শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪

দিনাজপুরে গুলিতে আশরাফুলের ডান চোখ নষ্ট

সোমবার, সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২৪
দিনাজপুরে গুলিতে আশরাফুলের ডান চোখ নষ্ট

মাহবুবুল হক খান, দিনাজপুর প্রতিনিধি:

দিনাজপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিতে পরিবহন শ্রমিক আশরাফুল ইসলামের ডান চোখ চিরতরে নষ্ট হয়ে গেছে। বাম চোখও নষ্ট হওয়ার পথে। তবে উন্নত চিকিৎসা করতে তার বাম চোখ ঠিক হতে পারে। 

আশরাফুলের শরীর থেকে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে ৭টি স্টিল বুলেট বের করা হয়েছে। এখনো তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে ১৪টি স্টিল বুলেট রয়ে গেছে। এই বুলেটগুলো বের করা সম্ভব হচ্ছে না বলে চিকিৎসকরা তার পরিবারকে  জানিয়েছেন।

এরই মধ্যে একজন চিকিৎসক আমার মাকে বলেন,  আমাকে হাসপাতাল থেকে নিয়ে যেতে। আমার মা বলেন, ‘আমার ছেলের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় গুলি লেগেছে, আপনারা চিকিৎসা দেন’। চিকিৎসক বলেন, ‘এখানে কোন চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই, আপনার ছেলের চোখে আঘাত লেগেছে। চক্ষু হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা করান।’

আশরাফুলের মা রাশেদা জানান, গত ৬ আগস্ট  দিনাজপুর গাউসুল আযম চক্ষু হাসপাতালে গিয়ে ডাঃ ওয়াহিদা খানম আশরাফুলের চোখের প্রাথমিক চিকিৎসা দেন। তিনি পরামর্শ দেন, ঢাকা আই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য। 

তার পরামর্শে গত ১০ আগস্ট ঢাকার মালিবাগে বাংলাদেশ আই হাসপাতালে আশরাফুলকে ভর্তি করা হয়। ওই হাসপাতালের চিকিৎসক বলেন, তার চোখের অপারেশন করতে অনেক টাকা লাগবে। তার মাকে টাকা জোগাড় করতে বলেন। আশরাফুলকে রেখে তার মা পুনরায় দিনাজপুর আসেন টাকা সংগ্রহের জন্য। তাদের বাসায় থাকা দুটি গরু ছিল। গরু দুটি বিক্রি করে এক লাখ ৬০ হাজার টাকা নিয়ে তার মা রাশেদা বেগম পুনরায় ঢাকায় যান।

আই হাসপাতালের চিকিৎসক তার মাকে বলেন,  বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহত রোগিদের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ফ্রি চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছেন। পরে ওইদিন (২৪ আগস্ট ২০২৪) তারিখ আই হাসপাতালের ছাড়পত্র নিয়ে আহত আশরাফুলকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সন্ধ্যার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে পৌঁছেন। কিন্তু ওই সময় ওই হাসপাতলে তার ছেলেকে ভর্তি করার মত কোন অবস্থা ছিল না। পরদিন ২৫  আগস্ট  আশরাফুলের চিকিৎসার কাগজপত্র দেখে তাকে এই হাসপাতালের চতুর্থ তলার চক্ষু বিভাগের ওয়ার্ডে ভর্তি করানো হয়।

আশরাফুলের মা রাশেদা বেগম বলেন, ভর্তি হওয়ার তিন দিন পর অনেক চেষ্টা করে এই হাসপাতালের পরিচালকের সহযোগিতায় তার ছেলে আশরাফুলের ডান চোখে অস্ত্রোপচার করেন চক্ষু বিভাগের অধ্যাপক ডাঃ সেলিম রেজা। অস্ত্রোপচারের পর ডাঃ তাদেরকে বলেন, তার ডান চোখ আর ভালো হবে না, চিরতরে নষ্ট হয়ে গেছে। বাম চোখের চিকিৎসা করানো হবে, তবে ভালো হওয়ার সম্ভাবনা কম রয়েছে। তারা চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ২৪ দিন থাকার পর গত ২৮ সেপ্টেম্বর আশরাফুলকে রিলিজ দেওয়া হয়েছে। 

তার স্ত্রী শামিমা বেগম বলেন, তাদের দুটি সন্তান রয়েছে, বড় মেয়ে জান্নাতুন নেসার বয়স পাঁচ বছর ও ছোট ছেলে সিয়াম বাবু'র বয়স কেবল দু'বছর অতিক্রম করেছে। তার আহত স্বামী আশরাফুল, দুটি নাবালক ছেলে ও মেয়ে, বৃদ্ধ  শ্বশুর আক্কাস আলী, শ্বাশুড়ি রাশেদা বেগম ও নয় বছর বয়সের দেবর মোহাম্মাদ আলীকে  নিয়ে তাদের সংসার। 

দিনাজপুর কোতয়ালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) পরিদর্শক মোঃ ফরিদ হোসেন জানান, গত ২৬ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ১১ টায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গুরুতর আহত আশরাফুল ইসলামের মাতা মোছাঃ রাশেদা খাতুন বাদী হয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামালসহ ৮৪ জনের নাম উল্লেখ করে কোতয়ালী থানায় হত্যা চেষ্টা ও নাশকতার ঘটনার বর্ণনা দিয়ে অভিযোগ দায়ের করেছেন।

সময় জার্নাল/এলআর


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল