তথ্য প্রযুক্তি ডেস্কঃ
সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া আরো একটি গুজব আলোচনায় যেখানে বলা হচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস মঙ্গলবার মধ্যরাতে তার পদ ছেড়েছেন।
শুধু তাই নয়, এসবে গুজবে বলা হচ্ছে- সেনাবাহিনী নাকি তার বাসভবন ‘যমুনা’ ঘেরাও করে রেখেছিলো এবং বিক্ষুব্ধ সেনাসদস্যরা বিভিন্ন বিষয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন।
বিভিন্ন সুপরিচিত মিডিয়া হাউজের আদলে ফটোকার্ড বানিয়ে এসব অসত্য তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। অনেকেই সেসব কার্ড ফেসবুকে পোস্ট ও শেয়ার করেছেন।
যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াও এ নিয়ে একটি পোস্ট করেছেন।
বুধবার সকালে তিনি তার অফিশিয়াল ফেসবুক প্রোফাইল থেকে লিখেছেন, “শুধু চেয়ারই না, প্রধান উপদেষ্টাসহ দেশ ছাড়লেন বাকি উপদেষ্টারাও। সোর্স: চালাইদেন।”
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া নানা ধরনের গুজবের সূত্র হিসাবে ‘চালাইদেন’ শব্দটি ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়েছিলো। তখন আন্দোলনের সমন্বয়কদের অনেকেই নিজেরা মজা করে এই শব্দ নিজেদের ফেসবুক পোস্টে ব্যবহার করেছিলেন।
আপাতদৃষ্টিতে এসব তথ্য নিয়ে অনেকে হাস্যরসাত্মক মন্তব্য করলেও গণমাধ্যম সংশ্লিষ্টরা এটিকে 'বিব্রতকর' বলছেন কারণ, ধারাবাহিকভাবে তাদের নাম, লোগো ব্যবহার করে এসব গুজবের অনেকগুলো ছড়ানো হচ্ছে।
সাম্প্রতিক সময়ের আলোচিত গুজব
প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের পদত্যাগ নিয়ে যে গুজবটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়েছে সে বিষয়ে বেশকিছু পোস্ট করতে দেখা গেছে মুফাসসিল ইসলাম নামক একটি অ্যাকাউন্ট থেকে।
সেখানে দাবি করা হয়েছে- যে প্রধান উপদেষ্টা, সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামানকে পরিবর্তন করার একটি পরিকল্পনা করেছিলেন এবং পরবর্তীতে সেনাপ্রধান তা জেনে যান।
“এটা নিয়ে সেনাপ্রধান ও ইউনূসের মাঝে ভালোমন্দ অনেক কথাবার্তা হয়েছে…রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় ড. ইউনূসকে ঘিরে সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের রূদ্ধশ্বাস বৈঠক চলছে। বিক্ষুব্ধ আর্মি অফিসাররা ইউনূসকে বিভিন্ন বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন,” দাবি করা হচ্ছে সেই পোস্টে।
কিন্তু এমন দাবির কোনও সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি। এটিকে গুজব বলে চিহ্নিত করেছে ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠানগুলোও।
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আরেকটি ‘গুজব’ ছড়িয়েছে যেখানে বলা হয়- বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে নয়, এখন সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইতে অবস্থান করছেন।
কিন্তু এটিরও কোনো সত্যতা মেলেনি। বরং একাধিক ভারতের একাধিক সরকারি কর্মকর্তারা বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছে এমন তথ্য 'ভিত্তিহীন'।
আপনার যা করণীয়
ভুল তথ্য চিহ্নিত করার জন্য যেসব পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়ে থাকে তার একটি হলো 'এসআইএফটি'।
এই পদ্ধতির উদ্ভাবক মাইক কউলফিল্ড।
এখানে 'এস' মানে হলো স্টপ; সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোনও খবর দেখামাত্র তাৎক্ষণিকভাবে তা শেয়ার করা থেকে বিরত থাকতে হবে। এমনকি সেখানে কোনও মন্তব্যও করা যাবে না।
'আই' দিয়ে বুঝানো হয়েছে- ইনভেস্টিগেট দ্য সোর্স (উৎস যাচাই); একটি তথ্যের উৎস কী, এ প্রশ্ন নিজেকে প্রতিনিয়ত করতে হবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘুরে বেড়ানো তথ্য যদি কোনও মিডিয়া আউটলেটের হয়, তাহলে ভাবতে হবে যে তারা যথেষ্ট পরিমাণ বিশ্বাসযোগ্য এবং গ্রহণযোগ্য কি না।
যদি তথ্যের যোগানদাতা কোনও ব্যক্তি হয়, সেক্ষেত্রে তার স্বার্থ কী হতে পারে, তা ভাবতে হবে। তার উদ্দেশ্য কী? রাজনৈতিকভাবে তিনি কোন মতাদর্শ ধারণ করেন? অথবা, তিনি ব্যক্তিগতভাবে কোনও পক্ষ অবলম্বন করছেন কি না?
আর যদি কোনও প্রতিষ্ঠান হয়, সেক্ষেত্রেও তাদের উদ্দেশ্য নিয়ে ভাবতে হবে। তারা কি কিছু বিক্রি করতে চাচ্ছে? তাদেরকে অর্থ যোগায় কারা? তাদের রাজনৈতিক আগ্রহ কোন দিকে?
নিজেকে নিজে এই প্রশ্নগুলো করতে কয়েক মিনিট লাগবে মাত্র এবং এর উত্তর বিশ্লেষণের ওপর নির্ভর করবে যে আপনি সোর্স বা উৎসকে কতটা বিশ্বাস করবেন।
এসআইএফটি মেথডের 'এফ' দিয়ে বুঝানো হচ্ছে ফাইন্ড বেটার কাভারেজ; উপরের ধাপের মাধ্যমে বিশ্লেষণের পর যদি সোর্সের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে আপনার মনে প্রশ্ন থাকে, তাহলে আপনাকে আরেকটু তলিয়ে ভাবতে হবে।
সেক্ষেত্রে আপনি যা খুঁজছেন, তা আরও বেশি গ্রহণযোগ্য নিউজ আউটলেট বা ফ্যাক্টচেকিং সার্ভিসে এসেছে কি না এবং তারাও একই তথ্য প্রচার করছে কি না, তা খুঁজে দেখতে হবে।
এসবের জন্য গুগলের কিছু টুলস আছে। যেমন, গুগল নিউজ। নিউজ আউটলেটগুলো কোনও নির্দিষ্ট বিষয়ে কী কাভার করেছে, তা এখান থেকে দেখা যাবে। গুগল ফ্যাক্ট চেক সার্চ ইঞ্জিনও একটি ভালো মাধ্যম হতে পারে।
এখানে উল্লেখ্য, এ ধরনের সার্চ ইঞ্জিন শুধু গুগলে না, অন্যান্য ব্রাউজারেও আছে। যেমন, টিনআই কিংবা ইয়ানডেক্স। ইয়ানডেক্স দিয়ে ভিডিও'র সত্যতাও যাচাই করা যায়।
সর্বশেষ ধাপ হলো- 'টি', মানে ট্রেস দ্য ক্লেইম টু ইটস অরিজিনাল কনটেক্সট। উপরের তিনটি ধাপ-ই অনুসরণ করার অর্থ হলো, আপনি আরও ভালো এবং নিখুঁত সংবাদের খোঁজ করছেন।
অনেক সময় এমনটা হতেই পারে যে কোনও বিশ্বাসযোগ্য মিডিয়াতে একটি খবর ঠিক-ই প্রচারিত হয়েছে, কিন্তু সেখানে মূল গল্পটা উঠে আসেনি। সেক্ষেত্রে আপনাকে আলাদাভাবে ওই গল্পের খোঁজ চালাতে হবে।
তানহা আজমী