নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার নিম্নাঞ্চলে বন্যার পানিতে তলিয়ে আছে ফসলি জমি। আর এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন প্রান্তিক কৃষকেরা। এ ক্ষতি কীভাবে পুষিয়ে নেবেন, এমন দুর্ভাবনায় তাঁদের দিন কাটছে। উপজেলায় বন্যায় শুধু কৃষিতেই আনুমানিক ২৩১ কোটি ৮৯ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতির তথ্য পেয়েছে কৃষি বিভাগ
নালিতাবাড়ী উপজেলার চার ইউনিয়নে বন্যা পরিস্থিতির অনেকটাই উন্নতি হয়েছে। কমেছে ভোগাই ও চেল্লাখালী নদীর পানি। আজ বুধবার সকাল পর্যন্ত উপজেলার ৩টি ইউনিয়নের ১৫টি গ্রামের সাড়ে ৩ হাজার পরিবার পানিবন্দী আছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। তবে ডুবে থাকা আমনের ফসল নষ্ট হয়ে যাওয়ায় দুশ্চিন্তায় আছেন কৃষকেরা।
উপজেলার তালুকপাড়া গ্রামের প্রান্তিক কৃষক মো. দুলাল মিয়া বলেন, ‘খেত থাইকা পানি আস্তে আস্তে কমতাছে। ১০ দিন ধইরা ফসল পানির নিচে তলাইয়া (ডুবে) আছিন। ফসল ভাসছে, কিন্তু সবি পইচ্চা গেছে। এক মুঠ ধানও তো ঘরে তোলবার পাইতাম না। অহন স্ত্রী ও পোলাপান লইয়া সংসার চালামু কেমনে?’
স্ত্রী ও তিন সন্তান নিয়ে দুলালের পাঁচ সদস্যের সংসার। সামান্য চাষবাদ ও কৃষিশ্রমিক হিসেবে তিনি অন্যের জমিতে কাজ করে সংসার চালান। চলতি আমন মৌসুমে ধারদেনা করে ৭৫ শতক জমিতে আমন ধানের চাষ করেছিলেন। কিন্তু ১০ দিন ধরে বন্যার পানিতে জমির সব ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। বন্যাপরবর্তী সময়ে সংসার চালানো নিয়েই তাঁর যত দুশ্চিন্তা।
উপজেলার কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এবারের আকস্মিক বন্যায় উপজেলাটির কৃষিতে আনুমানিক ২৩১ কোটি ৮৯ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে। চলতি বছর উপজেলায় ২৩ হাজার ২৫৩ হেক্টর জমিতে আমন চাষ করা হয়। বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হওয়ায় এতে ১৬ হাজার ৩০০ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে, যার সম্ভাব্য ক্ষতির পরিমাণ ২২৩ কোটি টাকা। অপর দিকে ২৬৫ হেক্টর শাকসবজির খেতের মধ্যে ১৩৫ হেক্টর জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার সম্ভাব্য ক্ষতির পরিমাণ সাড়ে ৭ কোটি টাকা। এ ছাড়া বস্তায় করে আদা চাষে ১ কোটি ৩৯ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবদুল ওয়াদুদ। তিনি জানান, ‘বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কৃষকদের কীভাবে পুনর্বাসনের আওতায় আনা যায়, এই চেষ্টাই আমরা করছি। শর্ষে, ভুট্টাবীজ ও আগামী বোরো মৌসুমে বোরোর উচ্চফলনশীল বীজ কৃষকদের বিনা মূল্যে দেওয়া হবে। এ ছাড়া বন্যার পানি নেমে গেলে কৃষকদের মধ্যে অব্যবহৃত জমিতে চাষের জন্য বিভিন্ন সবজির বীজ দেওয়া হবে।’
সময় জার্নাল/তানহা আজমী