হাবিপ্রবি প্রতিনিধি:
শিক্ষক হলেন সেই ব্যক্তি যিনি শিক্ষার্থীদের শিক্ষা ও জ্ঞানের বিকাশ ঘটাতে সহায়তা করেন। পরিবারের পরে তিনিই অন্যন্য। বিষয়ের দক্ষতা অর্জনে শিক্ষার্থীদের দিকনির্দেশনা দেন এবং তাদের শিখতে আগ্রহী করে তোলেন।একজন আদর্শ শিক্ষক তিনিই-শিক্ষাকে যিনি পূর্ণতা দেন, ভালো শিক্ষা দেন। সে কারণে যিনি শিক্ষকতার মতো মহৎ পেশায় নিজেকে সম্পৃক্ত করেন তিনি জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। শিক্ষাদান একটি মহৎ শিল্প। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষকই এই শিল্পের মাধ্যম ও কারিগর হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। আজকে সকল শিক্ষাগুরুদের জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা। ৫ অক্টোবর বিশ্ব শিক্ষক দিবসে শিক্ষক সম্পর্কে কয়েকজন শিক্ষার্থীর মতামত তুলে ধরেছেন মো. মুরাদ হোসেন।
বৈষম্যহীন শিক্ষক সমাজ চাইঃ
শিক্ষকের ভূমিকা শুধু পড়ানোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; তারা শিক্ষার্থীদের সামাজিক ও মানসিক উন্নয়নে সহায়তা করেন, শিক্ষার্থীদের মূল্যবোধ ও নৈতিকতা গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে, একজন শিক্ষককে কিছু মৌলিক গুণাবলীতে গড়া উচিতঃ (১) জ্ঞানের গভীরতাঃ শিক্ষককে তার বিষয়বস্তু সম্পর্কে গভীর জ্ঞান থাকতে হবে। তারা যেন শিক্ষার্থীদের সঠিক এবং নির্ভুল তথ্য দিতে পারে (২) আদর্শ ও অনুপ্রেরণাঃ শিক্ষককে শিক্ষার্থীদের জন্য আদর্শ হিসেবে কাজ করতে হবে। তাদের অনুপ্রেরণা দিয়ে শিক্ষার্থীদের আত্মবিশ্বাসী করে গড়ে তুলতে হবে (৩) সহানুভূতি ও সমর্থনঃ শিক্ষককে শিক্ষার্থীদের প্রতি সহানুভূতিশীল হতে হবে এবং তাদের সমস্যার সমাধান করতে হবে (৪) উন্নত পদ্ধতিঃ এখন ডিজিটাল বাংলাদেশ হিসেবে শিক্ষকদের উচিত নতুন পদ্ধতি ও প্রযুক্তি ব্যবহার করা যাতে করে শিক্ষার্থীরা তাদের চিন্তার পরিধি বাড়াতে পারে (৫) নৈতিকতা ও পেশাদারিত্বঃ শিক্ষককে নৈতিকতা ও পেশাদারিত্ব বজায় রাখতে হবে, যেন তারা শিক্ষার্থীদের মধ্যে সঠিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা করতে পারে। শিক্ষক বৈষম্যঃ বাংলাদেশে শিক্ষক বৈষম্য একটি গুরুত্বপুর্ণ সমস্যা। বিভিন্ন স্কুল ও কলেজে বিশ্ব বিদ্যালয়ের শিক্ষকগণের মধ্যে বেতন, সুযোগ-সুবিধা ও সামাজিক মর্যাদার ক্ষেত্রে বৈষম্য বিদ্যমান। সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে এই বৈষম্য বেশি দেখা যায়। যার প্রভাব শিক্ষার্থীদের উপরেও পড়েছে। তাই মনে করি, শিক্ষকদের সাথে ঘটে যাওয়া বৈষম্যের অবসানই শিক্ষকদের প্রাপ্য সম্মান ফিরিয়ে দিতে পারে।
সঞ্চিতা রিতু
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
শিক্ষকেরা জাতির মান নির্ণয়কঃ
ইউনেস্কোর মতে, “ বিশ্ব শিক্ষক দিবস ” শিক্ষা ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে শিক্ষকদের অসামান্য অবদান,কঠোর পরিশ্রম এবং সাফল্যের স্বীকৃতি স্বরূপ পালন করা হয়ে থাকে। একজন আদর্শবান শিক্ষক একটি জাতির পথ প্রদর্শক। মোমবাতি যেমন নিজে পুড়ে আলো বিলিয়ে দেয় ,ঠিক শিক্ষকরাও তেমন। শিক্ষক হচ্ছেন পুরো একটি জাতির মান নির্ণয়ক। একজন শিক্ষকই পারেন একজন পিছিয়ে পরা ছাত্রের মাঝে আশার আলো ফুটাতে। আর সেই ছাত্র সেই সুপ্ত আলো থেকে আলোকিত এক জাতিতে পরিনত করার ক্ষমতা রাখে। একজন ছাত্রের মাঝে সুপ্ত, অবিকশিত মেধা থাকে যা সে কখনো কখনো নিজে বুঝতে পারেনা, তাকে বুঝিয়ে দেওয়ার জন্যে একজন গুরুর প্রয়োজন হয়,শিক্ষকেরা হচ্ছেন সেই গুরু; যারা এই নিখুঁত খাটি সোনা খুজে বের করে আনেন। শিক্ষকের আবার কিছু ভয়ংকর দিকও আছে, ভুল মানুষ শিক্ষক হয়ে আসলে সে জাতি ক্রমান্বয়ে ধ্বংসের দিকে ধাবিত হয়। আমাদের দেশেও এরকম অনেক শিক্ষক আছেন যারা দেশ গড়ার কাজে অনেক অবদান রাখেন। এরকমই আরও অনেক শিক্ষক বর্তমান বাংলাদেশে প্রয়োজন।
আরাফ আহমেদ
হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, দিনাজপুর
শিক্ষক একটি জাতি গঠনের রূপকারঃ
“যদি তুমি জীবনে সাফল্য অর্জন করে থাকো তাহলে মনে রাখবে, তোমার পাশে একজন শিক্ষক ছিল যে তোমাকে সাহায্য করেছিলো” -বারাক ওবামা। শিক্ষকেরা তাদের শ্রম আর মেধা দিয়ে একটি জাতিকে গড়ে তোলেন। শিক্ষক আমাদের অবিভাবক এবং একই সাথে বন্ধুর মতো।একজন শিক্ষক একটি জাতিকে যেদিকে দিক-নির্দেশনা দিবেন ,সেদিকে পরিচালিত হবে।শিক্ষক শুধু পুথিঁগত বিদ্যাই দিয়ে থাকেন না , একই সাথে সুশিক্ষায় গড়ে তোলেন। তারা বাবা-মায়ের সমতুল্য।আমাদের সমাজে শিক্ষকদের সঠিক মূল্যায়ন দেওয়া হয়না। তাদের ন্যায্য পারিশ্রমিক দেওয়া হয়না । শিক্ষকদের বেতন বৈষম্য , ধীর পদন্নতি ,ভাতা কম এসব কারণেও এই পেশায় কেউ আসতে চায় না । আবার এইতো কিছুদিন আগে ছাত্রছাত্রী দ্বারা শিক্ষকরা লাঞ্চিত হলো যা মোটেও কাম্য নয় । সমসাময়িক এসব ঘটনা দেখে অনেকেই শিক্ষকতা পেশার প্রতি অনীহা দেখাবে হয়তো। এই মহান ব্যক্তিরা আমাদের পরম যত্নে মানুষ হিসেবে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলেন। ছাত্রের ব্যক্তিত্ব, আত্মবিশ্বাস এবং দক্ষতার স্তরকে উন্নত করতে শিক্ষকের ভূমিকা মূখ্য। আমাদের মহানবী (সঃ) ও শিক্ষক হিসেবে আমাদের ইসলামের সকল প্রকার শিক্ষা দিয়েছেন। তিনিও সমাজে শিক্ষকদের সম্মানের সর্বোচ্চ আসন দিয়েছেন। তাই, শিক্ষকদের ছোট করে দেখার কিছু নেই। তারা সম্মানিত - শ্রদ্ধেয়। তাদের অধিকার নিয়ে জনসচেতনতা গড়ে তোলা প্রতিটি শিক্ষার্থীর দায়িত্ব ও কর্তব্য।
কে এম বিপুল হোসেন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
এমআই