সাইফ ইব্রাহিম, ইবি প্রতিনিধি:
‘খুব সম্ভবত এই পৃথিবীতে আজকে আমার শেষ দিন। সবকিছু কেমন যেন অসহনীয় হয়ে উঠছে। মনে হয় কোন কিছুর অভিশাপে অভিশপ্ত হয়ে আছি। অনেক চেষ্টা করেও অভিশাপ থেকে নিজেকে মুক্ত করতে পারলাম না। দিনশেষে এইটুকুই উপলব্ধি করতে পারলাম মানুষ হিসেবে আমি ব্যর্থ। আমি আমার আশেপাশের সবার জন্য একটা বোঝা। সবশেষে এইটাই উপলব্ধি করতে পারলাম যে কারো সমস্যার কারণ বা বোঝা হয়ে বেঁচে থাকার চেয়ে মৃত্যু অনেক ভালো- সুইসাইড নোটে এমন কথা লিখে আত্মহত্যা করেছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আদনান ফেরদৌস। মঙ্গলবার (০৮ অক্টোবর) রাতে মানিকগঞ্জে নিজ বাসায় এ ঘটনা ঘটে। নিহতের বাবা ইসমাইল হোসেন তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ক্যাম্পাস সূত্রে জানা গেছে, আদনান বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। আদনান প্রথমে ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে ফোকলোর স্টাডিজ বিভাগে ভর্তি হয়েছিলেন। পরে দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগে ভর্তি হন। কিন্তু প্রথম বর্ষে ইয়ার ড্রপ করলে আদনান ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের সাথে নিয়মিত ক্লাস করেন। সর্বশেষ তিনি ওই বর্ষে পরীক্ষার ফরমও পূরণ করেন। তবে মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত থাকায় পড়াশোনা স্থগিত করে দেশের বাহিরে পড়াশোনা করতে যাওয়ার কথা ভেবে ৪/৫ মাস আগ থেকে নিজ বাড়িতে অবস্থান করছিলেন। সর্বশেষ মঙ্গলবার রাতে একটি সুইসাইড নোট লিখে নিজ বাড়িতে গলায় দড়ি দিয়ে আদনান আত্মহনন করে।
সুইসাইড নোটে আদনান আরো লিখেছেন, ব্যর্থতার কারণ খুজতে গিয়ে নিজেকে হারিয়ে ফেলেছি অতল এক গহ্বরে। অনেক বড় বড় স্বপ্ন দেখছিলাম কিন্তু কীসের জন্য যেন সবকিছু খাপছাড়া লাগে। আমি হাত দিয়ে যা ছুঁই তাই দুঃখ হয়ে যায়" এই লাইনটা বোধহয় আমার জন্যই। এই ছোট্ট জীবনে যদি আমার আচরণে কষ্ট পেয়ে থাকেন তাহলে নিজ গুণে ক্ষমা করবেন আশা করি। সবাই ভালো থাকবেন। ওহ সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ণ কথা "আমার মৃত্যুর জন্য আমি নিজেই দায়ী"। নোটের শেষে লাশ পোস্টমর্টেম না করার অনুরোধ জানায় আদনান।
আদনানের বাবা ইসমাইল হোসেন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আদনান মানসিকভাবে বিপর্যস্ত অবস্থায় ছিলো। তার চিকিৎসাও চলছিলো। কিন্তু গতকাল সে দুনিয়া থেকে চলে গিয়েছে। এসময় সকলের নিকট সন্তানের জন্য দোয়া কামনা করেন তিনি।
আদনানের অকালমৃত্যুতে বিভাগের সভাপতি সহকারী অধ্যাপক শরিফুল ইসলাম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই তাঁর বাবার অনুরোধে আমি তাকে কাউন্সিল করতাম। আজ হঠাৎ তাঁর মৃত্যু সংবাদে আমরা ট্যুরিজম পরিবার খুবই মর্মাহত। তাঁর রুহের মাগফেরাত কামনা করি।
এমআই