বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪

পিপীলিকার কেচ্ছা কাহিনী

শুক্রবার, নভেম্বর ১, ২০২৪
পিপীলিকার কেচ্ছা কাহিনী

তানহা আজমী:

পিঁপড়াদেরও রয়েছে আবাসস্থল এবং বিস্ময়কর স্থাপত্য। আছে নিজস্ব নগরকাঠামো।
পিঁপড়াদেরও ঘরবাড়ি আর শহর আছে। কিছু যাযাবর প্রজাতি ছাড়া অন্য সবার রয়েছে আবাসস্থল। মাটির নিচে বাড়ি বানানো এদের প্রাচীন স্বভাব। তবে অনেকেই মাটির ওপরে, গাছের ফাঁপা কান্ড, শিলার গর্ত, পাতাও বেছে নেয়। অধিকাংশ প্রজাতি পিপীলিকা কমবেশি স্থায়ী বাসা বানায়। এর আকার-আকৃতি নির্ভর করে নির্মাণসামগ্রীর ওপর।

যাযাবর পিঁপড়ারা দিনের বেলা ঘোরাফেরা করে রাতে বিশ্রামের জন্য রানির কাছে ফিরে আসে। এদের বাসা গাছের ডালে বা পাতায় ঝুলে থাকে। কখনো ফাঁপা কান্ড বা গুঁড়ি বেছে নেয়। সেনাছাউনির মতো এসব অস্থায়ী বাসা বেলুনাকার, কোণাকার অথবা তাঁবুর মতো হতে পারে। বেশির ভাগ প্রজাতি নিজেরাই গর্ত করে বাসা বানায়, তাতে ব্যবহৃত হয় নানা উপকরণ। নরম ভেজা মাটি পাওয়ার লক্ষ্যে তারা গর্তের অনেক গভীরে প্রবেশ করে। প্রজাতিভেদে বাসা নির্মাণের ধরনও আলাদা।

মাটিতে গর্ত করার প্রধান হাতিয়ার পিঁপড়ার ম্যান্ডিবল। এর সাহায্যে মাটি টুকরো টুকরো করে কেটে পা দিয়ে ওপরের দিকে ঠেলে দেয়। এই কাজে সামনের পায়ের ভূমিকাই মুখ্য। ভেতরের সুড়ঙ্গগুলো মসৃণ ও মজবুত করার জন্য ব্যবহার করে লালা বা অন্য কোনো গ্রন্থির নিঃসৃত রস। এসব প্লাস্টারের মতো কাজ করে।

পিঁপড়া একিই সাথে সামাজিক, পরিশ্রমী ও চতুর প্রাণী। আমাদের দেশে খুদে পিঁপড়া, ডেঁয়ো পিঁপড়া, সুড়সুড়ে পিঁপড়া, বিষ পিঁপড়া, লাল পিঁপড়া ছাড়াও বহু প্রজাতির পিঁপড়া রয়েছে। একটু কম বিষাক্ত বড়ো আকৃতির লাল পিঁপড়ারা বন্য এবং দলবেঁধে গাছের মাথায় বাসা বানিয়ে থাকে। ভাওয়াল ও মধুপুরের গজারী বনে গাছের মাথায় এদের বাসা বেশি দেখা যায়। এ এলাকায় স্থানীয় নাম ‘গজারী কুত্তা’। অনেকে ‘রামকুত্তা’ বলেও ডাকে। তাছাড়া সারা দেশে আম, লিচু, মেহগিনি গাছসহ অনেক গাছেই লাল পিঁপড়ার বাসা চোখে পড়ে। ওখানেই জীবনচক্রের ধাপগুলো সম্পূর্ণ করে।

বিচিত্র এদের জীবন। দলবদ্ধভাবে রানির অধীনে বাসা তৈরির কাজ করে ওরা। গাছের মগডালে প্রথমে অনেকগুলো পাতা জোড়া দিয়ে বল আকৃতির বানায়। লালার সাহায্যে এক রকম আঠা তৈরি করে পাতা জোড়া লাগায়। শক্ত চোয়াল দিয়ে পাতা মুড়িয়ে গোল করার আগে ভেতরে আলাদা আলাদা কুঠুরি বানায়। কর্মী পিঁপড়ারা ভবিষ্যতের খাবার সংগ্রহ করে রাখে। গোল আকৃতির বাসা এত মজবুত হয় যে বৃষ্টির পানি পর্যন্ত  ভেতরে ঢোকে না। বসন্তকালে একটি কলোনিতে বেশ কিছু পুরুষ ও রানি পিঁপড়া জন্ম নেয়।

এই সময় উভয়ের ডানা গজায়। এক সময় বাইরে এসে বংশ বৃদ্ধির জন্য ঝাঁক বেঁধে উড়াল দেয়। মিলনের পর নতুন রানি ডিম  পেড়ে পৃথক কলোনির সৃষ্টি করে। ডিম দেখতে চিকন সাদা মুড়ি বা ভাতের মতো দেখায়। বেশি ডিম  পাওয়া যায় শীতের শেষে। মাছ ধরার টোপের জন্য লাল পিঁপড়ার ডিমের চাহিদা বেশি। লাল পিঁপড়ার ডিমের টোপ বড়ো মাছেরা সহজেই গেলে। আশ্বিন ও কার্তিক মাসে এই ডিমের চাহিদা বেশি।

লাল পিঁপড়াগুলোকে স্থানীয়ভাবে ‘মাঞ্জাইল’ পিঁপড়া বলে ডাকা হয়। ঝোপে কিংবা গাছে সবুজ পাতায় গোলাকৃত্তির বাসা বানিয়ে ডিম পাড়ে এ পিঁপড়া। সাধারণত মেহগনি, আম, লিচুসহ দেশি গাছগুলোতে লাল পিঁপড়ার বাসা পাওয়া যায়।

বড় বাসায় ১০০ থেকে ১৫০ গ্রাম ডিম পাওয়া যায়। এই ডিম সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করতে হয় খুব সতর্কতার সঙ্গে। ডিমগুলো মাছের খাবার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। ডিম আস্ত না থাকলে মাছ খায় না। এ কারণে পিঁপড়ার ডিম মৎস্যশিকারিদের কাছে জনপ্রিয়। সাধারণত মে থেকে নভেম্বর পর্যন্ত পর্যন্ত পিঁপড়ার ডিম বেশি পাওয়া যায়।একটা লম্বা বাঁশ ও বাঁশের ঝুড়ি নিয়ে গ্রামের গাছ খুঁজে পিঁপড়ার বাসা থেকে ডিম সংগ্রহ করতে হয়। এই ডিম বিক্রি হয়  প্রতি কেজি  ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার ৪০০ টাকায়।

সময় জার্নাল/এলআর


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল