বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪

লাগামহীন ডিমের বাজার

বৃহস্পতিবার, অক্টোবর ১৭, ২০২৪
লাগামহীন ডিমের বাজার

সময় জার্নাল ডেস্ক:

দ্রব্যমূল্য পাগলা ঘোড়ার মতোই ছুটে চলেছে। এ সময় টক অব দ্য টাউন হলো ডিমের দাম। ডিম আর সহজলভ্য প্রোটিন হিসেবে টিকে নেই। চেষ্টা করা হচ্ছে দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখার। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন,বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে করপোরেট গ্রুপ।

দেশের সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ডিমের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে করপোরেট গ্রুপ। এসব সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে রয়েছে কাজী ও সিপিসহ ১০ কোম্পানি ও সংগঠন। ডিমের বাজার নিয়ন্ত্রণে এসব প্রতিষ্ঠানকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে বাজারে অস্থিরতা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

কাজী ফার্মসহ এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ হচ্ছে তারা নিজেদের ইচ্ছেমতো দাম বাড়িয়ে থাকে। বিভিন্ন সময় সরকারের পক্ষ থেকে বাজার নিয়ন্ত্রণে যেসব নির্দেশনা দেয়া হয় তা অমান্য করে চলেছে সিন্ডিকেটের এ ১০ প্রতিষ্ঠান। এদের মধ্যে কাজী ফার্ম এর বিরুদ্ধে অভিযোগ হচ্ছে বাজারে যখন ডিমের দাম বৃদ্ধি পায় তখন প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী জাহিন বিদেশে অবস্থান করেন। বাজার নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন পর্যায়ে যখন খাত সংশ্লিষ্টদের সাথে বৈঠক হয় তখন কাজী ফার্মের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে পাওয়া যায় না। অর্থাৎ বিদেশে বসে তিনি ডিমের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন।

সিন্ডিকেটের মাধ্যমে অতি মুনাফার দায়ে সাম্প্রতিক দেশের ১০টি পোলট্রি ফার্ম ও পোলট্রি সংশ্লিষ্ট সংগঠনের বিরুদ্ধে ডিমের দাম বৃদ্ধিতে বাজারে কারসাজির অভিযোগে মামলা করেছে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন (বিসিসি)। কমিশন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে কাজ করে এবং প্রতিযোগিতা আইন লঙ্ঘনের জন্য দায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাপারে তদন্ত, বিচার ও শাস্তি দেয়ার ক্ষমতা রাখে। প্রতিযোগিতা আইন-২০১২ এর অধীনে এই আইনে আদালতে না গিয়ে মামলা নিষ্পত্তির সুযোগ আছে।

বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসেসিয়েশনের সভাপতি সুমন হাওলাদার বলেন, বড় দশটি কোম্পানি বাজারে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কারসাজি করছে। এসব কোম্পানি সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে ২ থেকে ৩ টাকা বেশি দামে ডিম বিক্রি করছে। তিনি বলেন, সরকার লেয়ার ডিওসি মূল্য ৫৭ টাকা নির্ধারণ করলেও কোম্পানিগুলো ৯০ থেকে ১০০ টাকা দরে বিক্রি করছে। লেয়ার মুরগির জন্য ফিডের দাম প্রতি কেজি ৬০-৬৫ টাকা নির্ধারণ করলেও এর চেয়ে বেশি দামে বিক্রি করছে।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, করপোরেট গ্রুপ ও বিভিন্ন ডিম সমিতি ডিমের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে। তারা যখন যা চায়, তাই হয়। এই করপোরেট ও সমিতিগুলোর কারণে সাধারণ খামারিরা বিপদে পড়েন। তিনি বলেন, সরকার খামারিদের সঙ্গে আলোচনা না করে ওদের সঙ্গে বৈঠক করে। এতে কোনো ফল পাওয়া যাবে না। তিনি বলেন, চাহিদা অনুযায়ী ডিমের পর্যাপ্ত উৎপাদন আছে। তার পরও দাম বাড়ার কারণ জানি না।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন কাজী ফার্ম ডিমের দাম বাড়ানোর জন্য যেসব পদ্ধতি অবলম্বন করে থাকে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, মুরগির বাচ্চা সরবরাহের ক্ষেত্রে কাজী ফার্ম একক ভাবে ৮০ শতাংশ মুরগির বাচ্চা উৎপাদন করে। তারা নিজেদের মতো করে দাম নির্ধারণ করে দেয়। এ দিকে মুরগির খাবার সরবরাহ এবং প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান কাজী ফার্ম। অন্যদের সাথে সমন্বয় করে প্রতিষ্ঠানটি দাম বৃদ্ধি করে থাকে। একই সাথে চুক্তিভিত্তিক ফার্মিং-এর মাধ্যমে ব্যক্তি মালিকানায় গড়ে ওঠা কোনো প্রতিষ্ঠানের মালিক লাভবান হতে পারে না। কারণ, মুরগির খাবার, বাচ্চার দাম বাড়িয়ে উৎপাদন খরচ বাড়িয়ে দেয় কাজী ফার্ম।

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন করপোরেট সিন্ডিকেটের কারণে ডিমের দাম বাড়ছে। বাজারে ৮০ শতাংশ ডিম সরবরাহ করে খামারিরা। ২০ শতাংশ সরবরাহ করে করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো। অথচ করপোরেট গ্রুপ ডিমের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে। তারাই সিন্ডিকেট করে বাজার অস্থির করে তোলে। তারা আরো বলেন, খামারিদের সঙ্গে সরকার কথা বলে না। বৈঠক করে করপোরেট ব্যবসায়ীদের সঙ্গে। অন্য দিকে আড়তদাররা বলছেন, সরকার যে দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে, তার চেয়ে বেশি দামে ডিম কিনতে হচ্ছে। ফলে তারা ডিম বিক্রি বন্ধ রাখছেন।

দেশে মুরগির বাচ্চা, পোলট্রি খাদ্যের (ফিড) সিংহভাগ উৎপাদন করছে হাতেগোনা কয়েকটি কোম্পানি। পাশাপাশি ডিম ও গোশতের বাজারেরও বড় অংশ তাদের দখলে। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে উৎপাদনের পাশাপাশি চুক্তির ভিত্তিতে কোম্পানির বাইরে অন্য অনেক খামারিকেও কাজে লাগাচ্ছে কোম্পানিগুলো। বাজারের আকৃতি, মুনাফাসহ ব্যবসায়িক বিভিন্ন তথ্য প্রকাশের বিষয়ে কোম্পানিগুলো বরাবরই এক ধরনের গোপনীয়তা বজায় রাখে।

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, ডিম, ব্রয়লার মুরগিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ানোর অভিযোগে গত বছর প্রতিযোগিতা কমিশন বেশ কয়েকটি কোম্পানি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করলেও কোনো ফল পাওয়া যায়নি। মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি না হলে ও দোষীদের শাস্তি না হলে হঠাৎ যে কোনো পণ্যের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি বন্ধ করা সম্ভব হবে না। এতে ভোক্তাদের ভোগান্তি বাড়বে বলে তিনি মনে করেন।

এ দিকে নির্ধারিত দর বাস্তবায়ন করতে ডিমের বাজারে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। যৌক্তিক মূল্যে ডিম বিক্রি না করলে প্রতিষ্ঠানটি ব্যবসায়ীদের জরিমানাও করছে। মূলত অভিযানের ভয়েই ডিম বিক্রি বন্ধ রাখার কথা জানিয়েছেন ঢাকার তেজগাঁওয়ে ডিমের পাইকারি বাজারের ব্যবসায়ীরা।

সময় জার্নাল/তানহা আজমী


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল