নিজস্ব প্রতিনিধি:
ডিম ও মুরগির যৌক্তিক দাম বেঁধে দেওয়া হয়েছে। আর আলু ও পেঁয়াজ আমদানিতে শুল্ক কমানো হয়েছে তারও দুই সপ্তাহ আগে। তবে এসবের প্রভাব নেই বাজারে। তাতে অসন্তুষ্ট সাধারণ মানুষ।
রাজধানীর রামপুরা বাজারে মনির হোসেন নামের একজন ক্রেতা বলেন, আগেও বাজারে পণ্যের দাম বেঁধে দেওয়া হতো, যা কার্যকর হতো না। তখন রাজনৈতিক সরকার ছিল, নানা কারণ ছিল। কিন্তু এখন ভেবেছিলাম কিছুটা পরিবর্তন হবে। কিন্তু যে লাউ সেই কদু। নতুন সরকার কিছু পদক্ষেপ নিলেও এর সুফল আমরা পাচ্ছি না।
বিক্রেতারা বলছেন, গত ১৫ সেপ্টেম্বর প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর খুচরা পর্যায়ে প্রতিটি ডিমের দর ১১ টাকা ৮৭ পয়সা নির্ধারণ করে দেয়। সে হিসেবে প্রতি ডজনের দর দাঁড়ায় প্রায় ১৪৩ টাকা। যখন ডিমের দাম বেঁধে দেওয়া হয়েছিল, তখন প্রতি ডজন বিক্রি হতো ১৫০-১৫৫ টাকা দরে। যা এরপর আরও বেড়ে এখন ১৬৫ টাকা হয়েছে। অর্থাৎ দাম বেঁধে দেওয়ার পর হালিতে আরও ১০ টাকা বেড়েছে ডিমের দাম।
একই অবস্থা ব্রয়লার ও সোনালি জাতের মুরগির ক্ষেত্রেও। বাজারে যখন প্রতি কেজি ব্রয়লারের দাম ১৭০ টাকা এবং সোনালি জাতের মুরগি ২৬০ টাকা বিক্রি হচ্ছিল, তখন সরকার দাম বেঁধে দেয় প্রতি কেজি যথাক্রমে ১৭৯ টাকা ৫৯ পয়সা ও ২৬৯ টাকা ৬৪ পয়সা। এরপর কেজিপ্রতি ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে এসব মুরগির দাম। এখন বাজারে ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা, সোনালি জাতের মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৬০ থেকে ২৮০ টাকায়।
আর খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, পাইকারি বাজারে দাম বাড়িয়ে বিক্রি করা হচ্ছে, যে কারণে বেঁধে দেওয়া দামের মধ্যে তারা বিক্রি করতে পারছেন না।
রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এখন ফার্মের মুরগির বাদামি ডিমের ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৬৫ টাকা দরে। যা সরকারের বেঁধে দেওয়া দরের চেয়ে ২২ টাকা বেশি। এছাড়া দেশি হাঁস-মুরগির ডিমের ডজন খুচরায় বিক্রি হচ্ছে ২০৫ থেকে ২১৫ টাকা দরে।
দাম নিয়ন্ত্রণে সরকার আমদানির অনুমতিও দিয়েছে। তবে আমদানির ডিম বাজারে দেখা যাচ্ছে না বলে দাবি করেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা।
জানতে চাইলে শ্যামবাজারের পাইকারি পেঁয়াজ ব্যবসায়ী আমানুল হক বলেন, বাজারে এখনো ভারতের পেঁয়াজ ঢোকেনি। এ কারণে বাজারে কোনো প্রভাব পড়েনি। যা বিক্রি হচ্ছে সেটা দেশি জাতের। দেশের বিভিন্ন এলাকার মোকামে পেঁয়াজের দাম এখনো বাড়তি।
তিনি জানান, দেশের সাম্প্রতিক অতিবৃষ্টির কারণে পেঁয়াজ আমদানি হয়নি। কিছুদিনের মধ্যে ভারতের পেঁয়াজ আসলে দাম কিছুটা কমতে পারে।
জানা গেছে, এতদিন ভারত থেকে রপ্তানি মূল্য ছিল টনপ্রতি ৫৫০ ডলার। অর্থাৎ বাজারে যে দামেই পেঁয়াজ কেনা হতো, তা ৫৫০ ডলার দাম ধরে শুল্কায়ন করা হতো। এখন আমদানিকারক ও রপ্তানিকারক মিলে দাম নির্ধারণ করবে। আর রপ্তানি শুল্কও কমিয়ে অর্ধেক করা হয়েছে। তবে নতুন পেঁয়াজ বাজারে না আসা পর্যন্ত দাম কমবে না।
এর আগে, গত ৫ সেপ্টেম্বর এক প্রজ্ঞাপনে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) জানায়, পেঁয়াজ আমদানিতে বিদ্যমান ৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়েছে। শুধু পেঁয়াজ নয় আলুর ক্ষেত্রও শুল্ক কমানো হয়েছে। আলুর আমদানি শুল্ক কমিয়ে ১৫ শতাংশ করার পাশাপাশি ৩ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক তুলে নেওয়া হয়েছে। আলু-পেঁয়াজ আমদানিতে এ শুল্ক সুবিধা বহাল থাকবে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত।
সময় জার্নাল/এলআর