেখ্য, এ ধরনের উদ্যোগ বন্যাদুর্গত এলাকার মানুষের জন্য দীর্ঘমেয়াদী সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলে সংশ্লিষ্টরা আশা প্রকাশ করেছেন।
সময় জার্নাল/এলআর