মাহবুবুল হক খান, দিনাজপুর প্রতিনিধিঃ
দিনাজপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিতে পরিবহন শ্রমিক আশরাফুল ইসলামের ডান চোখ চিরতরে নষ্ট হয়ে গেছে। বাম চোখও নষ্ট হওয়ার পথে। তবে উন্নত চিকিৎসা করতে তার বাম চোখ ঠিক হতে পারে। আশরাফুলের শরীর থেকে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে ৭টি স্টিল বুলেট বের করা হয়েছে। এখনো তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে ১৪টি স্টিল বুলেট রয়ে গেছে। এই বুলেটগুলো বের করা সম্ভব হচ্ছে না বলে চিকিৎসকরা তার পরিবারকে জানিয়েছেন।
পরিবহন শ্রমিক আশরাফুল ইসলাম (৩৪) দিনাজপুর পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ডের উত্তর শেখপুরা মহল্লার দিনমজুর আক্কাস আলীর ছেলে। গত সোমবার আশরাফুল ইসলামের বাড়ীতে গিয়ে তার সাথে আলাপ হয়। এ সময় তিনি বলেন, আমি একজন পরিবহন শ্রমিক হিসেবে ভাড়ায় মাইক্রো ও কার চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করি। গত ৪ আগস্ট ২০২৪ দুপুরে শহরের সিএন্ডবি কার্যালয়ের পাশে রেন্ট-এ কারের চালকেরা ভাড়ায় গ্রাহক ধরার জন্য অবস্থান করেন। হঠাৎ করে গুলির শব্দ শুনে আমিসহ অনেকেই দৌড় শহরের কাচারি মোড়ে যাই। সেখান থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে তাদের বিক্ষোভ সমাবেশে আমিসহ আমার সহযোগিরা যোগ দেই। এ সময় অতর্কিত আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগসহ তাদের সন্ত্রাসী বাহিনী অস্ত্র হাতে লাঠি সোটা নিয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ও সাধারণ জনতার ওপর হামলা চালায়। তাদের হামলায় বিক্ষোভকারিরা বিভিন্ন দিকে ছোটাছুটি করে সড়ে যায়। আমিও দৌড়ে আত্মরক্ষার্থে দিনাজপুর জেনারেল হাসপাতালের দিকে চলে যাই। হাসপাতালের গেট পর্যন্ত যাওয়ার পর আমি বুঝতে পারি আমার শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুলি লেগেছে। আমার শরীর থেকে রক্ত ঝরছে। আমি হাসপাতালের মধ্যে গিয়ে পড়ে যাই। এ সময়ে শতাধিক আহতের আর্তনাদে বাতাস ভারি হয়ে ওঠে। আমি ওই হাসপাতালের মধ্যে মাটিতে পড়ে থাকার দীর্ঘ সময় পর আমাকে কয়েকজন উদ্ধার করে জরুরি বিভাগে নিয়ে যায়। এখান থেকে আমাকে দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য চিকিৎসক পরামর্শ দেন। পরে বিকেলে আমাকে একটি ভ্যানে করে কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবি দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। আমার আহত হওয়ার খবর পেয়ে আমার মা রাশেদা খাতুন ও বাবা আক্কাস আলী এবং স্ত্রী শামিমা বেগম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছুটে আসে। তারা আমার শরীরের রক্তাক্ত এই অবস্থা দেখে হাউ মাউ করে কান্নাকাটি করেন। আমার শরীরে বিদ্ধ হওয়া গুলির ব্যথায় যন্ত্রণায় ছটফট করে এক পর্যায়ে আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। পরদিন সকালে আমার জ্ঞান ফিরলে, আমি দেখতে পারি আমার মায়ের কোলে আমি মাথা রেখে হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছি। আমার মুখ চোখ ফুলে গেছে। পুরো শরীরে অসহ্য ব্যথা।
আশরাফুলের বাবা আক্কাস আলী বলেন, নির্মমভাবে যাদের হুকুমে তার নিরপরাধ ছেলের ওপর গুলি করা হয়েছে, তিনি তাদের বিচার দাবি করেন।
সময় জার্নাল/তানহা আজমী