শনিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণে খাদ্য ও খাদ্যাভ্যাসের গুরুত্ব

বুধবার, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২৪
স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণে খাদ্য ও খাদ্যাভ্যাসের গুরুত্ব

রাইসা মেহজাবীন: 

মানবজীবনে স্ট্রেস একটি অতি পরিচিত সমস্যা। দৈনন্দিন কাজের চাপে, মানসিক ও শারীরিক অবসাদে, বিভিন্ন ব্যক্তিগত ও পেশাগত সমস্যায় আমরা প্রায়শই স্ট্রেসের শিকার হই। দীর্ঘস্থায়ী স্ট্রেস আমাদের স্বাস্থ্যের ওপর গভীর প্রভাব ফেলতে পারে। এটি না শুধুমাত্র মানসিক স্বাস্থ্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, বরং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও দুর্বল করে দেয়। স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণের জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়ে থাকে, তবে খাদ্য এবং খাদ্যাভ্যাস এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

খাদ্য শুধুমাত্র শরীরের জ্বালানি নয়, এটি আমাদের মস্তিষ্ক এবং স্নায়ুতন্ত্রের ওপরও প্রভাব ফেলে। সঠিক খাদ্যাভ্যাস মানসিক চাপ কমাতে সহায়ক হতে পারে এবং আমাদের মানসিক সুস্থতা নিশ্চিত করতে পারে। এমনকি, কিছু খাবার সরাসরি স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে, আবার কিছু খাবার স্ট্রেসকে বাড়িয়ে দিতে পারে। এডিটোরিয়ালে আমরা স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণে খাদ্য ও খাদ্যাভ্যাসের গুরুত্ব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।

স্ট্রেস এবং শরীরের প্রভাব
স্ট্রেসের প্রভাব শরীরের প্রায় প্রতিটি অঙ্গের ওপর পড়ে। যখন আমরা স্ট্রেসের সম্মুখীন হই, তখন শরীর কর্টিসল এবং অ্যাড্রেনালিন নামক হরমোন নিঃসরণ করে। এটি শরীরকে 'ফাইট-অর-ফ্লাইট' প্রতিক্রিয়া দিতে প্রস্তুত করে। সাময়িকভাবে এই প্রতিক্রিয়া আমাদের বিপদ থেকে বাঁচাতে সাহায্য করে। তবে দীর্ঘস্থায়ী স্ট্রেসের ফলে এই হরমোনগুলির অতিরিক্ত নিঃসরণ আমাদের শরীরের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

অতিরিক্ত কর্টিসল শরীরে প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে, যা বিভিন্ন দীর্ঘস্থায়ী রোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এছাড়াও এটি আমাদের হজম ব্যবস্থা, ঘুম, রক্তচাপ এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে বিঘ্ন ঘটাতে পারে। স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য যেমন অবনতি ঘটে, তেমন শারীরিক সমস্যাও বাড়তে থাকে।

খাদ্য এবং স্ট্রেসের সম্পর্ক

খাদ্য আমাদের শরীরের কর্মক্ষমতা বজায় রাখতে সাহায্য করে, তবে খাদ্যাভ্যাস আমাদের মানসিক স্থিতির ওপরও গভীর প্রভাব ফেলে। সঠিক পুষ্টি আমাদের মানসিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সহায়ক হয়, আবার অনুপযুক্ত খাদ্যাভ্যাস মানসিক চাপ বাড়িয়ে দেয়।

স্ট্রেস কমাতে সহায়ক খাদ্য
১. ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার: ম্যাগনেসিয়াম শরীরের প্রায় ৩০০টি বায়োকেমিক্যাল প্রতিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে, যার মধ্যে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণও অন্যতম। ম্যাগনেসিয়ামের অভাব শরীরকে আরো চাপগ্রস্ত করতে পারে। কাজেই, শাকসবজি, বাদাম, দানাশস্য, এবং ডার্ক চকোলেটের মতো ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার স্ট্রেস কমাতে সহায়ক হতে পারে।

২. ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড: ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড মস্তিষ্কের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি স্নায়ুতন্ত্রের কার্যকারিতা উন্নত করে এবং মানসিক চাপের প্রতিক্রিয়ায় শরীরের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। সামুদ্রিক মাছ (যেমন স্যামন, সার্ডিন), আখরোট এবং চিয়া বীজে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা-৩ পাওয়া যায়।

৩. ভিটামিন বি সমৃদ্ধ খাদ্য: ভিটামিন বি বিশেষ করে বি১২ এবং ফোলেট আমাদের স্নায়ুতন্ত্রের কার্যকারিতা এবং মানসিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সবুজ শাকসবজি, ডিম, দুধ, মাংস, এবং দানাশস্যে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি পাওয়া যায়।

৪. এন্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার: স্ট্রেসের ফলে শরীরে ফ্রি র‌্যাডিকাল বৃদ্ধি পায়, যা কোষের ক্ষতি করে এবং প্রদাহ সৃষ্টি করে। এন্টি-অক্সিডেন্টসমৃদ্ধ খাবার যেমন বেরি জাতীয় ফল, ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল (কমলা, লেবু), শাকসবজি এবং গ্রিন টি এই ফ্রি র‌্যাডিকালগুলির সাথে লড়াই করে এবং স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে।

৫. ট্রিপটোফান সমৃদ্ধ খাদ্য: ট্রিপটোফান একটি অ্যামাইনো অ্যাসিড, যা শরীরে সেরোটোনিন তৈরি করে। সেরোটোনিন মস্তিষ্কে সুখের অনুভূতি তৈরি করে এবং স্ট্রেস কমাতে সহায়ক হয়। দুধ, ডিম, মুরগির মাংস, এবং কলায় প্রচুর পরিমাণে ট্রিপটোফান থাকে।

স্ট্রেস বাড়ায় এমন খাদ্য
কিছু খাবার স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক নয়, বরং স্ট্রেসের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে। বিশেষ করে বেশি প্রক্রিয়াজাত খাবার, ফাস্ট ফুড এবং চিনি সমৃদ্ধ খাবার স্ট্রেসের মাত্রা বাড়ায়।

১. চিনি সমৃদ্ধ খাবার: উচ্চমাত্রায় চিনি গ্রহণ করলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং শরীরকে অতিরিক্ত ইনসুলিন নিঃসরণ করতে হয়। এর ফলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা দ্রুত কমে যায় এবং ক্লান্তি ও মেজাজ খারাপ হওয়ার অনুভূতি দেখা দেয়। তাই চিনি সমৃদ্ধ খাবার বেশি খেলে তা স্ট্রেস বাড়ায়।

২. ক্যাফেইন: ক্যাফেইন স্নায়ুতন্ত্রকে উত্তেজিত করে এবং দীর্ঘমেয়াদে এটি মানসিক চাপ বাড়িয়ে দেয়। অতিরিক্ত কফি বা ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় পান করলে ঘুমের সমস্যা হতে পারে, যা মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

৩. অ্যালকোহল: অনেকে স্ট্রেস থেকে মুক্তি পেতে অ্যালকোহল গ্রহণ করে থাকেন, তবে অ্যালকোহল শরীরের হরমোন ভারসাম্যকে বিঘ্নিত করে। এটি শরীরে কর্টিসলের মাত্রা বাড়িয়ে দেয় এবং দীর্ঘমেয়াদে মানসিক চাপ বাড়িয়ে তোলে।

খাদ্যাভ্যাসের প্রভাব
খাদ্য এবং খাদ্যাভ্যাসের প্রভাব সরাসরি আমাদের স্ট্রেসের মাত্রার ওপর পড়ে। সঠিক সময়ে সঠিক পরিমাণে এবং পুষ্টিকর খাবার খেলে তা আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যকে সহায়তা করে, অন্যদিকে অনিয়মিত বা অপুষ্টিকর খাবার আমাদের মানসিক চাপ বাড়িয়ে দেয়।

নিয়মিত খাবার গ্রহণ
খাবার গ্রহণের সময় এবং মাত্রা স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত সময়ে খাবার গ্রহণ না করলে শরীরে গ্লুকোজের মাত্রা কমে যায়, যার ফলে মস্তিষ্কে চাপ সৃষ্টি হয় এবং মেজাজ খারাপ হতে পারে। তাই প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে এবং সুষম খাদ্য গ্রহণ করা প্রয়োজন। দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকলে শরীরে কর্টিসলের মাত্রা বেড়ে যায়, যা স্ট্রেস বাড়াতে সহায়ক হয়।

হাইড্রেশন

শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি থাকা প্রয়োজন, কারণ ডিহাইড্রেশন স্ট্রেসের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। পানির অভাবে শরীরের বিভিন্ন কার্যকলাপ বিঘ্নিত হয় এবং মস্তিষ্ক ঠিকভাবে কাজ করতে পারে না। প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান করা উচিত।

স্ট্রেস কমাতে সুষম খাদ্যাভ্যাস

একটি সুষম খাদ্যাভ্যাস মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। সুষম খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে আমরা প্রয়োজনীয় সব পুষ্টি উপাদান পেতে পারি, যা আমাদের মানসিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। খাদ্যাভ্যাসে শাকসবজি, ফল, প্রোটিন, সম্পূর্ণ শস্য এবং ভালো চর্বি অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। সেই সাথে ক্ষতিকারক চিনি এবং প্রক্রিয়াজাত খাবারের পরিমাণ কমিয়ে আনতে হবে।

১. সকালের নাস্তা: প্রতিদিন স্বাস্থ্যকর একটি সকালের নাস্তা স্ট্রেস কমাতে সহায়ক। সকালের নাস্তায় প্রোটিন, ফাইবার, এবং স্বাস্থ্যকর চর্বি থাকা উচিত। এটি সারাদিনের জন্য শক্তি প্রদান করে এবং মানসিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখে।

২. প্রচুর শাকসবজি ও ফলমূল: শাকসবজি ও ফলমূল স্ট্রেস কমাতে সহায়ক। এগুলিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন থাকে

স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণে খাদ্য ও খাদ্যাভ্যাসের গুরুত্ব অপরিসীম। স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গঠন এবং মাইন্ডফুল ইটিং আমাদের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের উন্নয়নে সহায়ক। তাই আমাদের উচিত একটি সুস্থ জীবনযাপন পদ্ধতি গ্রহণ করা, যাতে আমরা স্ট্রেসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারি এবং সুখী জীবনযাপন করতে পারি।

সময় জার্নাল/এলআর


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল