জেলা প্রতিনিধি:
গড়ে প্রতি বছর প্রায় ১ টন কফি উৎপাদন করছেন কফি চাষি ছানোয়ার। কফিসহ কমপক্ষে ১০ ধরনের ফলের চাষাবাদ হচ্ছে তার বাগানে। অনেকেই গ্রামটিতে আসছেন তার কফি বাগান দেখাসহ চাষাবাদের পরামর্শ নিতে।
পাশাপাশি জেলার মধুপুর গড়ের উঁচু ও লাল মাটিতে আনারস, কলা, পেঁপের মতো কফি চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনাও দেখিয়েছেন তিনি। যার ধারাবাহিকতায় কফি চাষকে এ অঞ্চলের কৃষিতে নতুন ফসল হিসেবে যোগ করতে কাজ শুরু করেছে কৃষি বিভাগ।
সম্ভাবনা কাজে লাগাতে এরই মধ্যে কাজুবাদাম এবং কফি গবেষণা উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় কৃষি বিভাগও কৃষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়াসহ কফির চারা বিতরণ ও উৎপাদন বৃদ্ধিতে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে বলে জানিয়েছেন মধুপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাকুরা নাম্নী।
দেবদারু চারার মতো অনেকটাই দেখতে কফির চারা। কফির পাকা গুটিগুলো দেখতে টকটকে লাল ও কোনো কোনোটা কাঁচা হলুদের মতো। কাঁচাগুলো সবুজ। মার্চ থেকে এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি প্রতিটি পরিপক্ব গাছে ফুল ধরা শুরু হয়।
জানা যায়, মে থেকে জুন মাসের মধ্যে ফুল থেকে গুটিতে পরিণত হয়। আগস্ট মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে গুটিগুলো পরিপক্ব হয়। লালচে হয়ে যাওয়া কফির ফল সংগ্রহ করে প্রথমে পরিষ্কার পানি দিয়ে ভালো করে ধুয়ে নিতে হয়।
এরপর লম্বা সময় পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হয়। একটু নরম হওয়ার পর কফির ওপরের চামড়া ছাড়িয়ে নিতে হয়। পরে গুটিগুলো রোদে শুকিয়ে নিতে হয়। বাজারজাত ও কফিপান করার উপযোগী করতে মেশিনের মাধ্যমে গুড়া পাউডারের মতো করে নিতে হয়।
আবার কফির বীজ থেকে চারা উৎপাদনও করা যায়। ফলন ভালো ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে হেক্টরপ্রতি ৭৫০ থেকে ১০০০ কেজি এবং বছরে গাছপ্রতি ৫ কেজি কফি পাওয়া সম্ভব। এ ছাড়া ফলন দেওয়া শুরু হলে গাছগুলো থেকে একটানা ২০ থেকে ৩০ বছর পর্যন্ত কফি পাওয়া যায়।
কফি চাষি ছানোয়ার হোসেন বলেন, ‘২০১৭ সালে রাঙ্গামাটি জেলার রায়খালী থেকে ২০০ চারা সংগ্রহ করে উপজেলায় প্রথম কফি চাষ শুরু করি। চাষ শুরুর ২ বছর পর থেকেই কফি বিক্রি করতে পারছি। বর্তমানে প্রায় ৫০ শতাংশ জমিতে কফির আবাদ রয়েছে। আমার বাগানে অ্যারাবিক ও রোবাস্টা জাতের কফি গাছ আছে। প্রতি বছর আমি গড়ে প্রায় ১ টন কফি বিক্রি করতে পারছি। এ ছাড়া কফির বীজ থেকে চারাও তৈরি করছি।’
তিনি বলেন, ‘বর্তমানে আমার বাগানের ৫০০ কফি গাছে ফলন হচ্ছে। গত ৭ বছরে কফি বাগান বাবদ আমার ৩ লাখ টাকার মতো খরচ হয়েছে। তবে এরই মধ্যে আমি প্রায় দ্বিগুণ টাকা আয় করতে পেরেছি। এভাবে টানা ২০ বছর আয় হবে বলে আশা করছি।’
টাঙ্গাইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. কবির হোসেন বলেন, ‘মধুপুরের মাটির উর্বরা শক্তি কফি চাষের উপযোগী। এলাকায় সহজে বন্যার পানি ওঠে না, তেমন খরাও হয় না। বৃষ্টিপাত ও মাটির গঠন বিন্যাস মিলে গড় এলাকার লাল মাটিতে কফি চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে।’
সময় জার্নাল/এলআর