দুলাল বিশ্বাস, গোপালগঞ্জ : গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার মোচনা ইউনিয়নের ডুমুরিয়া গ্রামের এক রাজমিস্ত্রী আবিষ্কার করলেন আকাশের তারা নির্ণয়ের এক অভিনব ঘড়ি। দীর্ঘ এগারো বছর তিনি গবেষণাগারে গবেষণার মাধ্যমে এই অভিনব ঘড়ি উদ্ভাবন করেন।
তার ইচ্ছা এই ঘড়িটা বিশেষজ্ঞদের দেখানো। তাঁরা দেখুক আমার প্রজেষ্ট ঠিক আছে কিনা। যদি প্রমাণ সহ ঘড়ির প্রজেষ্ট ঠিক থাকে তাহলে এই ধরনের ঘড়ি সবাই ব্যবহার করে তাঁরা ঘরে বসেই সময় সহ আকাশের তারা নির্ণয়, দিনের বেলায় তারাগুলো কথায় অবস্থান, দিনে চাঁদের অবস্থান কোথায় ইত্যদি সবকিছুই জানা সম্ভব।
এই অভিনব ঘড়ি উদ্ভাধকের নাম ওসমান খাঁন। তিনি উপজেলার ডুমুরিয়া গ্রামের মো. আওলাত খানের ছেলে। ওসমান খান একজন সাধারণ পরিবারের ছেলে। পেশায় একজন রাজমিস্ত্রী। তবে এখন রাজমিস্ত্রী ছেড়ে স্কাবেটর কাজের সাথে জড়িত আছেন। ৬ষ্ঠ শ্রেণী পাশ ওসমান খান প্রতিষ্ঠানিক তেমন কোন লেখাপড়া করতে পারেননি।
এই অভিনব ঘড়ি বিষয়ে ওসমান খান বলেন, আমি দির্ঘ ১১ বছর আমার গবেষণাগারে গবেষণা করে এমন একটি ঘড়ি উদ্ভাবন করেছি যেটা আমাদের পৃথিবী থেকে দিন-রাত মিলিয়ে যে তারাগুলো আকাশে দেখতে পাই সে-ই তারাগুলোই এর মধ্যে দেখা যাবে।
মহাকাশে অগণিতিক অজস্র তারা রয়েছে। যা অসংখ্য তারা খালি চোখে দেখা যায় না। তারপরও যতদুর দেখা যায় আমি ১১ বছর ধরে প্রতিরাতে আকাশের তারার সাথে মিল রেখে এই ঘড়িতে মানচিত্রকারে এক একটা করে তারার প্রতিকৃতি স্থাপন করছি। আমাদের পৃথিবী থেকে আকাশে যে যে স্থানে যে তারাগুলো দেখতে পাওয়া যায় ঠিক সেই সে-ই স্থানেই সেই সময়ে এই ঘড়িতে ( আলো দ্বারা সৃষ্ট) ওই তারাগুলো জ্বলে উঠবে।
পৃথিবীটা ঘূর্ণয়নের ফলে তারাগুলোর দেখার পরিবর্তন ঘটে যেমন জুন-জুলাই মাসে আকাশে যে তারাগুলো যে স্থানে দেখতে পাওয়া যায় আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে সেখানে সেই তারাগুলো দেখতে পাবো না। সেখানে অন্য তারা দেখা যাবে। এই ঘড়ির মধ্যে একই অবস্থা, মাস অনুযায়ী ঘরির মধ্যে তারার পরিবর্তন ঘটবে। আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে আকাশে যেখানে যে তারাগুলো দেখতে পাওয়া যাবে ঠিক সেই স্থানেই ঘড়ির মধ্যে সেই তারাগুলো দেখতে পাওয়া যাবে। সন্ধ্যার সময় যে তারাগুলো আকাশে দেখা যাবে, রাতে কিন্তু সেই স্থানে সেই তারাগুলো দেখতে পাওয়া যাবে না। অন্য তারা দেখা যাবে। আমার ঘড়িতেও সন্ধ্যায় যে তারাগুলো দেখা যাবে, রাতে কিন্তু সেই স্থানে সেই তারাগুলো দেখা যাবে না, অন্য তারাগুলো দেখা যাবে।
আকাশের তারার সাথে মিল রেখেই এই ঘড়ি তৈরি করেছি। যেমন ধরুন আজ রাত ১০টায় আকাশে যে যে স্থানে তারাগুলো অবস্থান করবে। ঠিক সেই স্থানেই এই ঘড়িতেও তারাগুলোর প্রতিকৃতি জ্বলে উঠবে। মনে হবে ঘড়িটা একটা আকাশ।
তিনি আরো বলেন, আমরা সূর্যের আলোর জন্য দিনের তারাগুলো আকাশে দেখতে পাই না। কোন তারাগুলো কোন স্থানে আছে। এই ঘড়িটা নির্ণয় করে দিবে দিনের বেলায় কোন স্থানে কোন তারাগুলো অবস্থান করছে। পৃথিবীর ভূ-পৃষ্ঠ থেকে আকাশের সব তারা দেখা যাবে না পাঁচের একাংশ দেখা যাবে বলে আমি মনে করি। চেষ্টা করলে ঘড়ির মানচিত্রে আকাশের সমস্ত তারাই স্থাপন করা যায়, যেগুলো খালি চোখে দেখতে পেরেছি সেগুলোই স্থাপন করেছি।
তিনি আরও বলেন, শুধু তারা নির্ণয় নয়, এই ঘড়িতে আরো কিছু মজার বিষয় আছে, যেমন আজ থেকে আগামী পনের দিন পর চন্দ্রের কাছে কোন তারাগুলো অবস্থান করবে সেগুলো আগের থেকেই দেখা যাবে ঘড়িতে।
এছাড়া আগামী বছর এইদিনে এই সময়ে অন্যান্য গ্রহগুলোকে কোন অবস্থায় থাকতে পারে সেই সিগন্যাল ও দিয়ে দিবে এই ঘড়ি। ঘড়িতে ২৪টি কাটা আছে এবং বছর, মাস, সপ্তাহ, দিন সময় সবকিছুই নির্ধারণ করা হয়েছে। ঘড়িটা এখনো এনালগ হিসেবে কাজ করে, হাতে চালাতে হয়। এটাকে ডিজিটাল রুপে করতে হলে কাটা লাগাতে হবে এবং অন্যান্য যন্ত্রপাতি সেট করতে হবে, তাহলেই পূর্ণাঙ্গভাবে প্রকাশ পাবে আকাশের তারা নির্ণয়ের ঘড়ি।
এই অভাবনীয় ঘড়ি দেখতে আসা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সোয়ান মাহমুদ ও রাজীব বলেন, অভাবনীয় আবিষ্কার, আকাশের তারা নিয়ে গবেষণা করে যে ঘড়ি আবিষ্কার করেছেন তা সত্যিই চমক লাগার বিষয়। এই ধরনের ঘড়ি এখনও দেখিনি। তিনি দীর্ঘদিন গবেষণা করে এই ঘড়িটা আবিষ্কার করেন। দেখা গেল রাত ৯টার দিকে আকাশে যে যে স্থানে তারা গুলো জ্বল জ্বল করে দেখা যাচ্ছে, ঠিক সেই স্থানেই ঘড়ির মানচিত্রের উপর ওই তারাগুলো জ্বলে উঠছে। রাতের তারা দেখতে হলে আকাশের তারা দেখার দরকার নেই ঘড়ির মানচিত্রের উপর তাকালেই দেখা যাচ্ছে কোন তারাটা কোন স্থানে আছে। তার এই আবিষ্কারের আমরা মুগ্ধ।
মুকসুদপুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জোবায়ের রহমান রাশেদ বলেন, না এই ঘড়ির বিষয়ে আমাকে কেউ এখনো জানায়নি, আর সে এখনো আমাকে এই ঘড়িটি দেখায়নি, ওনি আমাকে ঘড়িটি দেখাবে, দেখার পর প্রজেক্টটি কোথাও পাঠাতে পারব বা কোন কিছু করতে পারব কিনা দেখতে হবে। এই প্রজেক্টটির বিষয়ে আমাকে আগে জানাতে হবে। আমার আগে জানতে হবে।
সময় জার্নাল/এসএ