মোঃ ইমরান মাহমুদ , জামালপুর প্রতিনিধি :
জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার চরবানিপাকুরিয়া ইউনিয়নে শ্রমিক ছাড়াই কাগজ কলমে হাজিরা ও ভুয়া প্রকল্প দেখিয়ে দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ শেষ করা হয়েছে। এ প্রকল্প কাজে নয়, কাগজের মাধ্যমে নয়-ছয় করে প্রকল্পের অর্থ আত্মসাৎ করছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। প্রান্তিক শ্রমজীবি মানুষের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে কর্মসৃজন কর্মসূচী প্রকল্পের আওতায় বরাদ্দকৃত লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। শ্রমিকের তালিকায় রয়েছে গ্রাম পুলিশসহ সচ্ছল ব্যক্তিদের নাম।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান, প্রকল্প কমিটির সভাপতি (ইউপি সদস্য) ও সচিবের যোগসাজশে এসব অপকর্ম করা হয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
উপজেলা বাস্তবায়ন কর্মকর্তার (পিআইও) কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ১১টি ইউনিয়নে অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচি (ইজিপিপি) গ্রহণ করা হয়। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ে রাস্তা নির্মাণ, পুনর্নির্মাণ, সংস্কার ও উন্নয়ন কাজ বাবদ ৫ হাজার ৭৬৮ জন শ্রমিকের জন্য বরাদ্দ হয় ৮ কোটি ৪২ লাখ ১২ হাজার ৮শ টাকা। প্রথম পর্যায়ে ৪০ দিন ও দ্বিতীয় পর্যায়ে ৩৩ দিন করে শ্রমিকদের দৈনিক ৪শ টাকা মজুরির ভিত্তিতে কাজ করার কথা থাকলেও বাস্তবে শ্রমিকদের পরিবর্তে বিভিন্ন আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয়। কিছু রাস্তায় আংশিক কাজ হলেও বেশির ভাগ রাস্তায় কোনো কাজই হয়নি। ইজিপিপি প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ে মেলান্দহ উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের ৬৩টি রাস্তা অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
চরবানিপাকুরিয়া ইউনিয়নে ২য় পর্যায়ের (ইজিপিপি) আওতায় ৪টি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। প্রত্যেকটি প্রকল্পে ৭৫জন করে মোট ৩০০জন শ্রমিক কাজ করার কথা ছিলো।
অভিযোগ রয়েছে প্রতিটি প্রকল্পে শ্রমিকের কাজ করার নিয়ম থাকলেও তা কেবল কাগজে কলমেই সীমাবদ্ধ। প্রকল্প এলাকায় নামে মাত্র কয়েকজন শ্রমিক দিয়ে কাজ করানো হয়েছে কাজ। কাগজে কলমে দেখানো হয়েছে শতভাগ হাজিরা। মাটি কাটা হয়েছে মাহেন্দ্র গাড়ী ও খনন যন্ত্র বেকু দিয়ে। প্রকল্প এলাকায় প্রকল্পের তথ্য সংবলিত সাইনবোর্ড থাকার কথা থাকলেও ইউনিয়নের কোথাও প্রকল্পের কোন সাইনবোর্ড লক্ষ্য করা যায়নি। শ্রমিকের তালিকায় দেখা যায় একই সিরিয়ালের সিম নাম্বার। কোন কোন প্রকল্পের সভাপতি বলতেই পারেনা তিনি প্রকল্পের সভাপতি। শ্রমিকের তালিকায় রয়েছে গ্রাম পুলিশসহ সচ্ছল ব্যক্তিদের নাম।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ইউনিয়নের কালাইহাডি বিল থেকে হাসেনের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তাটি প্রকল্পের মেয়াদ শুরু হওয়ার আগেই মাটি কাটা হয়েছে। শ্রমিক দিয়ে মাটি কাটার উল্লেখ থাকলেও কাটা হয়েছে ভেকু দিয়ে। অপর আরেকটি প্রকল্প কালাইহাডি ভাঙ্গার দক্ষিন পার্শ্ব হতে বেতমারি তিন রাস্তা মোড় পর্যন্ত রাস্তাটি দেখা যায় ফসলের ক্ষেতের সাথে মিশে আছে। একটুও মাটি কাটা হয়নি। স্থানীয়দের অভিযোগ কোন সময়ই এই রাস্তায় মাটি কাটা হয়নি। প্রকল্প তালিকায় থাকা ঘোড়ামারা খাল থেকে কালাইহাডি তিন রাস্তার মোড় পর্য়ন্ত রাস্তা মেরামত প্রকল্পটি খোঁজেই পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে প্রকল্প সভাপতি ইউপি সদস্য মোঃ ফজলুল হক বলেন, আমার যে প্রকল্প দিয়েছিলো সেটার কাজ করেছি। অন্যান্য প্রকল্পের বিষয়ে চেয়ারম্যান বলতে পারবো।
এসব দুর্নীতি অনিয়মের বিষয়ে চরবানিপাকুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শাহাদৎ হোসেন ভুট্টো জানান, কাজ দেখেই বিল দিয়েছে। কাজ না দেখে তো বিল দেয় নাই। মামলা হলে সবাই ফাঁসবে। যত খুশি লেখুক।
এবিষয়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোঃ আব্দুর রাজ্জাক বলেন, অস্তিত্ব বিহীন কোনো প্রকল্প নাই। প্রকল্প দেখেই বিল দেওয়া হয়েছে। শ্রমিকের তালিকায় গ্রাম পুলিশের বিষয়ে বলেন, আমার জানা মতে গ্রাম পুলিশের নাম নাই। আমাদের অজান্তে থাকতে পারে।
মেলান্দহ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) এস. এম. আলমগীর বলেন, এ উপজেলায় আমি নতুন যোগদান করেছি। প্রকল্প গুলোর খোঁজ খবর নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সময় জার্নাল/ টি এ