জাহিদুল ইসলাম,রাবি প্রতিনিধি :
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে 'শিক্ষকের কণ্ঠস্বর: শিক্ষায় নতুন সামাজিক অঙ্গীকার' প্রতিপাদ্যেকে সামনে রেখে বিশ্ব শিক্ষক দিবস পালন করা হয়েছে। শনিবার (৫ অক্টোবর) এ উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সিনেট ভবনে আলোচনা সভা ও শিক্ষক সম্মাননার আয়োজন করা হয়।
এর আগে সকাল সাড়ে দশটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোড থেকে ছাত্র-শিক্ষকের অংশগ্রহণে একটি শোভাযাত্রা বের করা হয়। শোভাযাত্রাটি ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো প্রদক্ষিণ করে। পরে বেলা ১১ টায় শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সিনেট ভবনে একটি আলোচনা সভা ও শিক্ষক সম্মাননা অনুষ্ঠিত হয়।
শিক্ষায় বিশেষ অবদান রাখার জন্য অনুষ্ঠানে তিন জন শিক্ষককে বিশেষ সম্মাননা প্রদান করা হয়। সম্মাননা পাওয়া তিনজন শিক্ষক হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিদ্যা বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ও বীর প্রতীক ড. মু. শামসুল আলম, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ও আন্তজার্তিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এ. কে. এম আজহারুল ইসলাম এবং রসায়ন বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. দাস বাসুদেব কুমার।
অনুষ্ঠানে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীবের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম বলেন, 'আমাদের শিক্ষার শুরু মায়ের থেকে। কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শুরু হয় বিদ্যালয়ে। শিক্ষকেরা শিক্ষার্থীদের শিক্ষায় আকৃষ্ট সমাজকে গড়তে অবদান রাখছে। শিক্ষা শুধু জ্ঞান দানের জন্য নয়। শিক্ষার পাশাপাশি একজন শিক্ষক শিক্ষার্থীদের পরামর্শ ও অনুপ্রেরণা দান করেন যা। শিক্ষকেরা মোমবাতির মতো নিজেরা জ্বলে শিক্ষার্থীদের গড়ে তোলেন। একজন শিক্ষককে হতে হবে সৎ ও আদর্শবান। জুলাই বিপ্লবে শিক্ষার্থীদের ঢাল ছিল শিক্ষকেরা। এটা শিক্ষক সমাজের ভাবমূর্তি অনেক উপরে তুলেছে।'
সম্মাননাপ্রাপ্ত অধ্যাপক এ. কে. এম আজহারুল ইসলাম বলেন, 'আমরা শিক্ষাকে জাতির মেরুদণ্ড বলি। শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড হলে শিক্ষকরা হলো শিক্ষার মেরুদণ্ড। মেরুদণ্ডের অনুপস্থিতি বা দুর্বলতা থাকলে আমরা দুর্বল হয়ে যাব। একইভাবে শিক্ষক দুর্বল হলে শিক্ষা ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ে। বিগত দেড় দশকে শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংসের ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেয়া হয়েছে। ফলে শিক্ষার নাজুক অবস্থা তৈরি হয়েছে। লেখাপড়াটা শুধু নামেমাত্র চলেছে। অনেকে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা নাকি বিদেশের মতো হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আমার মনে হয় কথাটা একেবারেই মিথ্যে। বরং আমাদের শিক্ষার যে মান ছিল তার থেকে আরও পিছিয়ে পড়েছি আমরা। এর অন্যতম কারণ রাজনৈতিক প্রভাব। এ পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রীয়ভাবে শিক্ষক ও শিক্ষার প্রয়োজন মিটানো সম্ভব হলেই এর থেকে উত্তরণ করা সম্ভব।'
সভপতির বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সালেহ্ হাসান নকীব বলেন, 'আমরা শিক্ষকের বিষয়ে প্রায় বলি যে শিক্ষক জাতি গঠনের কারিগর। এটা আমার কাছে কেমন জানি অসম্পূর্ণ মনে হয়। শিক্ষকতার ব্যাপারটা হচ্ছে একটা আদান-প্রদানের ব্যাপার। ভালো শিক্ষক যেমন ভালো ছাত্র তৈরি করে সেভাবে ভালো ছাত্র ভালো শিক্ষক তৈরি করে। এটা মনে রাখার বিষয়। শিক্ষকতা একদিনে শিখে ক্লাস নেওয়া যায় না। শিক্ষককেও বুঝতে হবে শিক্ষার্থীরা ক্লাসে কোন ধরণের শিক্ষা পেতে চায়। শিক্ষকদের কর্মকাণ্ডই শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করে। তাই শিক্ষকের অবস্থান থেকে তার দায়-দায়িত্ব যথাযথ পালন করতে হবে। একইসঙ্গে শিক্ষার্থীদের ও তাদের অবস্থান জানতে হবে, বুঝতে হবে, শিখতে হবে।'
অনুষ্ঠানে বিশ্ব শিক্ষক দিবস উপলক্ষে অনুষ্ঠিত রচনা প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের পুরস্কার বিতরণ করা হয়। প্রতিযোগিতায় স্নাতক পর্যায়ে 'আমার দেখা সেরা শিক্ষক' এবং স্নাতকোত্তর পর্যায়ে 'আমার শিক্ষককে আমি কেমন দেখতে চাই' রচনার বিষয় নির্ধারণ করা হয়েছিল। উভয় পর্যায় থেকে ৩ জন করে মোট ৬ জন বিজয়ীদের পুরস্কৃত করা হয়। স্নাতক পর্যায়ের বিজয়ীরা হলেন উদ্ভিদ বিভাগের শিক্ষার্থী ফাহিমা খাতুন, নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থী রাফায়েতুল আহম্মেদ ও সমাজকর্ম বিভাগের মো. শামীম আলম। আর স্নাতকোত্তর পর্যায়ে বিজয়ীরা হলেন রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী হাবিবুর রহমান, শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের শিক্ষার্থী মিনহাজুল আবেদিন ও আরবী বিভাগের শিক্ষার্থী মো. বায়েজিদ।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সুখরঞ্জন সমাদ্দার ছাত্র-শিক্ষক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের (টিএসসিসি) ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ও মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মুর্শিদা ফেরদৌস বিনতে হাবীব। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা সহযোগী অধ্যাপক আমিরুল ইসলাম কনক, প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক অধ্যাপক আখতার হোসেন মজুমদারসহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
সময় জার্নাল/তানহা আজমী